জালিয়াতি নয়, পরীক্ষার্থীর ভুলেই এমন লঙ্কাকাণ্ড
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেই মেধাতালিকায় ১২তম হওয়ার ঘটনাটি জালিয়াতি নয়। বরং আরেক ভর্তিচ্ছু ভুল করে উত্তরপত্রে নিজের রোল নম্বরের একটি সংখ্যা ভুল ভরাট করায় এ ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সংশ্লিষ্টরা এমনটি জানিয়েছেন।
সম্প্রতি স্নাতক ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ‘বি’ ইউনিটের ২০৬০৫০ রোলধারী সাজ্জাতুল ইসলাম ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করলেও প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, তিনি ১২তম হয়েছেন। এ ঘটনায় গত ৩০ নভেম্বর তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তবে ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ‘বি’ ইউনিট সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকাশিত ফলাফলে ১২তম হওয়া সাজ্জাতুল ইসলামের রোল ছিল ২০৬০৫০। কেন্দ্র ছিলো কোটবাড়ির টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলার ৫নং কক্ষ। কিন্তু ওই কক্ষে পরীক্ষার্থীর উপস্থিতির স্বাক্ষর তালিকায় তার স্বাক্ষর ছিলো না। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের সময় এই রোল নম্বরের উত্তরপত্র পাওয়া যায় এবং ওএমআর মেশিনের মাধ্যমে এ উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে ফলাফল তৈরি হয়।
পরে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের প্রবেশ পত্র যাচাই-বাছাই কমিটি মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর প্রবেশ পত্রের কপি যাচাই বাছাই করে। এসময় সাজ্জাতুল ইসলামের প্রবেশ পত্রও পাওয়া যায়নি। ফলাফলের পর তিনি মৌখিক সাক্ষাৎকারেও অংশগ্রহণ করতে আসেননি।
অন্যদিকে ওই কেন্দ্রের একই ভবনের তৃতীয় তলার ১১ নং কক্ষে পরীক্ষা দেওয়া ২০৬১৫০ রোলধারী মো. আলী মোস্তাকিন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও তার রোলের উত্তরপত্র নেই। ২০৬১৫০ রোলধারী ভর্তিচ্ছু মো. আলী মোস্তাকিন উত্তরপত্রে রোল নম্বর লেখার নির্ধারিত স্থানে সঠিক রোল লেখলেও বৃত্ত ভরাটের স্থানে ‘১’ এর স্থলে ‘০’ ভরাট করেন। ওই কক্ষের দায়িত্বে থাকা পরিদর্শকের অসর্তকতায় বিষয়টি ধরা না পড়ায় উত্তরপত্রটি ভুলভাবেই মূল্যায়ন করা হয়। যার ফলে ২০৬১৫০ রোলধারী ভর্তিচ্ছু মো. আলী মোস্তাকিন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও তিনি রোল নম্বর ভুল লেখায় মেধাতালিকায় স্থান পায়নি। অপরদিকে পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও ২০৬০৫০ রোলধারী সাজ্জাতুল ইসলাম মেধা তালিকায় স্থান পায়।
এ বিষয়ে সাজ্জাতুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ভাই জানান, সাজ্জাতুল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। এদিকে ইউনিটের ভর্তি সংক্রান্ত কার্যক্রম খুবই গোপনীয় হলেও ভর্তি কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট কোন সদস্য এ তথ্যটি ভুলভাবে উপস্থাপন করেছেন বলে এমন ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহবায়ক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন,‘ এটি কোন জালিয়াতি নয় বরং একজন পরীক্ষার্থীর ভুলে এমনটি হয়েছে। আর বিষয়টি সম্পর্কে উপাচার্য আমরা পূর্বেই অবগত করেছি।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত চলমান রয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।