০৬ জুলাই ২০১৯, ২২:৩৭

জাফর ইকবালকে সাত কলেজ শিক্ষার্থীর আবেগঘন খোলা চিঠি

  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের চলমান দুর্ভোগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার সকালেও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেছেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. জাফর ইকবালকে চিঠি লিখেছেন এক শিক্ষার্থী। ঢাবি অধিভুক্ত তিতুমীর কলেজের এই শিক্ষার্থী দুর্ভোগ কমিয়ে আনতে ড. জাফর ইকবালের সহায়তা চেয়েছেন। চিঠিটি হুবহু পাঠকের কাছে তুলে ধরা হলো।

স্যার!

শুভেচ্ছা নিবেন। এই লেখাটা আপনাকে যখন লিখছি তার দুইদিন পর আমার অর্থনীতি পরীক্ষা। এখন আমার পড়ার টেবিলে থাকার কথা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, পড়ায় আমার একদমই মন নেই। কারণটা ব্যাখ্যা করছি-

আমি সরকারি তিতুমীর কলেজের (বিবিএস ২০১৬-১৭) ছাত্র। আপনি অবগত আছেন যে, আমাদের কলেজসহ ঢাকার সরকারি সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও সরকারের এই সিদ্ধান্ত আমাদের প্রায় আড়াই লক্ষ শিক্ষার্থীর জীবন ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমাদের সাথে যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলো তারা চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে অথচ আমরা এখনও প্রথম বর্ষ শেষ করতে পারিনি। মাত্র কয়েক দিন আগে ব্যবস্থাপনা প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিয়েছি। চার ঘণ্টার পরীক্ষা কোনরূপ পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই অজ্ঞাত কারণে তিন ঘণ্টা সময় দেয়া হয়েছে। পরীক্ষাটা ভালো হয়নি। তারপর থেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আছি।

উচ্চ মাধ্যমিকের পর পারিবারিক নানা জটিলতায় চার বছর পড়াশোনা করা সম্ভব হয়নি। তারপর আবার যখন নতুন করে পড়ালেখা শুরু করলাম তখন এই বিপর্যয়ে পড়েছি। ২০১৭ সাল থেকে সেশনজট, ফলাফল বিলম্ব, সিলেবাসের বাইরে প্রশ্ন, প্রশ্নপত্রের সময় কমানো, গণহারে ফেল, ফলাফলে ভুল, ফলাফল সংশোধনের নামে হয়রানি, ফলাফল পুনঃনিরিক্ষণের পরে ১০০ শতাংশ ফলাফল অপরিবর্তনীয়। সবমিলিয়ে আমাদের প্রায় আড়াই লক্ষ শিক্ষার্থীর জীবনটা দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।

চাকরির বয়স আর দুই বছর আছে। এর মধ্যে পড়ালেখা শেষ হবে না। ব্যবসা করার মত পুঁজিও নেই। জীবন নিয়ে খুব ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে আছি। ছোট ভাই-বোনেরা যখন পাস করে বিসিএস দিচ্ছে তখন আমার পাস করা নিয়েই সন্দেহ। গত শিক্ষাবর্ষের শতকরা ৯০ জন যখন অকৃতকার্য হয়েছে আমরা তখন কিভাবে পাস করার চিন্তা করব স্যার?

ইতোমধ্যে কয়েকজন ছাত্র আত্মহত্যা করেছে। সামনে বোধ হয় আরও করবে। সবাই যখন প্রশ্ন করে পড়ালেখা শেষ হবে কবে? আমি কোনো উত্তর দিতে পারি না। অফিস সহকারী হিসেবে এ পর্যন্ত সাতটা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও চাকরি হয়নি। কারণ টাকা কিংবা সুপারিশ কোনোটাই আমার নেই স্যার। এক বুক অভিমান নিয়ে কোনো একদিন হয়তো আমাকেও আত্মঘাতী হতে হবে। বিকল্প আর কোনো পথ দেখছি না।

চিঠিতে আমাদের বৈষম্য ও একজন ছাত্রের ফলাফলের কয়েকটা ছবি সংযুক্ত করে দিলাম স্যার। দেখলেই বুঝতে পারবেন আমাদের অবস্থা। পারলে আমাদের নিয়ে লিখুন স্যার। আমাদের পাশে দাঁড়ান। নতুবা অনেক সম্ভাবনাময় প্রাণ অকালেই ঝরে যাবে।

প্লিজ স্যার একটা কিছু করুন। আপনার উপর আমাদের অগাধ আস্থা। আপনি পারবেন স্যার।

ইতি
একজন হতভাগ্য ছাত্র