৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২০:০১

মদের বোতল দিয়ে মাথা ফাটাল জাবি ছাত্রলীগ কর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ভর্তি পরীক্ষার চলাকালীন কম্পিউটার এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ভবনের সামনে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সহকারী প্রক্টরের সামনেই ছাত্রলীগের এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের ওপর চড়াও হয়।

এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগ কর্মীদের মদের বোতলের আঘাতে শহীদ রফিক জব্বার হলের ছাত্রলীগ কর্মী ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন নাহিদের মাথা ফেটে রক্তাক্ত হয়। গুরুতর আহত সাব্বির হোসেনকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

সোমবার দুপুর দুইটার দিকে সংঘটিত এ ঘটনায় আরো তিনজন আহত হয়েছে। তারা হলেন— শহীদ রফিক জব্বার হলের আবাসিক ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী জোবায়ের আহমেদ, কামরুল হাসান শাওন, রকিব, সোহেল রানা ও আহসান ফাহিম আহত হন। এদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. রেজওয়ানুর রহমান জানান, ‘মারধরের এ ঘটনায় মোট ৩জন চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে নাহিদের মাথার পেছনে গুরুতর যখম থাকায় তাকে এনাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।’

এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে হামলার বিচার দাবি করে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে হামলার শিকার ছাত্রলীগ কর্মীরা।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘আজ দুপুরে ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারের পাশে অবস্থিত শেখ জামাল ভর্তি সহায়তা কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করতেছিল শহীদ রফিক জব্বার হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা। এসময় একজন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র চিনিয়ে দেয়ার জন্য সিএসই বিভাগের সামনে যান শহীদ রফিক জব্বার হলের ছাত্রলীগ কর্মী সাব্বির হোসেন নাহিদ।

এই ভবনের সামনে টাকার বিনিময়ে ব্যাগ, মোবাইল ইত্যাদি রাখার জন্য ট্যান্ট দেয় বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থী ও দর্শন বিভাগের ৪৬ তম আবর্তনের ছাত্র জাকির হোসেন। সে ট্যান্টে ওই শিক্ষার্থীর মোবাইল রাখার জন্য জবরদস্তি করা হয়। তখন সাব্বির হোসেন টাকার বিনিময়ে জিনিসপত্র রাখার প্রতিবাদ জানালে জাকির তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে ও চড় থাপ্পড় দেয়।

ঘটনাস্থলে উপস্হিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর রনি হোসেন তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। এছাড়াও শহীদ রফিক জব্বার হলের আরো ৪/৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী এগিয়ে আসেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থী ৪১তম আবর্তনের অর্থনীতি বিভাগের আফফান হোসেন আপন ও ৪২ তম আবর্তনের নাজিমুল বরণের নেতৃত্বে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।

হামলার সময়ে ৪৭ তম আবর্তন ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ একটি মদের বোতল দিয়ে সাব্বিরের মাথায় আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে দেয়।

অভিযোগপত্র হতে আরো জানা যায়, ‘সে সময় ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আকলিমা আক্তার ও উপস্হিত ছিলেন। এ হামলায় ৪৫তম আবর্তনের দর্শন বিভাগের ছাত্র নাজমুল, ৪৭তম আবর্তনের নাইম সহ বঙ্গবন্ধু হলের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন এবং হামলায় ইন্ধন যোগায় ৪১ তম আবর্তনের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা মিজান'।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে মিজান বলেন, ‘ঘটনার ব্যাপারে আমি শুনেছি। কিন্তু আমি এ ঘটনার সাথে জড়িত নয়। সহকারী প্রক্টরের ফোন পেয়ে হামলার প্রায় ২০ মিনিট পর আমি ঘটনাস্থলে যায়। এসময় উপস্হিত প্রক্টরকেও এ ঘটনায় জড়িতদের যথাযথ বিচার সম্পন্ন করার কথা বলি।’

শহীদ রফিক জব্বার হল ছাত্রলীগ নেতা নেজাম উদ্দীন চোধুরী নিলয় বলেন, ‘ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের কর্মীরা যদি মারধরের শিকার হলে সেটা খুবই কষ্টকর। এ ঘটনায় আমরা কোন উশৃঙ্খলতার দিকে যায়নি। প্রশাসনের আশ্বাসে আমরা নিজেদের সংযত রেখেছি। ঘটনার যথাযথ বিচার না হলে পরবর্তীতে যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা আমাদের কর্মীদের উপর হামলার যথাযথ বিচার দাবি করছি।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, “আমরা আজকে সন্ধ্যায় ডিসিপ্লিন বোর্ডের সভা ডেকেছি। যথাযথ প্রমাণ ও উপস্থিত সহকারী প্রক্টরদের তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্হা গ্রহন করব।”