২১ জুলাই ২০১৯, ১৭:৪৬

সাংবাদিকদের গুলি করে মারার হুমকির তীব্র নিন্দা আসকের

কুমিল্লা শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের গুলি করে মারার হুমকি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ছাত্রনেতাদের এমন আপত্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ১৯ জুলাই ২০১৯ রাতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতা যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শোয়েব হাসান ও সভাপতি মো. রায়হানের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গণমাধ্যম থেকে আরও জানা যায়, দুই নেতার একজন সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে গিয়ে বলেছেন ‘গুলি করবো। বুলেট সাংবাদিক চেনেনা। সাংবাদিক পেলেই গুলি করে মারব।’ শোয়েব হাসান ইতিমধ্যে রাগের মাথায় এ কথা বলেছেন বলে স্বীকার করেছেন।

আসক মনে করে, এ মন্তব্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। আসক ছাত্রনেতাদের এ ধরনের মন্তব্য ও আচরণে বিস্মিত এবং এমন মন্তব্য অন্যান্য নেতা-কর্মীদের ভুল বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করছে। এমন মন্তব্যের জন্য তাদের অতি দ্রুত সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আসক আহ্বান জানাচ্ছে।

গুলি করব, বুলেট সাংবাদিক চেনে না: ছাত্রলীগ নেতার হুমকি

সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) কর্মরত সাংবাদিকদের গুলি করে হত্যার হুমকি ও লাঞ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতা। শুক্রবার রাত দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এ ঘটনা ঘটে।

ওই দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন, শোয়েব হাসান হিমেল এবং মো: রাইহান ওরফে জিসান। এসময় তারা উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং হত্যার হুমকি দেন।তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার রাত পৌনে দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হল এবং শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মার্কেটিং বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শোয়েব হাসান হিমেল তাদের উদ্দেশ্যে  অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ শুরু করেন। 

এসময় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে কেন এসেছেন বলে চিৎকার করতে থাকেন এবং সেখান থেকে সরে যেতে বলেন। এসময় উপস্থিত সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও যুগান্তর প্রতিনিধি তানভীর সাবিক প্রতিবাদ করলে হিমেল পুনরায় সাংবাদিকদের উদ্যেশ্য করে বলেন, ‘গুলি করবো। বুলেট সাংবাদিক চিনে না, সাংবাদিক পাইলেই গুলি করে মারবো।’

তার সঙ্গে থাকা শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ রাইহান ওরফে জিসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সমকাল প্রতিনিধি আবু বকর রায়হানকে মারার জন্য কর্মীদের নিয়ে তেড়ে আসেন। এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদসহ সিনিয়র নেতারা তাদেরকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন।

সাংবাদিকদের হুমকির বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শোয়েব হাসান হিমেল প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে তিনি বলেন, ‘আমি রাগের মাথায় এটা বলেছি। আমার কাছে কালকে কোন অস্ত্র ছিলো না।’ আরেক ছাত্রলীগ নেতা জিসানকে ফোন দেয়া হলেও পাওয়া যায়নি।

এর আগে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় এক সাংবাদিককে চোখ তুলে নেয়ার হুমকি দেন হিমেল বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হিমেল ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ৫০২ নম্বর কক্ষে মাদকসেবীদের নিয়ে রাতভর মাদক সেবনে মেতে থাকেন বলেও অনেকে জানিয়েছেন।

হলে অবস্থানরত একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘হিমেল তার অনুসারীদের নিয়ে নিয়মিত আসর বসান। তার কক্ষের সামনে দিয়ে হাটলেও নেশাজাতীয় দ্রব্যের গন্ধ পাওয়া যায়।’

এদিকে এ ছাত্রলীগ নেতা গত ১০ এপ্রিল প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সিনিয়র এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করেন এবং তাকেও প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ নিয়ে ১৪ এপ্রিল ছাত্রলীগ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলেও তার বিরুদ্ধে ‘অজানা’ এক কারণে কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

অনেকে অভিযোগ করেছেন, অপর আরেক ছাত্রলীগ নেতা জিসান গভীর রাতে কাজী নজরুল ইসলাম হলের ৫০৬ নম্বর কক্ষে মাদকসেবীদের নিয়ে আসর বসান। কয়েক মাস আগে অতিরিক্ত মদ্যপানে অসুস্থ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালেও যেতে হয়েছে বিতর্কিত এই ছাত্রলীগ নেতাকে। হলের সিনিয়র নেতা-কর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এছাড়াও গত সপ্তাহে বণিকবার্তার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিকে ‘মইরা গেলে কবরে গিয়া হইলেও দুইডা কোপ দিয়া আসমু’ বলে হুমকি দেন। অভিযুক্ত এ দুই ছাত্রলীগ নেতার বিষয়ে সিনিয়র এক ছাত্রলীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘হিমেল আর জিসান নিয়মিতই মাদকে আসক্ত থাকে। বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের ইমেজ ক্ষুন্ন করে দুই হলে এরা মাদকের সাম্রাজ্য খুলে বসেছেন।’

এবিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘সাংবাদিকদের হুমকি বা লাঞ্ছিত করলে তাদের দায় ছাত্রলীগ নেবে না। তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, ‘সাংবাদিকদের হুমকি দেয়া ছাত্রলীগের আদর্শবিরোধী।’ মাদকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশাসন যদি কোন ব্যাবস্থা নেয় সেক্ষেত্রে শাখা ছাত্রলীগ সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।

সার্বিক বিষয়ে প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর পরও সাংবাদিকরা স্বেচ্ছাসেবী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করেন। তাদের সাথে যারা অছাত্রসূলভ আচরণ এবং হুমকি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রসংগঠন, সাংবাদিক ও আমরা সবাই মিলে ব্যবস্থা নেব। শুধু প্রক্টর হিসেবে নয় শিক্ষক হিসেবেও আমি এমন ঘটনার প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছি।’

এবিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।