জাবি শিক্ষার্থীদের দাবি না মানলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও: ভিপি নুর
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০১৯, ০৫:০৩ PM , আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৯, ১২:০৮ AM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, জাবি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে না নিলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিস ঘেরাও হবে।
উপাচার্য অপসারণের দাবিতে চলামান আন্দোলনে হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হল খুলে দিয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনাসহ তিন দফা দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বজায় রাখতে সমাবেশ করেন জাবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
তিন দফা দাবিগুলো হল-হামলার নির্দেশদাতা দুর্নীতিবাজ উপচার্যকে অপসারণ করা এবং হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা; শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হল ভ্যকেন্টের অবৈধ সিদ্ধান্ত বাতিল করা এবং দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষে রাষ্ট্রীয় আইন বিচার ও তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা।
নৈতিক স্থলন ও অর্থ কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন কারীদের উপর ৫ নভেম্বর হামলা চালায় উপাচার্যপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্রলীগ।
তারই প্রতিবাদের অংশ হিসাবে শনিবার বিকাল ৪টায় শাহবাগে সমাবেশ করেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর। এতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা বক্তব্যে রাখেন।
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ এর প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক রায়হান রাইনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, গণসংহতি আন্দোলন এর সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল, ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসাইন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি ফয়জুল আলম লালা, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা জাহিদ আনোয়ার প্রমুখ।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করলে কেন জাবি ভিসির অপসারণ নয়? আমি জানতে চাই সরকার কোথায় শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছেন? আমরা মনে করি সরকার তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয় যারা দুর্নীতি, চাদাঁবাজি, সন্ত্রাস, রাহাজানি করে বেড়ায়। তিনি সুন্দরবনের ক্ষতি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার পরিকল্পনা কঠোর সমালোচনা করেন। উপাচার্যের পদত্যাগ, নতুন সৎ, দক্ষ উপাচার্য নিয়োগ এবং অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে যেন তারা তাদের অধিকারের কথা বলতে পারে সেজন্য জাকসু নির্বাচন দেওয়ার জন্য সরকারের নিকট আহবান জানান।
সমাবেশে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, আজকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরের আন্দোলন জাবি বনাম রাষ্ট্র হয়ে গেছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ, সর্বস্তরের শিক্ষার্থী সহ সকল পেশাজীবি, সাধারণ মানুষের সমর্থন রয়েছে এ আন্দোলনে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যরিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বক্তব্যের সমালোচনা করেন। সময় থাকতে আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দর, সুষ্ঠু, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে দিন অন্যথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আন্দোলন শুরু হলে সেই আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেবে। তিনি দাবি মেনে না নিলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও করার হুমকি দেন।
সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে আজ আমরা লজ্জিত। একটি জাতির বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কত নির্লজ্জ হলে তার দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরেও পদত্যাগ করছেন না এবং উল্টো আন্দোলন কারীদের উপর হামলা করাকে সাধুবাদ জানান। তিনি অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্হ, সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবীর, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি লিটন নন্দী, বাসদ (মার্ক্সবাদী) এর কেন্দ্রীয় নেতা রাজিকুজ্জামান রতনসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পেশাজীবি মানুষ সমাবেশে অংশ নিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন।