শিক্ষক সংকট, ৬ বছরেও শেষ হয়নি অনার্স কোর্স
৪ বছরের অনার্স কোর্স ৬ বছরেও শেষ করতে পারেনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ। ৬ মাসের সেমিস্টার শেষ করতে লাগছে ১০ মাস। এ জন্য শিক্ষক, ক্লাশরুম এবং ল্যাব সংকটকেই প্রধান হিসেবে দায়ী করছে বিভাগটি।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে বিভাগটির যাত্রা শুরু হলেও এপর্যন্ত ২০১০-১১ এবং ২০১১-১২ সেশনের এই ২টি ব্যাচ দুই বছরের বেশি জট নিয়ে বের হয়েছে। এর পরে ২০১২-১৩ সেশনের ব্যাচটি এখনো মাস্টার্স শেষ করতে পারেনি। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম ব্যাচের শিক্ষার্থী হয়েও এখনো মাস্টার্স প্রথম পর্বের পরীক্ষাও শেষ করতে পারেননি। এনিয়ে চাপা ক্ষোভ এবং হতাশায় জর্জরিত তারা।
এরপরের ব্যাচ ২০১৩-১৪ সেশনের তারাও অনার্স শেষ করতে পারেননি। নিয়ম অনুযায়ী ২০১৭ সালে তাদের অনার্স কোর্স শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তারা এবার অনার্স চতুর্থ বর্ষ ১ম সেমিস্টারের পরীক্ষা দিবেন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে নবীন ব্যাচ ২০১৮-১৯ সেশন শুরু হওয়ার প্রায় ৯ মাস চলে গেলেও তাদের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা কেবল শুরু হয়েছে। যদিও এই সেশনের অন্যান্য সকল বিভাগের ১ম সেমিস্টারের পরীক্ষা জুন এবং জুলাইয়ের মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।
বিভাগে খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, বিভাগটিতে শিক্ষক সংখ্যা ৯ জন হলেও বর্তমানে বিভাগে আছেন ৬জন শিক্ষক আর বাকি ৩ শিক্ষক শিক্ষাছুটিতে আছেন। এদিকে বিভাগটিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৪শ ২০ জন। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী প্রতি ১৬জন শিক্ষার্থীর জন্য ১জন শিক্ষক বরাদ্দ থাকলেও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে রয়েছে ৭০ জনে একজন শিক্ষক। বিভাগটিতে যেমনিভাবে রয়েছে ক্লাশরুমের সংকট তেমনিভাবে ল্যাবের সংকটও চরম আকার ধারণ করেছে।
বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ক্লাস করার জন্য বেশিরভাগ সময় তাদেরকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অন্য ক্লাস শেষ হওয়ার অপেক্ষায়। মাত্র ২টি ক্লাশরুম এবং ২টি ল্যাব বিভাগটির জন্য দেওয়া হয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে নগন্ন। এদিকে প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের ল্যাবের ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবহারিক সকল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
বিভাগটির ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, অনেক বড় আশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। কিন্তু সেই আশায় এখন গুঁড়ে বালি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইমে ভর্তি হয়ে জীবন থেকে এক বছর এমিনিতেই চলে গেছে উপরন্তু বিভাগের নানান সমস্যা আর সংকটের কারণে যে জটের সৃষ্টি হয়েছে তা আমার হতাশা আরো বৃদ্ধি করেছে। এখানে অনার্স শেষ করতেই ৬ বছরেরও বেশি সময় লাগছে যা একজন শিক্ষার্থীর জন্য হতাশা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনা। পড়াশোনা শেষ করতেই যেখানে বয়স শেষ হচ্ছে সেখান থেকে বের হয়ে চাকরির প্রস্তুতি নিতেই আর বয়স থাকছে না। এতদিনের সকল পরিশ্রম আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের খোয়া যাচ্ছে।
২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সময়ের অস্থিতিশীল পরিবেশ, বিভিন্ন আন্দোলন এবং কিছু শিক্ষকের অবহেলা আমাদের জীবন থেকে মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট করে দিচ্ছে। শিক্ষক স্বল্পতা, ক্লাশরুম, ল্যাবসহ আরো অন্যান্য সকল সংকটের কারণে বিভাগে শোচণীয় অবস্থা যাচ্ছে।
তিনি আরো জানান, ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের লিখিত ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি প্রায় চারমাসের বেশি সময় হচ্ছে। এপর্যন্ত ল্যাব ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করতে পারিনি। শিক্ষকদের সাথে কথা বললে তারা হবে হবে বলে সময়গুলো কাটাচ্ছেন এবং কর্মচারীদের আন্দোলনকে দায়ী করেন। তবে আগামী সপ্তাহের মধ্যে ল্যাব ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকেরা।
এবিষয়ে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট, ক্লাশরুম সংকট, শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের মাঝে অস্থিরতা এসবকিছুই মূলত সেশনজটের মূল কারণ। অন্যদিকে দীর্ঘদিন থেকে প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তিদের অনুপস্থিতির কারণে প্রশাসনের যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে তা শুধু পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রমে বিরুপ প্রভাব ফেলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংকটের ধরণ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই সেশনজটের মতো খারাপ অবস্থা থেকে উত্তোরণ সম্ভব হবে।”