৩০ নভেম্বর ২০১৯, ১৬:২০

৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা বঞ্চিত

  © টিডিসি ফটো

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) প্রতি বছরে যে পরিমাণ নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয় তার তুলনায় বেশ অপ্রতুল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন ব্যবস্থা। প্রতি বছরই একটি বড় সংখ্যক পরিমাণ শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হলেও তাদের অনেকেই পাচ্ছেন আবাসন সুবিধা। শিক্ষার্থী ভর্তির সাথে সাথে তাদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না করায় বাড়ছে আবাসন সংকট।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আবাসন সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। যার ফলে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রমের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। তা সত্ত্বেও সংকট সমাধাসে প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বেরোবিতে মোট শিক্ষার্থীর রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। যার বিপরীতে আবাসিক হলগুলোতে সিট রয়েছে মাত্র ৯৩৭টি। অর্থাৎ প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীই পাচ্ছেন না আবাসন সুবিধা। ফলে এ সিংহভাগ শিক্ষার্থীকে নির্ভর করতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার মেসগুলোর ওপর। নিম্ন মধ্যবিত্তদের অনেকের আবার সেখানে থাকাও সম্ভব হচ্ছে না। আবার বাইরে ভাড়া মেস-বাসায় অনেক সময় পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি আবাসিক হলের মধ্যে ছেলেদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে সর্বাধিক ৩৫৫টি ও শহীদ মুখতার ইলাহী হলে ২৪০টি। আর মেয়েদের জন্য একমাত্র শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৩৪২টি সিট রয়েছে। যা মোট শিক্ষার্থীর তুলনায় এ আসন সংখ্যা অতি নগণ্য।

হলগুলোতে প্রতিরুমে ৪জন থাকার কথা থাকলেও দেখা গেছে রুমগুলোতে ৬-৮ জন করে থাকছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, চরম আবাসন সংকট নিরসনে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বছরের পর বছর অতিবাহিত হলেও ছেলেদের জন্য নতুন হল নির্মাণ করার উদ্যোগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অনুদানে মেয়েদের জন্য নির্মাণাধীন ‘শেখ হাসিনা’ হলের নির্মাণ কাজও চলছে ধীর লয়ে।

এ নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলে অবস্থান করা এক শিক্ষার্থী জানান, রুমের ধারণ ক্ষমতা ৪ জন হলেও আমারা ৭জন একই রুমে থাকছি। এতে করে পড়াশোনার জন্য মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। পরিবার থেকে তেমন আর্থিক সাপোর্ট না থাকায় কষ্ট করেই এভাবে হলে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু এটা আমাদের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

এদিকে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষার্থী আসছে প্রায় ১৩৫০ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আবাসন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকায় সকলকে উঠতে হবে ক্যাম্পাসের বাইরের মেসগুলোতে। বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় শতাধিক আবাসিক মেস গড়ে উঠেছে। যেখানে মেস মালিকেরা তাদের ইচ্ছেমতো বাড়তি টাকা আদায় করছেন। এ মেসগুলোতে গাদাগাদি করে থাকছে শিক্ষার্থীরা। এতে প্রতিনিয়ত নানান বিপত্তির শিকার হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, অপরিচ্ছন্ন সেমিপাকা ঘর, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাব, নিরাপত্তাসহ বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মেসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ব্যঘাত ঘটছে। এর মধ্যেও মেসের চড়া মূল্য ও খাবার বিল দিতে অতি কষ্টে দিন অতিবাহিত করছেন গরিব শিক্ষার্থীরা।

এ নিয়ে ২য় সেমিস্টারের এক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোতে পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় বাইরের মেসে থাকছি। যেখানে প্রতি মাসে বিপুল পরিমান অর্থ ভাড়া দেওয়া লাগছে। আবার নতুন করে মেসে উঠার সময় জামানত এবং উন্নয়ন ফি এর নামে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন মেস মালিকেরা। নিরুপায় হয়ে সেই টাকা দিয়েই মেসে উঠা লাগছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য যে আবাসন ব্যবস্থা আছে তা খুবই নগণ্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত আরো হল নির্মাণ করে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধান করা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী কমলেশ চন্দ্র সরকার জানান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অনুদানে মেয়েদের জন্য ‘শেখ হাসিনা’ হল নির্মাণ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ছেলেদের জন্য নতুন কোনো হল নির্মাণের ব্যপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনা নির্মাণের ২য় ফেজের কাজে নতুন হল নির্মাণ করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ৭৫ একর জায়গা আছে এখানে নতুন করে কোন দালান তোলার সুযোগ কম। আমরা যদি আরো ৭৫ একর জায়গা নিতে পারি তাহলে হয়তো আরো আবাসিক হল নির্মাণ করা যাবে। আমরা এ লক্ষ্যে কাজ করছি। 

উপাচার্য বলেন, আমরা একটা মাস্টার প্লান তৈরি করেছি। সেখানে এটাও আছে। আর মেসগুলো যদিও বেসরকারীভাবে পরিচালিত এবং সরাসরি আমাদের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তবে আমরা ছাত্র পরামর্শ দপ্তর এবং প্রক্টরিয়াল দপ্তরকে এক্টিভেট করার মাধ্যমে মেস মালিকদের সাথে অনানুষ্ঠানিকভাবে বসতে পারি। যেহেতু আমরা শিক্ষার্থীবান্ধব দাবি করি সেক্ষেত্রে অবশ্যই সহানুভূতির সাথে বিষয়টা নিয়ে ভাববো।