দুই ছাত্রী নিবাসসহ ৩ হোস্টেল খুলতে জেলা প্রশাসনের সবুজ সংকেত
দুটি ছাত্রীনিবাস ও হিন্দু হোস্টেল নামে পরিচিত অমুসলিম ছাত্রদের একটি ছাত্রাবাসসহ চট্টগ্রাম কলেজের ৩টি হোস্টেল চালুকরণে চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসনের সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর ইতোমধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসন। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবু হাসান সিদ্দিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুটি ছাত্রী নিবাসের মধ্যে রয়েছে- একশ আসনের নতুন নির্মিত জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রী নিবাস। অপরটি পুরনো খাদিজাতুল কোবরা (রা.) ছাত্রী নিবাস। এটিরও আসন সংখ্যা একশ। আর নতুন করে নির্মিত অমুসলিম ছাত্রদের হোস্টেলটির নামকরণ করা হয়েছে ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ছাত্রাবাস’। এটিতে ৬০ থেকে ৭০ জন শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পাবে।
জেলা প্রশাসনের এ সবুজ সংকেতের ফলে কলেজটির এ তিনটি হোস্টেল খুব শীঘ্রই চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল হাসান।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে সরেজমিনে পরিদর্শন পূর্বক প্রতিবেদন পাঠানো প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবু হাসান সিদ্দিক বলেন, চট্টগ্রাম কলেজের হোস্টেলসমূহ (তিনটি) খুলে দেয়ার বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে জেলাপ্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর ফরহাদ শামীমকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি কলেজের তিনটি হোস্টেল সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবদেন দাখিল করেন। সরেজমিন পরিদর্শন প্রতিবেদনের আলোকে আমরা মতামতসহ প্রতিবেদনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।
গত ১৭ জুলাই চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনের স্বাক্ষরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়- কলেজের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রী নিবাস (প্রস্তাবিত) সম্পূর্ণ ভাবে প্রস্তুত রয়েছে। খাদিজাতুল কোবরা ছাত্রীনিবাস অবকাঠামোগত দিক থেকে চালুর উপযুক্ত হলেও সামান্য মেরামত ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা প্রয়োজন এবং ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হোস্টেলের (বর্তমান হিন্দু হোস্টেল নামে পরিচিত) আসবাবপত্র উঠানোর কাজ বাকি রয়েছে। সার্বিক পর্যালোচনায় তিনটি হোস্টেলের মধ্যে প্রস্তাবিত জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রী নিবাস সস্পূর্ণভাবে প্রস্তুত থাকায় যেকোন সময়, খাদিজাতুল কোবরা ছাত্রী হোস্টেল মেরামত ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা সাপেক্ষে এবং অপর হোস্টেলটি (বর্তমানে হিন্দু হোস্টেল নামে পরিচিত) আসবাবপত্র উঠানো সাপেক্ষে খুলে দিয়ে সচল করা যেতে পারে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।
এর আগে হোস্টেল তিনটি চালুর বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসনের মতামত চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ২৪ জুন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সরকারি কলেজ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব রনি চাকমার স্বাক্ষরে এ চিঠি দেয়া হয়। যদিও কলেজটির আরো তিনটি ছাত্রাবাস (শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী ও আব্দুস সবুর) খোলার বিষয়ে চিঠিতে ইতিবাচক কোন তথ্য ছিল না। মেরামতের আগে এই তিনটি ছাত্রাবাস চালুকরণ সম্ভব নয় বলে দাবি কলেজ প্রশাসনের। মন্ত্রণালয়ের চিঠিতেও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। সে হিসেবে, ছাত্রদের জন্য মূল হোস্টেল হিসেবে পরিচিত এই তিনটি ছাত্রাবাস বন্ধই থাকছে।
মতামত চেয়ে চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসক বরাবর দেয়া চিঠিতে বলা হয়- চট্টগ্রাম কলেজটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রাচীনতম কলেজ। কলেজটিতে বর্তমানে ছাত্রদের ৪টি ও ছাত্রীদের জন্য ২টি হোস্টেল আছে। কিন্তু ২০১৫ সালে কলেজটির ছাত্ররাজনীতি পরিবর্তনের পর থেকে হোস্টেলগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। অনেকদিন ধরে হোস্টেলগুলো বন্ধ থাকার কারণে হোস্টেলের অনেক কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো মেরামত করার আগে সব হোস্টেল খোলা সম্ভব না। তবে দুটি ছাত্রী হোস্টেল (সামান্য মেরামত সাপেক্ষে পুরণো ‘খাদিজাতুল কোবরা ছাত্রী নিবাস’ এবং নতুন নির্মিত ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রী নিবাস’) ও নতুন করে নির্মিত একটি ছাত্র হোস্টেল (বর্তমানে হিন্দু হোস্টেল নামে পরিচিত) খোলার বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ আবেদন করেছেন। এমতাবস্থায় চট্টগ্রাম কলেজের এই তিনটি ছাত্রাবাস (ছাত্রীদের ২টি ও ছাত্রদের ১টি) খোলার বিষয়ে মতামতসহ প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসককে অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।
জেলাপ্রশাসনের প্রতিবেদনের পর এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন জানিয়ে চট্টগ্রাম কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল হাসান বলেন, আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যেই মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি সংক্রান্ত চিঠি পাবো। আর চিঠি পেলেই এই তিনটি হোস্টেল চালু করা হবে। যদিও দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে অনেক কিছু নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাকি তিনটি হোস্টেল এখনই চালু করা সম্ভব নয় বলে জানান কলেজ অধ্যক্ষ।
প্রসঙ্গত, ছাত্রীদের জন্য নব-নির্মিত ৫ তলা ভবনের জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রী নিবাসটি গত ২৪ মে অনেকটা ঘটা করে উদ্বোধন করা হয়। শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীকে দিয়ে হোস্টেলটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করান কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হলেও চালু করা হয়নি হোস্টেলটি।