নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে উপ-উপাচার্যের সংবাদ সম্মেলন, উত্তর মেলেনি অনেক প্রশ্নের

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়ার ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপ ও লেনদেনের বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে উপস্থিত সাংবাদিকরা এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করলে বেশির ভাগ প্রশ্নেরই স্পষ্ট কোন উত্তর পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপ-উপাচার্য তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, কথিত নিয়োগ বাণিজ্যে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাহানিকর কোনো ঘটনা আমার দ্বারা সংগঠিত হয়নি। বরং আমি নিয়োগ বাণিজ্য উদঘাটন ও প্রতিরোধে সদা সচেষ্ট থেকেছি।

এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি পবিত্র স্থানে নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের মুখোশ উন্মোচন ও সত্য প্রকাশের জন্য অনুরোধ জানান। একইসঙ্গে নিয়োগ কেলেঙ্কারিকে ‘লোকমুখে প্রচলিত’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘সামগ্রিক নিয়োগ বাণিজ্যসহ আইন বিভাগের নিয়োগ নিয়েও আর্থিক লেনদেনের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।’

তবে ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডটির ‘তোমরা কয় টাকা দেওয়ার জন্য রেডি’ এই অংশে উপ-উপাচার্যের আর্থিক লেনদেনে সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি অসম্পূর্ণ ও এডিট করা দাবি করে নিজের সংশ্লিষ্টতা এড়িয়ে যান।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড ছিলো গত বছর ১৩ নভেম্বর। এর ৯ দিন আগে ৪ নভেম্বর আইন বিভাগের নিয়োগ সংক্রান্ত একটি দুর্নীতির নথি আমার নজরে আসে। যা ইসলামী ব্যাংকে ২ লাখ টাকার একটি লেনদেনের রিসিপ্ট। সেই বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখতে পাই, ওই লেনদেনটি নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর শাখা থেকে রাজশাহীর আলুপট্টি শাখায় জমা হয়েছে। আমি আলোচিত নিয়োগ প্রার্থী নুরুল হুদাকে ছোটবেলা থেকেই স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে সাহায্য-সহযোগিতা করে এসেছি। এ কারণে আমার সন্দেহ হয় যে, হুদার আর্থিক সামর্থ্য নেই। কিন্তু কোথা হতে সে এ টাকা লেনদেন করেছে। তিনি সাবলীল ভঙ্গিতে নিজের নাম ও পরিচয় দিয়ে হুদার স্ত্রীর নিকট হতে ২ লাখ টাকার উৎস জানার চেষ্টা করেন। তারা আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি স্বীকার করেছিলো। কিন্তু কাকে দিয়েছিলো ওই সময় পরিপূর্ণ তথ্য দেয়নি।’

উপ-উপাচার্য আরও বলেন, ‘তার জামাতার নিয়োগের জন্য হুদার চাকরি হয়নি; তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। ‘আইন বিভাগের নিয়োগ বোর্ড ছিল ১৩ নভেম্বর, সিন্ডিকেট হয়েছে ১৭ নভেম্বর, যোগদান হয়েছে ১৮ নভেম্বর ২০১৮। কিন্তু আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে ২৪ এপ্রিল ২০১৯।’

৪ নভেম্বর দুর্নীতির বিষয়টি তার নজরে এলেও উপ-উপাচার্য হিসেবে তখনি কেন ব্যবস্থা নেননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ম্যাজিস্ট্রেটের পেশা থেকে ছাত্রদের পাঠদান ও গবেষণার জন্য তিনি শিক্ষকতায় এসেছি।

পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া। তবে একাধিক সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন, ‘লিখিতভাবে প্রশ্ন করা হলেও সে প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়। নির্দিষ্ট কোন উত্তর তার কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

এসময় নিয়োগের অর্থ লেনদেনের বিষয়ে কথোপকথন দাবি করে আইন বিভাগের সভাপতি আব্দুল হান্নান ও নুরুল হুদার মধ্যকার একটি অডিও ক্লিপ ও ‘ডিসেন্ট ট্রেজার্স’ নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত লেনদেনের তথ্য সাংবাদিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এবিষয়ে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানের অনুরোধ করেন উপ-উপাচার্য।

এদিকে উপ-উপাচার্যের দাবির বিষয়ে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল হান্নান জানান, ‘ওই এ্যাকাউন্টটি একটি যুক্ত ও ব্যবসায়িক একাউন্ট। আইনজীবী শফিকুল ইসলামের সাথে আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডিসেন্ট ট্রেডার্স পরিচালনা করেন তিনি। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ধার হিসেবে একটি একাউন্ট থেকে ডিসেন্টের এ্যাকাউন্টে টাকা আসে। কার্যক্রম হালনাগাদের কাজ চলছে জানিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ্যাকাউন্টটি বন্ধ রেখেছিলো। পরে তা চালু করে দেয়া হয়েছে।’

তার দাবি, উপ-উপাচার্য ব্যাংক এ্যাকাউন্টের যে কাগজ দেখিয়েছেন তা অসম্পূর্ণ, ছবিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সীল-স্বাক্ষর থাকার কথা, তা কিন্তু নেই। সেটা দেখে মনে হয়, ছবিটা পেস্ট করা। এছাড়াও সে কাগজটি শুধু এ্যাকাউন্টধারীই পেতে পারেন। উপ-উপাচার্য কীভাবে এই কাগজ পেলেন তা নিয়ে এসময় প্রশ্ন তোলেন তিনি।

ফোনালাপের বিষয়ে অধ্যাপক হান্নান বলেন, ‘যে কল রেকর্ড উপস্থাপন করা হয়েছে, সেটা ধার করা টাকা ফেরত সংক্রান্ত। ওই নিয়োগের এক সপ্তাহ আগেই সেটা হয়েছিল তবে নিয়োগের কোন বিষয় নিয়ে হুদার সাথে আমার কথা হয়নি। ৪ নভেম্বর ২০১৮ আমার একাউন্টে টাকা আসে এবং ১১ নভেম্বর ফেরত হিসেবে চেক জমা দেই এবং ১৩ তারিখে তা ক্লিয়ার হয়ে গেছে।

তিনি দাবি করেন, ‘ডিসেন্ট ট্রেডার্সের লেনদেন সংক্রান্ত যে রিসিপ্টটি উপস্থাপন করা হয়েছে সেটাতে ব্যাংক সংবলিত আমার ছবির ওপর সিল-স্বাক্ষর থাকার কথা।’


সর্বশেষ সংবাদ