২৪ আগস্ট ২০১৯, ১৮:৫৭

জাবিতে সাংবাদিক লাঞ্ছনার ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম কর্তৃক নিজ কার্যালয়ে ক্যাম্পাসে কর্মরত দুই সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশসেরা ক্যাম্পাসগুলোর সাংবাদিক সংগঠন সমূহ। এছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও এ মর্মে বিবৃতি দিয়েছে।

গত ২২ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সাক্ষাতকার নিতে ভিসি কার্যালয়ে যান দৈনিক প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মাইদুল ইসলাম ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শরীফুল ইসলাম সীমান্ত। দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর উপাচার্যের সাক্ষাত পান সাংবাদিকরা।

প্রাথমিক আলাপচারীতার এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের দুই কোটি টাকা ছাত্রলীগের মধ্যে বণ্টনের অভিযোগ সম্পর্কে উপাচার্যের বক্তব্য জানতে চান তারা। এ প্রশ্ন করামাত্র উপাচার্য সাংবাদিকদের উপর প্রচণ্ড রেগে দাঁড়িয়ে যান তিনি। এমন প্রশ্ন করার সাহস কোথায় পেল বলে সাংবাদিকদেরকে ধমকাতে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে উপাচার্য তাদের বিভাগীয় সভাপতিকে ডেকে পাঠান এবং তাদের ছবি তুলে রাখার নির্দেশ দিলে পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুল আলম তাদের ছবি তুলে রাখেন।

সহকর্মীদের প্রশাসন কর্তৃক লাঞ্ছিত ও অপমানিত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সভাপতি প্লাবন তারিক ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মাহমুদ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রশাসনের বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগ উঠলে সে সম্পর্কে প্রশ্ন করার পূর্ণ অধিকার সাংবাদিকদের রয়েছে। প্রশ্ন করার কারণে উপাচার্য কোনভাবেই সাংবাদিকদের উপর রেগে যেতে পারেননা।’

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রশাসন জাহাঙ্গীরনগরের ইতিহাস ভুলে গেছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বৈরাচারী কায়দা বেছে নিয়ে কেউ কোনদিন টিকে থাকতে পারে নি। জাতির জনকের নাম ভাঙ্গিয়ে দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের টাকা লুটপাটের যে মহাযজ্ঞে তারা লিপ্ত হয়েছেন এর সমুচিত জবাব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেবে। এই অনিয়ম অপরিকল্পনার পথ পরিহার না করলে অচিরেই মসনদ ধ্বসে পড়বে। সাংবাদিকদের হেনস্তা করে উপাচার্য যে একরোখা আচরণ করেছেন তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও লজ্জার। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করে তিনি টিকে থাকতে পারবেন না।’

এ ব্যাপারে জাবি শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মাহাথির মুহাম্মদ এবং সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত দে একযুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ‘এই ধরনের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যুক্ত থাকবার অভিযোগ গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গায়ে কালি লেপন করে।উপাচার্য যখন এই ঘটনা নিয়ে প্রশ্নের কোনো সদুত্তর না দিয়ে উল্টো প্রশ্নকর্তাকেই লাঞ্ছিত করেন তখন অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগই ভিত্তি পায়।’

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের নেতৃবৃন্দ এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কর্তব্যরত সাংবাদিকদের সাথে এমন আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এছাড়া প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ ভাগবাটোয়ারা বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও অপপ্রচারের দোহাই দিয়ে তৈরি ছাত্র-শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ অনুযায়ী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকির সম্মুখীন হওয়াকে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অশনিসংকেত মনে করে ছাত্র ইউনিয়ন।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চ এ ঘটনাকে গণতান্ত্রিক চরিত্রের প্রতি হুমকি স্বরূপ চিহ্নিত করে লিখিত বিবৃতিতে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত দুইজন সাংবাদিক উপাচার্যকে অর্থ আত্মসাৎ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কেবল তাদেরকে লাঞ্ছিতই করেননি উপরন্তু তাঁর প্রশাসনের তৈরি করা ‘ছাত্র শৃঙ্খলা বিধি’র কালা কানুন মোতাবেক শাস্তি প্রদানেরও হুমকি দিয়েছেন। এই আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চরিত্রের প্রতিই হুমকি স্বরূপ।

এদিকে সাংবাদিক লাঞ্ছনার এ ঘটনায় দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবসহ অন্যান্য ক্যাম্পাসের সাংবাদিক সংগঠন গুলো এ মর্মে পৃথক পৃথক বিবৃতি দেন।

কুবিসাস
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র
জবি সাংবাদিক সমিতি
জাবিসাস
চবিসাস
ছাত্র ইউনিয়ন
কুবি প্রেস ক্লাব

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে এহেন অপেশাদার এবং অশোভনমূলক আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিভাগীয় সভাপতিকে ডেকে আনা এবং সাংবাদিকদ্বয়ের ছবি তুলে রাখা চরম অশোভন ও তাদের শিক্ষাজীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম দ্রুত সময়ে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বসে এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার যথাযোগ্য ব্যাখ্যা দিয়ে ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অচিরেই প্রশাসনকে এ ধরণের আচরণ থেকে বেরিয়ে আসার আহবান জানান।