সেশনজটে রেকর্ড গড়ছে বেরোবি’র ভূগোল বিভাগ
সেশনজটে রেকর্ড গড়ে চলেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ। বিভাগটিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা সাতবছরও পরও তাদের স্নাতক শেষ করতে পারেনি। অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করতে সময় লাগছে প্রায় নয় বছর। ৫ বছরের কোর্স ৯ বছরে শেষ হওয়ায় সরকারি চাকরির যোগ্যতা হারাচ্ছে অনেকেই।
জানা যায়, ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়। পরের বছর ২০০৯ সালে চালু হওয়া ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে ৯ জন শিক্ষক ও পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ থাকলেও চার বছরের অনার্স সম্পন্ন করতেই লেগে যাচ্ছে সাত বছর। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগে ধীরে ধীরে সেশনজট মুক্ত হচ্ছে সেখানে এই বিভাগে দিন দিন লাগামহীনভাবে বাড়ছে সেশনজটের মাত্রা।
২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের যে শিক্ষার্থীরা এই বিভাগে ভর্তি হয়েছেন তারা তিন ভিসির আমল দেখলেও অনার্স সম্পন্ন করতে পারেনি এখন পর্যন্ত। একই দশা এই বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা আট বছরে এসে অনার্স শেষ হলেও মাস্টার্স সম্পন্ন হয়নি। এছাড়াও ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ৬ বছর পার হলেও চতুর্থ বর্ষ প্রথম সেমিস্টার সম্পন্ন করলেও ফলাফল প্রকাশ হয়নি।
২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ভিসির আমলে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া ২১টি বিভাগের মধ্যে একমাত্র ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের এই ব্যাচটি সাত বছরে অনার্স সম্পন্ন করতে পারেনি। অন্যান্য বিভাগের সমসাময়িক ব্যাচগুলো অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন বছর দুয়েক আগে। ২০১৬ সালে তৃতীয় ভিসির আমলে এই ব্যাচের অনার্স সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমান ভিসির আমলে এসেও অনার্সেই আটকে আছেন তারা।
এদিকে একই দশা ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদেরও। ২০১৬ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করার কথা থাকলেও তারা এখনও মাস্টার্স শেষ সেমিস্টারে রয়েছেন। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি মাস্টার্স ১ম সেমিস্টার সম্পন্ন হওয়ার সাত মাস পর ৩ জুলাই ফলাফল প্রকাশ হয় তাদের। এছাড়াও গত ১১ সেপ্টেম্বর ২য় সেমিস্টারের ভর্তি কার্যক্রম এবং ১৬ অক্টোবর ফরম পূরণ সম্পন্ন হয়। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দফতর থেকে ৭ দিনের মধ্যে পরীক্ষা গ্রহণের নির্দেশনা থাকলেও এখনও মাস্টার্সের শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
এদিকে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা টানা তিন বছর সেশনজটে থাকার পর চলতি বছরের ১৯ মে থেকে ৩১ জুলাই পরীক্ষা পর্যন্ত চতুর্থ বর্ষ ২য় সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা হয়। নিয়মানুযায়ী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের বিধান থাকলেও প্রায় ৫ মাস পার হলেও ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি।
হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই বিভাগের ২০১২-১৩ সেশনের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, তিন ভিসির আমল দেখলাম তবুও অনার্স শেষ হল না। তিন বছর সেশনজটে থাকার পরেও অনার্সের শেষ পর্যায়ে এসে ফলাফল প্রকাশ না হওয়ার ফলে কোনো ধরনের চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছেন না তারা।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দফতর জানায়, এক বছরে দুটি সেমিস্টার (জানুয়ারি-জুন এবং জুলাই- ডিসেম্বর) মিলিয়ে একটি শিক্ষাবর্ষ শেষ হবে। এক সেমিস্টারের মেয়াদ ছয় মাস হওয়ায় সাড়ে চার মাসের মধ্যেই সমস্ত ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, মিডটার্ম এবং প্রেজেন্টেশন শেষ করে পরবর্তী ছয় সপ্তাহের মধ্যেই ফলাফল প্রকাশ করবেন কিন্তু বেশির ভাগ বিভাগের শিক্ষকেরা এই নিয়মের তোয়াক্কা করেন না।
ওই বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষকই ব্যক্তিগত কাজ নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। সেমিস্টার পদ্ধতির নিয়মও তারা যথাযথ অনুসরণ করেন না। নিয়মানুযায়ী শিক্ষকদের যে পরিমাণ ক্লাস নেয়ার কথা, তার অর্ধেকেরও কম ক্লাস নেন। অনেক শিক্ষক শুধু পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার আগে দু-চারটি ক্লাস নিয়েই ক্লাস শেষ করেন।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, সেশনজটে যাঁতাকলে পিষ্ট হয়েও তারা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারেন না। সময়মতো ক্লাস-পরীক্ষার কথা বললেই উল্টো হয়রানির হুমকি দেন শিক্ষকরা। শিক্ষক স্বল্পতা থাকায় তারা আরও বেশি বেপরোয়া। ফলে এক থেকে তিন বছরের সেশনজট নিয়েও মন্তব্য করতেও ভয় পান শিক্ষার্থীরা।
তারা আরও জানান, ওই বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে পারস্পারিক দ্বন্দ্ব স্পষ্ট। একজন খাতা জমা দিলে আরেকজন দেন না। একজন ক্লাস শেষ করলেও আরেকজন শুরু করেননা। বিভাগের এক শিক্ষক মাসে ৫ থেকে ৭ দিন বিভাগে আসেন। তার হাতেও অনেক কোর্স থাকে।
সেশনজটের ব্যাপারে জানতে চাইলে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মো. আতিউর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এই বিভাগের সেশনজটের বিষয়ে ভিসি প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর বলেন, এটা ন্যক্কারজনক, অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমানে সৃষ্ট সেশনজট নিরসন ও নতুন করে সেশনজট যেন সৃষ্টি না হতে পারে সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি।