বিজ্ঞানচর্চায় সায়েন্স ক্লাবের সাফল্যের চার বছর
আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কাছে বিজ্ঞান এক ভয়ঙ্কর বিষয়ের নাম। মনস্তাত্ত্বি এই ভীতি থেকেই শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান শেখায় অনেকটা অমনোযোগী হয়ে পড়ে। তবে বিজ্ঞান যে ভীতিকর বা অধরা কোন বিষয় নয় সেটি শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে ‘কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি সায়েন্স ক্লাব’। বর্তমানে এ ক্লাবের সদস্য সংখ্যা প্রায় নয়’শ এরও বেশী।
২০১৩ সালের শুরুর দিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিজ্ঞানপ্রেমী শিক্ষার্থীদের হাত ধরে এ সংগঠনটির পথচলা শুরু হয়। প্রথম দিকে কিভাবে অনেক শিক্ষার্থীকে একসাথে করা যায়, কিভাবে বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া যায়, কিভাবে স্কুল কলেজের ছাত্রদের মাঝে বিজ্ঞানভীতি দূর করা যায় এ নিয়েই চলত আড্ডার আসর।
২০১৩ সালে কার্যক্রম শুরু করলেও কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি সায়েন্স ক্লাব আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ২০১৫ সালের ১লা সেপ্টেম্বর। যাত্রা শুরুর দুই বছর পর ২০১৭ সালের ১২ জুলাই সংগঠনটিকে স্বীকৃতি প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়েও রয়েছে সংগঠনটির অন্তর্ভুক্তি। বিজ্ঞান আড্ডা, স্কুলে স্কুলে বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ, পাঠচক্র, চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ বিজ্ঞান ভিত্তিক বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে সংগঠনটি চার বছর পেরিয়ে পঞ্চম বর্ষে পদার্পণ করেছে।
১লা সেপ্টেম্বর সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হলেও অতিথিরা সময় না দেয়ায় সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) আনন্দ শোভাযাত্রা, বৃক্ষরোপণ এবং কেক কাটাসহ নানা আয়োজনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেছে সংগঠনটির সদস্যরা। এসময় প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, ‘বৃক্ষরোপণের পর এগুলোর নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা সবকিছুতে এগিয়ে যাক।’ এসময় তিনি সায়েন্স ক্লাবের সাফল্য কামনা করেন।
চলতি বছর দেশের ৪র্থ মানব রোবট তৈরী করে তাক লাগিয়ে দেয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাবের চার তরুণ। রোবটটির নাম দেয়া হয় সিনা। রোবটটি বানাতে খরচ পড়ে মাত্র ৩৭ হাজার টাকা। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) অর্থায়নে রোবটটি তৈরী করতে কাজ করেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী সঞ্জিত মন্ডল, একই বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাঈদুর রহমান, আইসিটি ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জুয়েল নাথ এবং নিয়াজ আল মাসুম। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী বিভিন্ন স্থানে তিনটি স্কুলে বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ক্লাবটি। নিজস্ব প্রোজেক্টরে দেশি বিদেশী মোট পাঁচটি চলচ্চিত্র দেখনো হয়েছে, যা ছিলো কুমিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর জন্য উন্মুক্ত।
এছাড়াও নাসা স্পেস এপস চ্যালেঞ্জ ২০১৭’তে কুমিলা ইউনিভার্সিটি সায়েন্স ক্লাবের দুটি টিমের একটি ২য় এবং অন্যটি ১০ম স্থান অর্জন করে। একই বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইন্স ফেস্টিভাল এর পোস্টার প্রেজেন্টেশন এ তৃতীয় হওয়ার স্থান অর্জন করে সংগঠনটি। এসব বিজ্ঞানভিত্তিক কাজের পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ এবং ক্যাম্পাস পরিষ্কারের মত সামাজিক কাজও করে আসছে সংগঠনের সদস্যরা।
ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তন্ময় কুমার সরকার বলেন, ‘আমাদের সংগঠন ৫ম বর্ষে পদার্পণ করেছে। কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি সায়েন্স ক্লাব, ত্যাগ আর ভালোবাসা দিয়ে গড়া একটি বাগান। সবার সহযোগীতায় আমরা চলতি বছর রোবট তৈরি করেছি। ভবিষ্যতেও আরও চমক নিয়ে আসবে সদস্যরা।’
ক্লাবটির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অর্থ এবং কক্ষ বরাদ্ধ নেই বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন ক্লাবের সভাপতি জোহায়ের তানভীর রাফি। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে নিজেদের পকেটের টাকায় সংগঠন চালিয়েছে সদস্যরা। এখনও শিক্ষকদের সহায়তা এবং নিজেদের অর্থে সংগঠন চলছে। প্রশাসন থেকে বরাদ্ধ নেই। কোথাও বসে কাজ করবো এমন কোন রুমও নেই।’