বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি: ভুল উত্তর ঠিক করতে মার্কিন অভিনেত্রীর ঘুষ
বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়ের ভর্তি কেলেঙ্কারির ঘটনায় গত দুই বছর আগে মার্কিন অভিনেত্রী ফেলিসিটি হাফম্যানকে ১৪ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত। দুই বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য স্যাট পরীক্ষায় মেয়ের ভুল উত্তরগুলো শুদ্ধ করতে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার (১২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা) ঘুষ দিয়েছিলেন বলে আদালতের কাছে স্বীকার করেছেন তিনি।
শনিবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, ‘দ্য ডেসপারেট হাউসওয়াইভস’ তারকা ফেলিসিটি হাফম্যানকে কারাদণ্ড ভোগের পাশাপাশি ২৫০ ঘণ্টা সমাজসেবা দিতে হবে এবং ৩০ হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হবে। ছয় সপ্তাহের মধ্যে হাফম্যানকে কারাগারে আসতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় মা-বাবা, অ্যাথলেটিক কোচসহ ৫০ জন অভিযুক্ত হয়েছেন। তবে কারও সন্তানকে অভিযুক্ত করা হয়নি।
অবশ্য দণ্ড পাওয়ার পর বিচারককে লেখা এক চিঠিতে তিনি তাঁর কর্মকাণ্ডের জন্য মেয়ে, স্বামী ও শিক্ষাসমাজের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
আদালত রায় ঘোষণার পর বিচারককে লেখা চিঠিতে ক্ষমা চেয়ে হাফম্যান বলেন, ‘আমার কর্মকাণ্ডের পক্ষে কোনো যুক্তি বা অজুহাত হয় না। আমি আবারও আমার মেয়ের কাছে, স্বামীর কাছে, পরিবারের কাছে এবং শিক্ষাসমাজের কাছে ক্ষমা চাই। বিশেষ করে আমি ক্ষমা চাই শিক্ষার্থীদের কাছে, যারা প্রতিনিয়ত কলেজে ভর্তি হতে কঠোর পরিশ্রম করছে এবং তাদের বাবা-মায়ের কাছে, যাঁরা সন্তানদের জন্য প্রচণ্ড ত্যাগ স্বীকার করছেন।’
বিচারক ইন্দিরা তালওয়ানি বলেন, তিনি মনে করেন, হাফম্যান তাঁর কর্মকাণ্ডের পুরো দায়ভার নিয়েছেন। কিন্তু ‘ভালো মা হতে চাওয়া (এই কর্মকাণ্ডের জন্য) কোনো অজুহাত হতে পারে না।’
হাফম্যানের মতো আরও কয়েকজন মা-বাবার বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়া, পরীক্ষার ফল পাল্টানো, এমনকি আবেদনপত্রের সঙ্গে সন্তানের খেলাধুলায় পারদর্শিতার মেধা তুলে ধরতে ভুয়া ছবি দেওয়ার অভিযোগের তদন্ত চলছে।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন, ইয়েল, জর্জটাউন ও স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির মতো অভিজাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্তানদের ভর্তি করার জন্য ওই সব মা-বাবা জালিয়াতি করেছেন। তবে এই কেলেঙ্কারির ঘটনায় হাফম্যানই দণ্ডপ্রাপ্ত প্রথম অভিভাবক।
কারাদণ্ডের পরিবর্তে এক বছরের নজরদারি, ২৫০ ঘণ্টা সমাজসেবা ও ২০ হাজার ডলার জরিমানার আরজি করেছিলেন হাফম্যানের আইনজীবীরা। তবে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা গত সপ্তাহে এক চিঠিতে আবেদন করেছিলেন, ‘নজরদারি বা গৃহবন্দী (হলিউড হিলসে হাফম্যানের বিশালাকারের পুলসহ বাড়ি) অর্থপূর্ণ শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে না বা এ ধরনের অপরাধ থেকে অন্যদের বিরত রাখতে পারে না।’
এদিকে বিচারককে লেখা চিঠিতে হাফম্যান দাবি করেছেন, তাঁর মেয়ে এই বিষয়ে কিছু জানত না। এখন বিষয়টি জেনে মেয়ে ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে কথা বলে মনে করছি যে একজন ভালো মা হওয়ার বেপরোয়া মনোভাব থেকে এটা করেছি। মেয়ের জন্য একটি ভালো সুযোগ তৈরি করতে করেছি। আমার মেয়ে (এখন) আমার দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে যখন জিজ্ঞেস করল, “কেন তুমি আমার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারলে না? কেন তুমি ভাবলে যে আমি নিজে তা করতে পারব না?” তার এসব প্রশ্নের যথাযথ কোনো জবাব নেই আমার কাছে। আমি শুধু বলতে পেরেছি, আমি দুঃখিত।’