শৃঙ্খলাবিধি বাতিলের দাবিতে একই ব্যানারে সমিতি-ক্লাব
- জাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০১৯, ০৬:১৪ PM , আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৯, ০৬:১৪ PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দের ব্যানারে শৃঙ্খলাবিধি সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশ ৫ এর (ঞ) ও ৫ এর (থ) ধারা দুটি বাতিলের দাবিতে একসঙ্গে মানববন্ধন করেছে সাংবাদিক সমিতি ও প্রেস ক্লাবের সাংবাদিক নেতাকর্মীরা।
সোমবার বিকেল তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি প্লাবন তারিক, সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মাহমুদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাইয়ান বিন আমিন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনদুটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। এসময় তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি থেকেই কীভাবে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে হয় সেটা শিখতে চেষ্টা করে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত তাদের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা। কিন্তু জাবি প্রশাসন তার পরিবর্তে ছাত্র শৃঙ্খলাবিধিতে বিতর্কিত দুটি ধারা যুক্ত করেন। এ সময় তিনি এ ধারা দুটি বাতিলের দাবি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মাহমুদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাইয়ান বলেন এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ধারা, যা সাংবাদিকদের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে চেপে ধরতে চেষ্টা করবে। অবিলম্বে তিনি ধারা দুটি বাতিলের জোর দাবি জানান।
এসময় প্রেস ক্লাবের আরেক সদস্য জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তচিন্তার বিকাশ এবং লালন-পালনের যথাযথ স্থান। এই উপধারা দুটি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ভীতি ও শঙ্কা তৈরি করবে, যা অশুভ। যার মাধ্যমে ক্যাম্পাসে কর্মরত সংবাদকর্মীদের কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত করবে এবং সাংবাদিকরা নিগ্রহের শিকার হতে পারেন।
সাংবাদিক সমিতির সভাপতি প্লাবন তারিক বলেন ধারা দুটি সংযোজন করে প্রশাসন কর্তৃত্বপরায়ণ মানসিকতার জানান দিচ্ছে। এটা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার গণমাধ্যমকর্মী ও প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের থামিয়ে দেওয়ার প্রয়াস। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মহান প্রতিষ্ঠানে এমন নিবর্তন‚ লক নীতিমালা লজ্জাকর। প্রশাসনকে অবশ্যই এটি বাতিল করতে হবে।
এছাড়াও মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন এখানে আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রতিধ্বনি দেখতে পাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব নিবর্তন‚ লক তৎপরতা রয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অভিব্যক্তিকে এটা সংকুচিত করবে। যেহেতু প্রশাসন তাদের মতো করেই সত্য-অসত্য প্রতিপাদন করবে। ফলে এটার অপব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদার বলেন এই উপধারা দুটি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ভীতি ও শঙ্কা তৈরি করবে, যা শুভ নয়। প্রশাসন কোনোদিন এভাবে শিক্ষার্থীদের দমিয়ে রাখতে পারে নি, পারবেও না।
সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ জাবি শাখার আহবায়ক শাকিলুজ্জামান বলেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো সাংবাদিককে শাস্তি দিতে পারে না। যদি কেউ ‘মিথ্যা’ কিংবা ‘বিকৃত’ তথ্যে প্রকাশ করেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত প্রচলিত আইনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো।
মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মী।
এদিকে শৃঙ্খলাবিধি বাতিলের দাবিতে সমিতি-ক্লাবের সাংবাদিকবৃন্দের একই ব্যানারে মানববন্ধন প্রেস ক্লাব ও সাংবাদিক সমিতির একতা ও সৌহার্দপূর্ন সম্পর্ক জাহাঙ্গীরনগরে সাংবাদিকতাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে বলে মনে করছে সংগঠনদুটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
প্রসঙ্গত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে থেকে জানা যায় ২০১৬ সালে উচ্চ আদালত এক রায়ের পর্যবেক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা বিধিকে ‘দুর্বল ও সেকেলে’ উল্লেখ করে তা হালনাগাদের পরামর্শ দেয়। শৃঙ্খলা বিধির প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জন করতে ওই বছরের ১৬ মে তৎকালীন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবুল হোসেনকে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়। ওই কমিটির হালনাগাদ করা শৃঙ্খলা বিধি গত ৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় অধ্যাদেশ হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে।
অধ্যাদেশের ৫ এর (ঞ) নং ধারায় বলা হয় অসত্য বা তথ্য বিকৃত করে বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত কোনো সংবাদ বা প্রতিবেদন স্থানীয়/জাতীয়/আন্তর্জাতিক প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক সংবাদ মাধ্যমে/সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ/প্রচার করা বা উক্ত কাজে সহযোগিতা করতে পারবে না।
৫ এর (থ) নং ধারায় বলা হয় কোনো ছাত্র-ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর উদ্দেশে টেলিফোন, মোবাইল ফোন, ই-মেইল, ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোনো অশ্লীল বার্তা বা অসৌজন্য‚ লক বার্তা প্রেরণ অথবা উত্ত্যক্ত করতে পারবে না।
অধ্যাদেশ মতে, ধারা দুটির ব্যত্যয় ঘটলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের চোখে ‘অসদাচরণ’ বলে গণ্য হবে। এজন্য লঘু শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা, সতর্কীকরণ এবং গুরুতর শাস্তি হিসেবে আজীবন বহিষ্কার, বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার, সাময়িক বহিষ্কার ও পাঁচ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে যেকোনো পরিমাণ জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতেই ধারাদুটি যুক্ত করা হয়েছে। তারা প্রশ্ন তুলছেন যে ধারা দুটিতে উল্লেখিত ‘অসত্য, তথ্য বিকৃত’ এবং অশ্লীল বা অসৌজন্য‚লক বার্তা প্রেরণ অথবা উত্যক্ত করার সংজ্ঞা নির্ধারণ করবেন কে? এছাড়া এই ধারা দুটির মাধ্যমে স্বাধীন সাংবাদিকতা বাঁধার মুখে পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন গণমাধ্যম কর্মীরা।