২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৭:০২

হামলার নেতৃত্বে ছিলেন ভিসিপন্থী কর্মকর্তারা

গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন কিন্তু শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় তিনজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক সহ প্রায় ৫০ জন সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ উপাচার্যের নির্দেশেই এই হামলার ঘটনা ঘটে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারী সহ উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে। এ বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধান করলে বেশ কয়েকজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের হামলায় যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।

শেখ আবির বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ২১ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীদের হামলার সময় ধারণ করা একটি ভিডিওতে তাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করতে শেখ আবিরসহ কয়েকজন চর পাথালিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যকার সংযোগ সড়কটি ভেঙে ফেলছেন এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তরিকুল ইসলাম রেজিস্ট্রার দফতরের অধীনে সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গোবরা এলাকায় তার নেতৃত্বেই হামলার ঘটনা ঘটেছে। এক সাংবাদিক অভিযোগ করেন, তরিকুল ইসলামই কয়েকটা ছেলেকে তার ওপর হামলা করার নির্দেশ দেন। এছাড়া হামলা পরবর্তীতে তরিকুল ইসলামকে শিক্ষার্থীদের দেখে নেয়ার হুমকি দিতে দেখা গেছে। এর একটি ভিডিও ক্লিপ ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে পৌঁছেছে।

উপাচার্যের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ একজন শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম সাকিব। তিনি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পড়ছেন। প্রায় সকল জায়গাতেই তাকে উপাচার্যের সফরসঙ্গী হিসেবে দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা জানায়, সোবহান সড়কে হামলার নেতৃত্বে ছিলো এই আরিফুল ইসলাম সাকিব। সুমন নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, সাকিব তাকে এবং তার বন্ধুকে মারধর করে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছিলেন।

শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করতে শেখ আবিরসহ কয়েকজন চর পাথালিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যকার সংযোগ সড়কটি ভেঙে ফেলছেন

 

আহত শিক্ষার্থীরা জানায় হামলাকারীদের বেশিরভাগই ছিলো পরিচিত মুখ, তাদেরকে তারা বিভিন্ন সময়ে উপাচার্যের সাতে দেখেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, ‘আমাদের আন্দোলন সম্পূর্ণ অহিংস আন্দোলন। আমরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। স্থানীয়দের সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই এবং এই আন্দোলনে তাদের বিরুদ্ধেও নয়। সুতরাং তারা কেনো শুধু শুধু হামলা করবে? আন্দোলনটি উপাচার্যের বিরুদ্ধে এবং শিক্ষার্থীদের থামিয়ে দিতে তিনিই হামলা করিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বশেমুরবিপ্রবির পদত্যাগকৃত সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবিরও। গত ২১ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেন তিনি। হুমায়ুন কবির জানান, ‘হামলার দিন সকালে উপাচার্য শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং করেন। সেখানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করার বিষয়টি জানান এবং যে কোনোভাবে আন্দোলন থামানোর কথা বলেন। এসময় উপাচার্য আরও বলেন, প্রয়োজনে স্থানীয়দের দ্বারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করাবেন।’

এদিকে হামলায় প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হলেও অজ্ঞাত কারণে মামলা করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেই বিশ্ববিদ্যালয় তার দায়িত্ব পালন করেছে এবং অভিযোগ রয়েছে তদন্ত কমিটির সকলেই উপাচার্যের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। এদিকে মামলা কেনো করা হয়নি এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. নুরুদ্দীন আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি জানান, এ বিষয়ে তারা আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নিবেন।

উল্লেখ্য, দুর্নীতি, নারী কেলেংকারী, বাক স্বাধীনতা হরণ সহ ১৪ কারণে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।