১০ মাসেও সেমিস্টার শেষ হচ্ছে না, হতাশ ও ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ডেভলপমেন্ট জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ২০১৪-১৫ এবং ২০১৫-১৬ সেশনের ছয় মাসের সেমিস্টার দশ মাসেও শেষ হচ্ছে না। এনিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা আর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিভাগটিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৪-১৫ সেশনের ৫ম সেমিস্টারের পরীক্ষা ২২শে নভেম্বর ২০১৮ শেষ হলেও প্রায় দশ মাসে এখনো সেই সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশ করেনি বিভাগটি। এদিকে এই ব্যাচের ফলাফল প্রকাশ করতে না পারায় পরের ব্যাচের পরীক্ষার সময় নির্ধারণ হচ্ছে না। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ৪র্থ সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ হয়েছে ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর। সেই পরীক্ষার রেজাল্ট হয়েছে ২৩শে জুন ২০১৯। এরপর ৫ম সেমিস্টারের জন্য ফরম ফিলাপ হয়েছে ৩০ জুলাই ২০১৯। ফরম ফিলাপ করার প্রায় ৩৩ দিন পার হলেও এখনো পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করতে পারেনি বিভাগটি।
বিভাগটিতে মোট ৭টি ব্যাচে এখন শিক্ষার্থী আছে ৪৫৫ জন। খবর নিয়ে জানা গেছে, বিভাগটির প্রতিটি ব্যাচে গড়ে প্রায় দশ মাস করে সেমিস্টার চলছে। ২০১১-১২ সেশনে বিভাগের যাত্রা শুরু হলেও এ পর্যন্ত বের হতে পেরেছে মাত্র একটি ব্যাচ। এরপরের ২০১২-১৩ সেশনের ব্যাচ এখনো মাস্টার্স ২য় সেমিস্টারেই রয়েছেন। পরের ব্যাচ ২০১৩-১৪ ব্যাচ রয়েছে ৪র্থ বর্ষ ২য় সেমিস্টার, ২০১৬-১৭ ব্যাচের চলছে ২য় বর্ষ ২য় সেমিস্টার, ২০১৭-১৮ ব্যাচ ২য় বর্ষ ১ম সেমিস্টারে এবং ২০১৮-১৯ ব্যাচ এখনো ১ম বর্ষ ১ম সেমিস্টারেই রয়ে গেছে।
বিভাগের এই দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জীবন নিয়ে হতাশা আর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। বিভাগের শিক্ষকদের অবহেলাকে দায়ী করে তারা জানান, এভাবে করে আমাদের সময়গুলো নষ্ট করার কোন মানে হয়না শিক্ষকদের। তারা চাইলেই আমাদের ক্লাস এবং পরীক্ষাগুলো নিয়মিত নিয়ে আমাদেরকে সঠিক সময়ে বের করে দিতে পারেন। কিন্তু তারা সেটা করছেন না।
২০১৪-১৫ সেশনের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে তারা জানান, ‘১০ মাসেও এখনো সেমিস্টার শেষ করতে পারিনি। তাই এখন বলার মতো কোন ভাষা নেই। আসলে সহ্য করতে করতে আমাদের সহ্য ক্ষমতা অনেক বেশি হয়ে গেছে। ২০১৪-১৫ সেশনে ভর্তি হয়েও এখনো ৩য় বর্ষ শেষ করতে পারিনি। যেখানে অন্য বিভাগের বন্ধুরা মাস্টার্সও প্রায় শেষ করবে। শুধু এটা ভেবেই খারাপ লাগছে যে, পড়াশোনা শেষ করার আগেই চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে।’
২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ফরম ফিলাপ করার প্রায় ৩৩ দিন পার হলেও এখনো আমাদের পরীক্ষার সময়সূচী প্রকাশ করা হচ্ছে না। স্যারদের সাথে কথা বললে তারা কর্মচারী আন্দোলনের কথা বলে পাশ কাটিয়ে যায়। অথচ অন্যান্য সব ডিপার্টমেন্টের ক্লাস, পরীক্ষা এবং ফলাফল সঠিক সময়েই হচ্ছে। স্যারদের এমন অবহেলা আমাদের জীবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোকে নষ্ট করছে।’
এ বিষয়ে বিভাগীয় প্রধান দেলোয়ার হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি শিক্ষক স্বল্পতা এবং ক্যাম্পাসে চলমান আন্দোলনকে কারণ হিসেবে দেখান। তিনি বলেন, ‘কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে একটি ব্যাচের পরীক্ষার ফলাফল দিতে পারছি না। যার কারণে পরের একটি ব্যাচের পরীক্ষা আটকে গেছে। তবে খুব শীঘ্রই ফলাফল প্রকাশ করে তাদের পরীক্ষার সময়সূচীর নোটিশ দেওয়া হবে। তিনি আরো জানান, নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে গুণগত মান ঠিক রেখে বিভাগটিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। আশা করি, খুব দ্রুত সময়ে সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবো।’