অনশন ভাঙলো শিক্ষার্থীরা, ৭ দফার ব্যাখ্যা দিলো জবি প্রশাসন
ফলের জুস পান করিয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সেলিম ভূঁইয়া। সোমবার সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ৭ দফা দাবি মেনে নিয়ে অনশন ভাঙান ট্রেজারার। এর আগে বিকাল ৫টা নাগাদ প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদ অনশনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে আসেন। এরপর তিনি অনশনরত শিক্ষার্থীদের ট্রেজারের কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে আলোচনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি মেনে নিলে শিক্ষার্থীরা অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে সম্মত হন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ( জকসু) সহ ৭ দফা দাবিতে আন্দোলনের ৮ম দিন শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রোববার সকালে ৭দফা দাবিতে অনশনে বসে বিভিন্ন বিভাগের ১১জন শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ৭ দফার বিষয়ে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বক্তব্য জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর থেকে রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ( জকসু) বিষয়ে বলা হয়েছে, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. সরকার আলী আক্কাস-কে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি-কে আগামী ৪৫ (পয়ঁতাল্লিশ) কার্যদিবেসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনের জন্য সুপারিশ প্রদান ও ‘জকসু’ গঠণতন্ত্র প্রণয়নে অনুরোধ করা হয়েছে। কমিটি’র সুপারিশ অনুযায়ী ‘জকসু’ গঠণতন্ত্র প্রণয়ন করে বিশেবিদ্যালয়ের আসন্ন প্রথম সমাবর্তন শেষে নির্বাচনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলোর বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রতিটি রুটে বাসের সংখ্যা দ্বিগুণ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে। ছাত্রী হলের বিষয়ে বলা হয়েছে, নির্মাণ কাজের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। হলটি আগামী ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯ এর মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হবে। ক্যান্টিনের খাবারের মান ইতোমধ্যেই বৃদ্ধি করা হয়েছে, প্রয়োজনীয় সংষ্কার কাজও সম্পন্ন হয়েছে।
এবিষয়ে আন্দোলনের সমন্বয়াক রাইসুল ইসলাম নয়ন বলেন, আমাদের দাবি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস রিলিজ দিয়েছে, আমরা অনশন ভেঙেছি। আগামীকাল আন্দোলনের পরবর্তী স্টেপ সম্পর্কে আমরা আমাদের বক্তব্য জানাবো।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি নিয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার পরে পরেই আমরা সে অনুযায়ী কাজ শুরু করে দিয়েছি। ক্যান্টিন সংস্কার করে খাবারের মান বাড়িয়ে দাম কমিয়েছি, গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের যে দাবি সেদিকেও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। এছাড়া নতুন ক্যাম্পাসের জমি অধিগ্রহণের জন্যও কাজ চলছে।”
উল্লেখ্য, ৭দফা দাবিতে রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে অনশনে বসেন বিভিন্ন বিভাগের ১১ শিক্ষার্থী। এর আগে ৭ দফা দাবিতে গত ১জুলাই উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেয় শিক্ষার্থীরা। এরপর ৪ জুলাই উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করেন তারা ।
শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে রয়েছে, সাত দিনের মধ্যে ক্যান্টিনের খাবারের দাম কমানোর দাবি, এক মাসের মধ্যে বাসের ডাবল শিফট চালু, সাত দিনের মধ্যে জকসু আইনের খসড়া করে আগামি চার মাসের মধ্যে জকসু নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান, দুই মাসের মধ্যে ছাত্রী হল চালুর দাবি, শিক্ষক নিয়োগে কমপক্ষে ৭০% জবিয়ানদের অগ্রাধিকারের দাবি, গবেষণা ক্ষেত্রে বাজেট বৃদ্ধি এবং নতুন ক্যাম্পাসের কাজ অতিদ্রুত শুরু করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের ৭ দফা দাবির জবাব জবি প্রশাসনের
১ম দফা (জকসু নির্বাচন): জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ গঠনের বিষয়ে কোন ধারা, উপধারা বা গঠণতন্ত্র নেই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের দাবীর সাথে সহমত পোষণ করে দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে একটি গঠণতন্ত্র তৈরী করার জন্য অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. সরকার আলী আক্কাস-কে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি অন্যান্য সদস্যবৃন্দ হলেন: অধ্যাপক ড. মোঃ আতিয়ার রহমান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, প্রক্টর এবং পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এডভোকেট রঞ্জন কুমার দাস, সহকারী রেজিস্ট্রার (আইন) উক্ত কমিটিতে সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটি-কে আগামী ৪৫ (পয়ঁতাল্লিশ) কার্যদিবেসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনের জন্য সুপারিশ প্রদান ও ‘জকসু’ গঠণতন্ত্র প্রণয়নে অনুরোধ করা হয়েছে। কমিটি’র সুপারিশ অনুযায়ী ‘জকসু’ গঠণতন্ত্র প্রণয়ন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন প্রথম সমাবর্তন শেষে নির্বাচনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
