ভাষাসৈনিক আব্দুর রৌফ চৌধুরীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাষাসৈনিক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত জননেতা আব্দুর রৌফ চৌধুরীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মু. আবুল কাসেম। মরহুমের ১২তম মৃত্যুবাষিকীতে তার সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে এ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ভিসি।
সোমবার (২১ অক্টোবর) সকালে আব্দুর রৌফ চৌধুরী ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত মরহুমের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনায় অনুষ্ঠিত কুরআনখানী ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে যোগদানের পূর্বে তিনি এ পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র হালদার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো.ফজলুল হক, জনসংযোগ ও প্রকাশনা শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. শ্রীপতি সিকদার, হিসাব শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. শাহাদাৎ হোসেন খান (লিখন), প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. খালেদ হোসেন, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমরান পারভেজসহ বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তাবৃন্দ।
কুরআনখানী ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠান শেষে নৌ প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি’র মায়ের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মত বিনিময় করেন হাবিপ্রবির উপাচার্য।
প্রসঙ্গত, আব্দুর রৌফ চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশের একজন সুপরিচিত রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াবিদ। তিনি ১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর দিনাজপুর জেলার বোঁচাগঞ্জ থানার ধনতলা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা মৌলভী খোরশেস চৌধুরী এবং মাতা আয়েশা খাতুন চৌধুরী। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনিই ছিলেন সব থেকে ছোট। তিনি ৫ কন্যা ও এক পুত্রের জনক। তার একমাত্র পুত্র খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ সরকারের নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ।
আব্দুর রৌফ চৌধুরী উচ্চ মাধ্যমিক পড়াকালীন সময়ই একজন ছাত্র নেতা ছিলেন। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই তিনি দিনাজপুর এস.এন কলেজের ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিত্ব করেন। পাকিস্তান আমলে বৃহত্তর দিনাজপুর (বর্তমান দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়) জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
১৯৯৬ এর পূর্ববর্তী সময়ে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন একাধারে ১৫ বছর। ১৯৮৯ সালে বোঁচাগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে দিনাজপুর-১ আসন (বীরগঞ্জ-কাহারোল) থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
আব্দুর রৌফ চৌধুরী যুদ্ধকালীন সময়ে মুজীব নগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের দূত হিসেবে ছিলেন পূর্বাঞ্চলীয় জোনে। সেই সাথে বোঁচাগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠক ছিলেন। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বোঁচাগঞ্জ উপজেলাকে পাক-হানাদার মুক্ত করেন।
আব্দুর রৌফ চৌধুরী ২০০৭ সালের ২১ অক্টোবর রাত ৯টায় তার নিজ বাসভবন, বোঁচাগঞ্জ থানার ধনতলা গ্রামে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।