০৫ জুলাই ২০১৯, ১৮:০৯

ক্যাম্পাস সন্ত্রাসমুক্ত, বাহিরের নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে না: অধ্যক্ষ

  © ফাইল ফটো

বরগুনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ বলেছেন কলেজ ক্যাম্পাস মাদক, সন্ত্রাস এবং বহিরাগত মুক্ত। কলেজের বাইরে কোথায় কি ঘটে এইটা তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে না।

বরগুনায় রিফাত হত্যাকাণ্ডের ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যাদের দেখা গেছে তারা ছাড়াও বন্ড বাহিনীর সদস্যরা এ ঘটনার সাথে যুক্ত ছিল। সরকারি কলেজের ভেতরে নোটিশ বোর্ডের সামনে রিফাতকে প্রথম পেটানো হয়। সেখানকার সিসি ক্যামেরায় ছবিগুলো থাকার কথা। তবে কলেজের অধ্যক্ষের দাবি ঘটনার দুদিন আগে বজ্রপাতে সিসি ক্যামেরাগুলো অকেজো হয়ে যায়।

অভিযোগ উঠেছে, অধ্যক্ষ দিনের পর দিন কলেজ ক্যাম্পাসে বন্ড বাহিনীর অপরাধ আড়াল করে রাখার চেষ্টা করেছেন। তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি পুলিশ।

তবে বরগুনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ কলেজের পরিবেশকে খুব ভালোভাবে উপস্থাপন করলেও শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের বক্তব্য কলেজের পরিবেশ ছিল রীতিমত ভীতিকর। সবার সাথে কথা বলতে গেলে এখনও উঠে আসে কলেজ ক্যাম্পাসে বন্ড বাহিনীর নানা নির্যাতনের চিত্র। আর কলেজের অধ্যক্ষের প্রশ্রয়েই বহিরাগতরা এক প্রকার অফিস খুলে প্রভাব বিস্তার করতো বলে দাবি তাদের।

শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা বলছেন লেখাপড়া হয় না এখানে। বহিরাগতদের কলেজের ভেতরে রাজনীতিসহ বিভিন্ন অনিয়ম দেখা যায় ক্যাম্পাসে। এসব অনিয়ম দূর করতে না পারলে শিক্ষার পরিবেশ ফিরবে না। রিফাত ফরাজি ছাত্র হোস্টেলে গিয়ে ছেলেদের হুমকি দিতো ও মাদকের টাকা চাইতো বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

একই অভিযোগ রয়েছে কলেজের পাশে বসবাসকারীদেরও। এলাকাবাসীরা বলছেন, কলেজের সামনে মেয়েদের ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হতো। কলেজে মাদকসেবী ও বহিরাগতদের তাণ্ডবের কথা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

ধামা চাপা দেয়া হয়েছে রিফাতকে কোপানোর ঠিক আগ মুহূর্তের ঘটনা। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যারা রিফাতকে কুপিয়েছে তাদের বাইরেও বন্ড বাহিনীর একটি দল কাজ করেছে কলেজের ভেতরে। ওইদিন নোটিশ বোর্ডের সামনে থেকে তারা রিফাত শরীফকে মারতে মারতে কলেজ গেটের বাইরে নিয়ে যায়। আর সেখানেই পরবর্তীতে নয়ন, রিফাত ফরাজি ও রিশান ফরাজিসহ সন্ত্রাসীরা রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করে।

নোটিশ বোর্ডের সামনে রিফাতকে প্রথম যেখানে পেটানো হয়েছে, সেখানে লাগানো আছে দুটি সিসি ক্যামেরা। সিসি ক্যামেরা দুটিতে অবশ্যই ধরা পড়ার কথা কলেজ ক্যাম্পাসে মারধরের ঘটনা। তবে অধ্যক্ষ জানান, ঘটনার দুদিন আগে বজ্রপাতে কলেজের সব ক্যামেরা বিকল হয়ে যায়।

অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ বলেন, ক্যামেরাগুলো সব ভালোই ছিল। ২৪ তারিখে বজ্রপাতের কারণে মনিটরটা নষ্ট হয়ে গেছে।

তবে কলেজ হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা বলছে, বজ্রপাতের কোন ঘটনাই ঘটেনি সে সময়। তারা বলেন এক মাস কেন, কলেজে আরও আগেও যদি কোনো বজ্রপাত হতো, তাহলে তা আমরা শুনতাম। কিন্তু এখানে কোনো বজ্রপাত হয়নি।

তবে পুলিশ তদন্তের স্বার্থে ও বাকি আসামীদের ধরতে অনেক বিষয়ে কথা বলতে নারাজ। পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন তদন্ত চলমান। কার তথ্যের ভিত্তিতে কাকে ধরা হবে না হবে, সেগুলো এখানে বলে দিলে আমি আসামি ধরবো কি করে? তারা তো আমার নজরদারির বাইরে চলে যাবে।

এখন পর্যন্ত রিফাতকে প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত ৪ জনকে গ্রেফতার ও এক নম্বর আসামী নয়ন বন্ডের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আর অজ্ঞাতনামায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে ৫ জনকে।