২য় দফা (বাসের ডাবল শিফট্ চালু করণ): জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিবহনের জন্য বর্তমানে ৩৫ টি বাস ও মাক্রোবাস চলমান রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবহনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লি: থেকে আরও ১০টি বাস এবং ১টি দ্বিতল বাস ক্রয়ের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী আগস্ট, ২০১৯-এর মধ্যে বাসগুলি সরবরাহ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে বাসগুলির অন্তরভর্ূক্তিতে পরিবহন সমস্যার সমাধান হবে। তাছাড়া অবস্থানগত কারণে এবং পুরান ঢাকার যানযটনের কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বাসের ডাবল শিফট্ চালু করা প্রায় অসম্ভব। এ প্রেক্ষিতে উপরোক্ত ১১টি বাস পরিবহন পুলে যুক্ত হলে প্রতিটি রুটে বাসের সংখ্যা দ্বিগুণ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে। ফলশ্রুতিতে ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যমান পরিবহন সমস্যার সমাধান হবে।
৩য় দফা (ছাত্রী হল নির্মাণ): জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসনের জন্য “বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল” নামে ১৬-তলা বিশিষ্ট একটি ছাত্রী হলের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে হলে ছাত্রীদের বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। উক্ত হলটি নির্মাণের সম্পূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজেত রয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)। উক্ত নির্মাণ কাজের সাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। হলটি আগামী ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯ এর মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হবে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, হল হস্তান্তরের সময়সীমা আর কোনভাবেই বৃন্ধি করা হবে না। আশা করা হচ্ছে, উক্ত সময়ের মধেই হলে ছাত্রীদের বসবাসের জন্য সীট বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হবে।
৪র্থ দফা (শিক্ষক নিয়োগ): জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্য থেকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আগামীতে এই নিয়োগের হার বৃদ্ধি করা হবে।
৫ম দফা (নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন): জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন, ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ঢাকা’র কেরানীগঞ্জে ২০০ (দুইশত) একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অধিগ্রহণের জন্য ৯০০ (নয়শত) কোটি টাকা ইতোমধ্যে ছাড় করা হয়েছে। নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান। নতুন ক্যাম্পাসের মাস্টার প্লান প্রণয়ন করা হচ্ছে। বর্তমানে সে অনুযায়ী প্রকল্পের কার্যক্রম চলছে।
৬ষ্ঠ দফা (ক্যান্টিনের খাবারের মান): জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনের খাবারের মান ইতোমধ্যেই বৃদ্ধি করা হয়েছে। হ্রাসকৃত মূল্যে পরাটা, ডিম, ভাজি, খিচুরী, ভাত, সবজি, মাছ, মাংস, ভর্তা, সিংগারা ও চা পাওয়া যাচ্ছে। ক্যান্টিনে ছাত্র-ছাত্রীদের বসার জন্য নতুন চেয়ার-টেবিল অর্ডার দেয়া হয়েছে। লাইট, ফ্যান, পানির ফিল্টার সরবরাহ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংষ্কার কাজও সম্পন্ন হয়েছে। এখন থেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন অর্থাৎ শুক্র ও শনিবার ক্যান্টিন খোলা থাকবে।
৭ম দফা (গবেষণায় বরাদ্দ): বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু থেকে গবেষণা খাতে বাজেট উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত ২০১৩ সালে এ খাতে বাজেট বরাদ্দ ছিল মাত্র ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা। বর্তমানে (২০১৯ সনে) এ খাতে বাজেট বরাদ্দ রয়েছে ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। সুতরাং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কোন শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর গবেষণা বিষয়ে কোন আর্থিক সংকট নেই। আগামীতে এখাতে বরাদ্দ আরও বৃদ্ধি করা হবে। বর্তমানে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনশনরত শিক্ষার্থীদের দাবীর বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। উপাচার্য মহোদয় শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহার করে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার আহবান জানিয়েছেন। উপাচার্য মহোদয় শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হয় বা বাঁধাগ্রস্ত হয় এমন সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।