০৫ অক্টোবর ২০১৯, ২০:৪৫

ভিসি ও প্রো-ভিসির পদ ছাড়ুন, নতুবা মাঠ ছাড়ছি না

ফোনালাপে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য ও ‘জয় হিন্দ’ বক্তব্য দেয়ায় ‘দেশদ্রোহিতা’র অভিযোগ এনে উপ-উপাচার্য ও উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে ব্যতিক্রমী আন্দোলন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা।

শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু ভবনের সামনে থেকে দেশাত্মবোধক সঙ্গীত গাইতে গাইতে একটি মশাল মিছিল বের করে তারা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে বুদ্ধিজীবী চত্বরের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সমাবেশে সহ-উপাচার্য ও উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন।

সমাবেশে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে সব থেকে যোগ্য ব্যক্তিরা ভিসি, প্রো-ভিসির আত্মীয় স্বজন। প্রশাসন থেকে শুরু করে শিক্ষক, কর্মচারী, পিয়ন সবই তাদের আত্মীয়-স্বজন ও সন্তান সন্তুতি। তাই আমরা অনতিবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবি করছি।’ প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার কাছে আহ্বান করছি, যাতে দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা গ্রহণ করেন। আর এর ব্যতিক্রম হলে লাগাতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন রাকসু আন্দোলনের এই নেতা।

‘তারা চাকরি নিয়োগে তাদের আত্মীয়-স্বজন, পিয়ন, কর্মচারী সবাইকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। অথচ গ্রাম থেকে আসা শিক্ষার্থীরা দিনের পর দিন অবহেলিত হচ্ছে।’

‘ধারাবাহিক অন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা মশাল মিছিল করেছি। উপাচার্যের ‘জয় হিন্দ’ বক্তব্যের প্রতিবাদে ৩০ সেপ্টেম্বরে আমরা তাঁকে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই স্মারকলিপির জবাব আমরা পাইনি। আন্দোলনের ঘোষণা দিলে প্রশাসন আমাদেরকে জিম্মি করে উপাচার্যের সাথে আলোচনায় বসান। সেখানে গোজামিল দিয়ে আমাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালকে নিয়োগ বাণিজ্যের আখড়ায় পরিণত করেছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে সরকার সারাদেশে শুদ্ধি অভিযান অভিযান চালনা করছে। আপনারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসুন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে দুর্নীতি চলছে তা দূর করুন। দুদক, ইউজিসির প্রতিনিধিরা এসে দেশের সামনে তাদের দুর্নীতি চিত্র তুলে ধরুন। জোহা স্যারের মাটিতে দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই নাই। তাই এই আন্দোলন চলবে, যতক্ষণ না তাদেরকে উৎখাত করা হচ্ছে।’

সমাবেশে ছাত্র ফেডারেশন রাবি শাখার সভাপতি রাশেদ রিমন বলেন, 'আমরা শহীদ শাসুজ্জোহা, শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার স্যারের শিক্ষার্থী। তাদের নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। তারা সারা বাংলাদেশের শিক্ষকদের আদর্শ। অথচ আজ কয়েকজন দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের কারণে আমরা লজ্জা পাই। এরপরও তারা স্বপদে বহাল রয়েছেন। এটা জাতির জন্য লজ্জা। একে তো তারা দুর্নীতি করেন। সে দুর্নীতির আবার অপব্যাখ্যা দেন। এখনও সময় আছে আপনারা পদত্যাগ করুন। নাহলে আমরাও মাঠ ছাড়ছি না। সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা আন্দোলনে নামবো।'

এর আগে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর সহ-উপাচার্য চৌধুরী মো জকারিয়ার সঙ্গে এক চাকরিপ্রত্যাশির স্ত্রীর দরকষাকষির ফোনালাপ ফাঁস হয়। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ফোনালাপটি এডিট করা হয়েছে দাবি করেন তিনি।যদিও অডিও ক্লিপের একটা অংশে বলা ''কত টাকা দিতে রেডি আছো?'' এ প্রশ্নের কোন স্পষ্ট উত্তর তিনি দিতে পারেননি।

এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্য প্রদানকালে উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান ‘জয় হিন্দ’ বলেন। এরপর থেকেই দেশব্যপী সমালোচনা শুরু হয়। উভয়ের পদত্যাগ দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।