নিভে গেল পরিবারের একমাত্র আশার প্রদীপ, হৃদরোগে শিক্ষার্থীর মৃত্যু
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের(কুবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ৭ম ব্যাচের কাজী মহিউদ্দিন নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এর মাধ্যমে নিভে গেল পরিবারের একমাত্র আশার আলো।
রোববার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
মহিউদ্দিনের বাড়ি কুমিল্লা নগরীর রেইসকোর্সে। পরিবারে মা আর বোন ছাড়া কেউ নেই। বাবাকে হারান ২০০৪ সালে। তখন তিনি ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ালেখা করছেন। টিউশনি করিয়ে পরিবারের হাল ধরেন তার বড় বোন। আর্থিক অনটনের মাঝেই বড় হন মহিউদ্দিন। ২০১২ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যামিক পাশ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ৫৭তম হন তিনি। সিএসই, আইসিটি পেলেও আর্থিক অবস্থা চিন্তা করে ভর্তি হন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে মহিউদ্দিন বরাবরই প্রথম ছিলেন তার ব্যাচে। টিউশন করে সংসার চালাতেন। তার একমাত্র বোনও নানান মানসিক চাপে প্রায় এক বছর ধরে অসুস্থ্য। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে পাইলস রোগে আক্রান্ত ছিলেন মহিউদ্দিন। সহপাঠীদের সহায়তায় কিছু চিকিৎসা করিয়েছেন।
মেধাবী মহিউদ্দিনের স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া। লক্ষ্যের অনেকটা তার দ্বারপ্রান্তেই ছিলেন তিনি। কিন্তু হৃদরোগের কাছে হার মানলো তার স্বপ্নের, তার পরিবারের স্বপ্নের।
শনিবার বিকেলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তাকে কুমল্লিা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করালেও তার রিপোর্ট দেয়ার আগেই তিনি মারা যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক তার বন্ধুদের জানান, হৃৎপিণ্ডের একটি অংশ বড় হয়ে যাওয়ায় তিনি মারা যান।
মহিউদ্দিনের সহপাঠী আখি আলম রকি বলেন, ‘পরশু (শনিবার) বিকেলে তার অসুস্থতার কথা শুনে আমাদের সিআর (ক্লাস প্রতিনিধি) রেজাউল তাকে হাসপাতালে ভর্তি করায়। গতকাল (রবিবার) তার অবস্থার অবনতি হলে আমরা সবাই ছুটে যাই। কিন্তু তার সাথে আমাদের আর কথা বলার সুযোগ হলো না।’
তিনি বলেন, ‘মহিউদ্দিন ভর্তি পরীক্ষায় ৫৭তম হলেও সে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। আইসিটি বা সিএসইতে ভর্তি হলে হয়ত তার কম্পিউটার কেনা লাগবে শুধুমাত্র এ কারণে তিনি এসব বিষয় নেননি। টিউশন করে সংসার চালাতো। ৩য় বর্ষে এসে সে খুব অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। তবুও সে প্রচুর পরিশ্রম করতো। গত আড়াই বছর সে ভাত আর শাক-সবজি খেত। মাছ-মাংস খেতে পারতো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা র্যাগ ডে বা ব্যাচ ডে করতামনা। কোন ইভেন্ট আসলে আমাদের চিন্তা থাকতো কিছু টাকা বাঁচিয়ে তাকে সহযোগিতা করা। তার পরিবার এখন খুব অসহায়। তার বোন মানসিকভাবে অসুস্থ। আমাদের শিক্ষক এবং বন্ধুরা মিলে একটা ফান্ড করার চিন্তা করেছি। যাতে দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতা হয়।’
মহিউদ্দিনকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘ও আমার বিভাগেরই শিক্ষার্থী। অসম্ভব মেধাবী একটা ছেলে। এতো অনটনে চলতো তবুও মুখ ফুটে কিছু বলতোনা। তার পরিবারের অবস্থাও ভালো নয়। আমরা পূজার ছুটির পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং তার বাড়িতে মিলাদের আয়োজন করবো। এছাড়া সবার সহযোগিতায় একটা ফান্ড করার চেষ্টা করবো। যাতে ১০-১২ লাখ টাকা উঠলে একটা ফিক্রড ডিপোজিট করে রাখলে প্রতিমাসে অন্তত একটা অংশ তারা ব্যাবহার করতে পারবে।’