নানা আয়োজনে জাককানইবিতে ১৫৮তম রবীন্দ্র জয়ন্তী উদযাপন
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাককানইবি) বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স কক্ষে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ।
সেমিনারে ‘রবীন্দ্রনাথের পল্লী উন্নয়ন ভাবনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন জাককানইবির অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম এবং ‘মানবিক সম্পর্ক ভাবনায় রাবীন্দ্রিক প্যারাডাইম: পরিপ্রেক্ষিত রবীন্দ্র-নাট্যেও নারী-পুরুষ সম্পর্ক’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন জাককানইবির বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমেদুল বারী। প্রবন্ধ দুইটির আলোচনা করেন যথাক্রমে ট্রেজারার প্রফেসর মো. জালাল উদ্দিন এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুলা বেরা। সেমিনার সঞ্চালনায় ছিলেন স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তানিয়া আফরিন তন্বী ও সহকারীর অধ্যাপক কে এম মাহমুদুল হক।
সেমিনার শেষে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে. এম খালিদ এম.পি এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান।
পরিশেষে গাহি সাম্যের গান মঞ্চে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে. এম খালিদ এম.পি।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘শান্তিনিকেতনের মতো একটি প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশেও প্রতিষ্ঠা করা যায় কিনা আমি সেটা ভাবছি। এ বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সাথেও আলোচনা করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সবকিছুই আছে তবে মনের খোরাক মেটানোর জায়গা একটি অডিটোরিয়াম নেই। অডিটোরিয়ামের জন্য আমার সহযোগিতা লাগলে আমি তা করব।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কবি নজরুল দুজনেই একে অপরকে ভালোবাসতেন, আর তাই আমিও তাঁদের খুব ভালোবাসি। আমি এই প্রতিষ্ঠানকে ভালোবাসি এবং এর কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ভালোবাসা অর্থ ত্যাগ করা। যাকে ভালোবাসবেন তার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আর একটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে- আমার দ্বারা বিশ্বের কোন প্রাণী কখনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।’
আলোচনা সভায় একই মঞ্চে দুই কবির নামে প্রতিষ্ঠিত ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়’- এর মাননীয় উপাচার্যদ্বয় উপস্থিত ছিলেন। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একই দর্শন প্রচার করেন অর্থাৎ- ‘মানুষের জন্য ভালোবাসা এবং একজন ভালো মানুষ হওয়া’। উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাবৃন্দ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে এবং আগ্রহের সাথে গ্রহণ করেন।
মুখ্য আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ডেইরি ফার্মের উদ্ভাবক ছিলেন, ক্ষুদ্র ঋণের উদ্ভাবন ছিলেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভালো জিপিএ চাই না, আমি চাই ভালো মানুষ। তোমরা ভালো মানুষ হও জিপিএ তোমার পায়ের নিচে লুটাবে।’
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনের আইজিসিসির পরিচালক ড. নীপা চৌধুরী। আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন জাককানইবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. জালাল উদ্দিন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সুব্রত কুমার দে। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম ও কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি মোকাররম হোসেন মাসুম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর এবং ধন্যবাদজ্ঞাপন করেন কলা অনুষদের ডিন ও রবীন্দ্র জয়ন্তী ২০১৯ উদযাপন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মো. সাহাবউদ্দিন। আলোচনা অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আল জাবির এবং নুসরাত শারমিন তানিয়া।
আলোচনা সভার পরেই শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার (আইজিসিসি) সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করে। জাককানইবির সংগীত বিভাগের পরিবেশনায় ‘শাপমোচন কথিকা’ পরিবেশিত হয়। কথিকাটির সংগীত পরিচালনায় ছিলেন সুমা রানী রায় এবং নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন মানস তালুকদার। থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের পরিবেশনায় ‘বাল্মিকী প্রতিভা’ পরিবেশিত হয়। বাল্মিকী প্রতিভা’র নির্দেশনায় ছিলেন রাশেদুল ইসলাম এবং তত্ত্বাবধানে ছিলেন আল জাবির।
উল্লেখ্য ৮ মে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন হলেও সেই সময় রমজান মাস হওয়ায় সংক্ষিপ্তাকারে করে আজ সাড়ম্বরে উদযাপন করা হয়।