মেধা তালিকায় থেকেও ভর্তি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একটি অংশের ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তার দেখা দিয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকে মানোন্নয়ন দেয়া এই শিক্ষার্থীরা ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন। তাদের অনেকেই ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, আছেন মেধা তালিকাতেও। কিন্তু ফলাফল প্রকাশের পর তাদেরকে জানানো হয় মানোন্নয়ন দেয়া পরীক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবেন না।
মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া এসব শিক্ষার্থী ফলাফল প্রকাশের পরে জানতে পারেন, ২০১৮ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে চবিতে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করার পরও যারা ২০১৯ সালে আবার মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়েছেন, তারা ভর্তির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।
জানা যায়, ভর্তি পরীক্ষার আগে চবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দিকনির্দেশনায় কতৃপক্ষের কিছুটা ভুল ছিলো। এমনকি ভুলের বিষয়টি স্বীকারও করেছেন চবি আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক হানিফ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ২০১৮-তে চবিতে পরীক্ষা দিয়ে আবার ২০১৯ এ পরীক্ষার আবেদন করাটাই তাদের ভুল। তবে আবেদনের অযোগ্যতা অনলাইন এপ্লিকেশান সিস্টেমেই রাখা উচিত ছিলো (যা কিনা ওয়েবসাইট এলগরিদমের কারিগরি ত্রুটির কারণে সম্ভব হয়নি)। অন্যথায় এই শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারার কথা না।
চবির নির্দেশিকায় যা ছিলো:
“২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তির জন্য যারা ২০১৮ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে আবেদনের যোগ্য ছিল না তবে ২০১৯ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (মান উন্নয়ন) অংশগ্রহণ করে যোগ্যতা অর্জন করেছে তারা আবেদনের যোগ্য বিবেচিত হবে।”
তবে শিক্ষার্থীদের দাবি এখানে যারা ২০১৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক দেয়ার পরে যোগ্য ছিলো, কিন্তু মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়েছে; এমন শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা? অথবা যারা প্রথমবার যারা অযোগ্য ছিলো শুধু তারাই আবেদন করতে পারবে; বাকিরা পারবেনা’ এই বিষয়টি স্পষ্ট ছিলো না। তাছাড়া অযোগ্য হলে আবেদন গ্রহণ করা হলো কেন?
এদিকে এসব শিক্ষার্থীদের অনেকেই চবিতে চান্স পাওয়ায় অন্য প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। এমনকি অনেকে কলেজের ভর্তিও বাতিল করেছেন। কিন্তু কতৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে হতাশ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অবিভাবকেরা।
কতৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিষয়টি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা জানার পর গত ৩ই নভেম্বর প্রশাসনের নিকট একটি আবেদনপত্র জমা দেন তারা। এতে কোনো অগ্রগতি না দেখে ৪ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শহীদ মিনার চত্বরে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন করেন তারা। পরে প্রক্টরিয়াল বডি র সদস্যরা এসে শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম ও মানোন্নয়নের পর প্রাপ্ত দুটি মার্কশিট, ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্রসহ লিখিত আবেদন একদিনের মধ্যে জমা দিতে বলেন।
পরদিন ৫ নভেম্বর এ বিষয়ে আলোচনায় বসার কথা জানানো হয়। প্রাথমিক আশ্বাস পেয়ে শিক্ষার্থীরা বিকাল ৪টায় কর্মসূচি স্থগিত করেন। ৫ নভেম্বর সকাল থেকে শহীদ মিনার চত্বরে অবস্থান নিয়ে লিখিত আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাজগপত্র সংগ্রহ করতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। ওই দিন দুপুরে ৩২৬টি আবেদন প্রক্টর অফিসে জমা দিয়েছেন তারা। পরদিন সকালে আরো ৩০-৪০টি আবেদন জমা দেওয়া হয়।
