রাতভর ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, দিনে অচল চবি
আবাসিক হল দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ। শনিবার দিবাগত রাতের সংঘর্ষের এই ঘটনায় ৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে এ ঘটনার রেশ ধরে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ। ফলে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। পাশাপাশি ক্যাম্পাস জুড়েই বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ।
সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া পক্ষগুলোর মধ্যে চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারী। অপর পক্ষ ‘বিজয়’ সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াসের অনুসারী। তবে উভয়পক্ষই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া একটি গ্রুপ ‘বিজয়’। ইতোমধ্যে ট্রেনের হোসপাইপ কেটে বন্ধ করে দিয়েছে ট্রেন চলাচল। একইসঙ্গে সুপার লাগিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে চবি শিক্ষকদের যাতায়াতের বাস।
জানা যায়, শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলে বিজয় গ্রুপের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা চলাকালেই বিজয় গ্রুপের দখলে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সোহরাওয়ার্দী হলের বিজয় গ্রুপের কক্ষগুলো দখলে নেয় সিএফসির কর্মীরা। এদিকে খরবর পেয়ে বিষয়টি মীমাংসা করতে সোহরাওয়ার্দী হলে এলে বিজয় গ্রুপের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াসকে মারধর করেন সিএফসির কর্মীরা। এসময় রামদা দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ বিজয় গ্রুপের নেতা-কর্মীদের।
এদিকে মারধরের বিষয়টি জানতে পেরে আলাওল হল থেকে বিজয়ের নেতাকর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হলের দিকে গেলেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে উভয়পক্ষ। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি এক রাউন্ড গুলির শব্দও শোনা যায়। এ ঘটনায় বিজয় গ্রুপের অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন।
আহতরা হলেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১০-১১ সেশনের শিক্ষার্থী ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ওবায়দুর রহমান লিমন, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রিয়াম রায় প্রান্ত ও লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের নিলয় হাসান এবং পরিসংখ্যান বিভাগের মাহফুজুর রহমান।
এদের মধ্যে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় মোহাম্মদ ইলিয়াসকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া বাকিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এদিকে মধ্যরাতে ‘হামলার শিকার’ হয়ে রোববার সকাল থেকেই অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট পালন করছে বিজয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা। ধর্মঘটের অংশ হিসেবে রোববার সকালে বটতলী স্টেশন থেকে দুইজন লোকমাস্টারকে অপহরণ করেন তারা। অবশ্য পরে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও শাটল ট্রেনের হোসপাইপও কেটে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে থাকা শিক্ষকদের বাসগুলোর চাকা পাংচার ও গাড়ির তালায় সুপার গ্লু লাগিয়ে যাতায়াত অচল করে দিয়েছেন ধর্মঘট পালনকারীরা। ধর্মঘটের কারণে সকল বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ছিলো। সারাদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেন ও শিক্ষক বাস চলাচল করেনি।
সোহরাওয়ার্দী হলে মারধরের শিকার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াসের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সিএফসি নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল। তাদের দাবি, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কারণেই তাকে মারধর করা হয়েছে।
এদিকে বিজয় গ্রুপের নেতা ও চবি ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচএম তারেকুল ইসলাম বলেন, ইলিয়াস ভাই রেজাউল হক রুবেলকে বরণ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সংখ্যা কম হওয়াতে সিএফসির কর্মীরা তাদেরকে মারধর করে। অথচ রেজাউল হক রুবেলও সেখানে উপস্থিত ছিলো।
তিনি বলেন, তারাই প্রথমে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বের হয়েছে এবং গুলিও করেছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নিকট রুবেলকে বহিষ্কার করার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আমাদের অবরোধ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
ইলিয়াসের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, শাখা ছাত্রলীগের গত কমিটির একজন পদধারী নেতা ইলিয়াস। তার ব্যাপারে এমন বক্তব্য মানানসই যুক্তিসঙ্গত নয়৷
এদিকে সিএফসি গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, বিজয় গ্রুপের ইলিয়াস, মাহফুজ ও ফারুক এরা পরিকল্পিতভাবেই আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। নতুন কমিটি আসার পর থেকেই তারা বিভিন্ন ভাবে ঝামেলা করার চেষ্টা করছে। এমনকি আলাওল হল থেকে তারা গুলিও ছুঁড়েছে।
তিনি আরও বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরির সঙ্গে ইলিয়াসের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে৷ আমরা গোপন সূত্রে খবর পেয়েছি, শাটল ট্রেনে সে হিজবুত তাহরির পোস্টার টাঙিয়েছে। এমনকি সে ঝামেলা করার জন্যই সে ক্যাম্পাসে এসেছে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মীমাংসা করে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছি।