টিভি রুমের মিটিং নিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত ছাত্রলীগের, থমথমে চবি
হলের টিভি রুমে মিটিং করাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। এতে দুইদিনে উভয় গ্রুপের ১০ ছাত্রলীগ কর্মী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাত ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আব্দুর রব হলে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়।
এ খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে কয়েকটি হলের সামনে অবস্থান নিতে দেখা যায়। পরে উভয় গ্রুপের সিনিয়র বসে ঐদিন রাত ১২ টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত করে।
গতকাল শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাত ১১টার দিকে পুনরায় সংঘর্ষের সূচনা হয়। এদিন থেমে থেমে একাধিক হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকে। যা রাত ১টা পর্যন্ত চলে। পূর্ব ঘটনার জের ধরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া পক্ষ দুটি হলো শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারী সিএফসি ও সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান বিপুলের অনুসারী ভিএক্স। এদের মধ্যে সিএফসি গ্রুপের নেতাকর্মীরা শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসার চৌধুরী নওফেলের অনুসারী ও ভিএক্স গ্রুপের নেতাকর্মীরা নগরীর সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
দেখুন: ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে উত্তপ্ত চবি, আহত ৫
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাতে শহীদ আবদুর রব হলের টিভি রুমে মিটিং করাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে ভিএক্স গ্রুপের প্রথম বর্ষের কর্মীরা শহীদ আব্দুর হলের টিভি রুমে মিটিং করার সময় সিএফসি কর্মীরাও মিটিং করার জন্য আসে। কিছুক্ষণ পর ভিএক্সের কর্মীদের ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলে সিএফসির কর্মীরা। ভিএক্সের কর্মীরা বের হতে না চাইলে উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়।
প্রথমদিনে আহতরা হলেন, ভিএক্স গ্রুপের কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী খালেদ হাসান, অনিক সূত্রধর, এম আর হৃদয় ও ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান হামিম। অন্যজন সিএফসি গ্রুপের কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী শাওন হাসান।
এ ঘটনা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রলীগের বগি ভিত্তিক গ্রুপ সিএফসি ও ভিএক্সের নেতাকর্মীদের রণ প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। একপর্যায়ে ভিএক্স নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে শহিদ আব্দুর রব হলের দিকে যান। পরিস্থিতি বিগড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় উভয়পক্ষের নেতারা তাৎক্ষণিক বসে বিষয়টি মীমাংসা করেন। তবে এ ঘটনার রেশ ধরে ২৯ নভেম্বর রাত ১১ টায় পুনরায় সংঘর্ষে জড়ায় বিবদমান দুটি পক্ষ।
এ ঘটনায় আহত ৫ ছাত্রলীগ কর্মী ভিএক্স গ্রুপের অনুসারী। আহতদের তিনজনকে চবি মেডিকেলে সেন্টারে চিকিৎসা দেয়া হয়। এবং দুইজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।
দ্বিতীয়দিন সংঘর্ষে আহতরা হলেন, ২য় বর্ষের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সুইডেন, ইসলাম শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ জাহিদ, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রিয়াদ, গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিম সাদমান এবং ১ম বর্ষের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রিয়াদ।
এদিকে সংঘর্ষের বিষয়টি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী, এ. এফ রহমান, আলাওল হলে থাকা ভিএক্স গ্রুপের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে অবস্থান নেন। পরে সিএফসি কর্মীরা শাহ আমানত হলের সামনে অবস্থান নিলে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দুই পক্ষকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও এ ঘটনায় রাতভর থমথমে ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। পরে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সিএফসি গ্রুপের নেতা রেজাউল হক রুবেল বলেন, তাপস সরকার হত্যার ৫ বছর পর তাপসের স্মরণে একটি কমিটি ঘোষণা করেছি। এরপর থেকে তাপস হত্যার সাথে জড়িত একটি চক্র ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনার পর আমরা বিষয়টি সমাধান করলেও পুনরায় তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মোহড়া দিয়ে শুক্রবার রাতে আবারও হামলা চালালে আমাদের কর্মীরা প্রতিহত করে। আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।
ভিএক্স গ্রুপের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দূর্জয় বলেন, হলে আমাদের জুনিয়ররা মিটিং করছিল। এসময় ওদের কর্মীরা আমাদের ছেলেদের বের হয়ে যেতে বললে একটু হাতাহাতি হয়। তবে আমরা বসে বিষয়টি সমাধান করেছি। এরপর সিএফসি গ্রুপের নেতা রেজাউল হক রুবেল আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলো কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু তারপরেও আমাদের কর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা করে ৫ জনকে আহত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মনিরুল হাসান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রশাসন ও প্রক্টরিয়াল বডি উপস্থিত ছিলো। পুরো বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টায় আছি আমরা। তাদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। এখনো বিষয়টি পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হয়নি।