‘নিজেকে রক্ষা করতে উপ-উপাচার্য আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন’
আইন বিভাগে নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনায় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া নিজেকে রক্ষা করতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে দায় চাপিয়ে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করেছেন আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল হান্নান।
মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের ২৪৫ ন. কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে গত ০৩ অক্টোবর বিকেলে সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়ার উপস্থাপিত লিখিত বক্তব্যের ৩টি পয়েন্টের প্রেক্ষিতে বক্তব্য দেন।
অধ্যাপক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘নুরুল হুদার সাথে আমার শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক। তাই তার কাছে টাকা ধার চেয়েছিলাম। ধার নেয়ার সময় নির্ধারিত এক সপ্তাহের মধ্যেই তা শোধ করে দেই। বিষয়টিকে কোনভাবেই চাকুরীর সাথে সম্পৃক্তের সুযোগ নেই।’
এসময় সাংবাদিকদের হাতে দেয়া এক বিবৃতিতে ব্যাংক একাউন্টের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ডিসেন্ট ট্রেডার্সের একাউন্টটি একটি যৌথ চলতি একাউন্ট। প্রথমে আমার নামে পরিচালিত হলেও পরবর্থীতে মো. শফিকুল ইসলাম ও আমার যৌথ নামে পরিচালিত হয়। এটি মূলত মির্জাপুরে আমাদের দু’জনের ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য ব্যাংক হতে ঋণ ও অন্যান্য উৎস হতে গৃহীত টাকা লেন-দেনের সুবিধার জন্য খোলা হয়।’
বিবৃতিতে উপ-উপাচার্যের সংবাদ সম্মেলনে উল্লিখিত টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চাকুরী না হওয়ার পর টাকা ফেরৎ চেয়ে ডিসেন্ট ট্রেডার্স এর সত্ত্বাধিকারীর সঙ্গে চাকুরি প্রত্যাশী নূরুল হুদার ফোনালাপ ‘সংযুক্তি-৪’ হিসেবে একটি সিডি প্রদর্শন করা হয়েছে। এখানে সরাসরি মিথ্যা তথ্যের অবতারণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত বছরের ৯ নভেম্বরের ফোনালাপে নূরুল হুদা ধার দেয়া টাকার কথাই উল্লেখ করেছে। উক্ত রেকর্ডেও নুরুল হুদা বারবার ‘ধার’ শব্দটিই উচ্চারণ করেছে। উক্ত ধার চাকুরীর নিয়োগ বোর্ডের পূর্বেই পরিশোধ করা হয়েছে। সুতরাং নিয়োগ না হওয়ায় টাকা ফেরৎ চাওয়ার অভিযোগটি সম্পূর্ণই মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার কাছে এর ব্যাখাও প্রত্যাশা করেন তিনি। অন্যথায় ‘সুনাম ক্ষুণ্নকারী মিথ্যা বিবৃতি প্রকাশের’ জন্য আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের অধিকার তার রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অধ্যাপক হান্নান বলেন, ‘মাননীয় প্রো-ভিসি মহোদয় কতৃক প্রদত্ত বিবৃতি ও সাংবাদিক সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যের কারণে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে আইন বিভাগসহ আমার মান-সম্মান ক্ষুণ্ন করার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, ৩০ সেপ্টেম্বর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চোধুরী মো. জাকারিয়ার সঙ্গে আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ প্রত্যাশী মোহাম্মদ নুরুল হুদার স্ত্রীর ফোনালাপ ফাঁস হয়। কথোপকথনের এক পর্যায়ে ‘আচ্ছা মা, একটা কথা বলতো, আমার খুব শুনতে ইচ্ছা তোমরা কয় টাকা দেওয়ার জন্য রেডি’ এমন কথা শোনা যায় উপ-উপাচার্যের মুখে। ফোনালাপটি ফাঁসের পরপরই দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করে।
উপ-উপাচার্যের সংবাদ সম্মেলনের দিন থেকেই শিক্ষার্থীরা লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেন। একই দিন মানববন্ধন ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেন প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের ৫৮ শিক্ষক। বিবৃতিতে দুর্নীতিবাজ এবং নিয়োগ বাণিজ্যের নিবেদিত প্রশাসকদের অপসারণ দাবি করেন তারা।