৫ নভেম্বর জরুরি সভায় বসার কথা থাকলেও একদিন পর ৬ নভেম্বর এ বিষয়ে আলোচনায় বসেন ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত কোর কমিটি। ওই দিন জরুরি সভা চলাকালে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। পরে বিকেল পাঁচটায় একাডেমিক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার এসএম আকবর হোছাইন তাদেরকে কোর কমিটির সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এ সময় তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ভর্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কয়েক দিনের মধ্যে বিষয় পছন্দের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এসকল পরীক্ষার্থীরা পরবর্তী প্রক্রিয়া তথা মেরিট অনুযায়ী বিষয় পছন্দ করবেন। এরপর যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ভর্তি কার্যক্রম চলবে।’ এসময় শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আকবর হোছাইন বলেন, ‘সভায় এতটুকুই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বাহিরে আর কিছু বলতে পারবো না।’
এদিকে কতৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের কথা শুনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কাঁদতে দেখা যায়। এসময় শিক্ষার্থীদের কান্নায় আবেগ ঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। জানা যায়, আন্দোলনকালে সানজিদা ইয়াসমিন নামের এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর মা অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে তাকে চবি মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এদিকে আন্দোলনকারী ভর্তিচ্ছুরা বলছেন, ‘এই ধরণের কথা আগে থেকেই আমাদেরকে বলা হয়েছে। তাই আমরা লিখিত নিশ্চয়তা চান। কারণ আগেও আমাদেরকে বলা হয়েছে যে, বিষয় পছন্দ করলেও ভর্তি হতে গেলে আমাদের বাদ দেওয়া হবে।’
ওই দিন কতৃপক্ষের এই অস্পষ্ট সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যান ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। পরে একাডিক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরিয়াল বডি তাদেরকে একাধিকবার সরে যেতে বললে (৬ অক্টোবর) রাত আটটার দিকে তারা কর্মসূচি স্থগিত করেন। এবং নিজেদের দাবি আদায় না হলে পরদিন ৭ নভেম্বর পুনরায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তারা। তবে ৭ নভেম্বর সকাল থেকে আন্দোলনকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি।
এ ব্যাপারে আন্দোলনকারী ভর্তিচ্ছু মিকাঈল আহমেদ জানান, ৭ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকালে আমরা ৩জন ডেপুটি রেজিস্ট্রার এস এম আকবর স্যারের সঙ্গে দেখা করতে যাই। সে সময় আমার সাথে ছিলো আকরাম এবং ইমাম হোসেন হৃদয়। আমরা প্রক্টর অফিসের সামনে গেলে আমাদের ৩জনকে প্রক্টরের গাড়িতে তুলে সহকারী প্রক্টর রিফাত হোসেন স্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নং দিয়ে ক্যাম্পাসে বাহিরে নিয়ে যান।
কি কারণে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় জানতে চাইলে মিকাঈল বলেন, “স্যার আমাদেরকে বলে ছিলো; তোমরা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না, এখানে তোমাদের কাজ কি?’ এ কথা বলে আমাদেরকে গাড়ীতে উঠান তিনি। পরে আমরা ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করতে না পেরে এদিন বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন করি। সেখানে আমরা আমাদের দাবিদাওয়া তুলে ধরেছি এবং কতৃপক্ষের সুস্পষ্ট কোনো সমাধান না পেলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।”
এ নিয়ে সর্বশেষ সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সচিব ও একাডেমিক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার এস এম আকবর হোসাইনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগে চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
মানোন্নয়ন ভর্তি পরীক্ষার্থীদের বিষয়ে অনুষ্ঠিত জরুরি সভার ডিন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক সিকান্দর চৌধুরী কোর কমিটির সিদ্ধান্তের বিষয়ে বলেন, ‘পরীক্ষা কমিটির সচিব এস এম আকবর হোসাইন ওই দিন যা বলেছেন, সেটাই আমাদের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত। এর বাহিরে আর কোনো মিটিং হয়নি এবং নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
আরো পড়ুন: