ফের আন্দোলনে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা, কর্মসূচি ঘোষণা
বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া আশ্বাসের বাস্তবায়ন না হওয়ায় বহুল আলোচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নতুন করে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। রোববার (৩০ জুন) বেলা ১১টায় ঢাকা কলেজের ক্যাফেটেরিয়ায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ‘সাত কলেজের শিক্ষা সংকট সমাধানে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের এমনটিই জানিয়েছেন আন্দোলনের সমন্বয়ক ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবু বকর। এর অংশ হিসেবে আগামী ৬ জুলাই প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন পালনের ঘোষণা দিয়েছে তারা। মানববন্ধন থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা হবে বলেও জানান তিনি।
মতবিনিময় সভায় সাত কলেজের প্রতিনিধিরা বলেন, সরকারি এই সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করার পর থেকে ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছে না প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষার্থীর। নানান অনিয়মের অভিযোগ করে আমরা সমাধান চেয়ে বার বার রাস্তায় নেমেছি, রাস্তায় নামলে নানা মিথ্যা আশ্বাসও পেয়েছি কিন্তু কার্যকরী কোনো সমাধান পাইনি। ঢাবির অধিভুক্তির পর থেকে তীব্র সেশনজট, ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতা, ত্রুটিযুক্ত ফল প্রকাশসহ নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে আমাদের। এসব সমস্যার সমাধানে ঢাবি কর্তৃপক্ষ দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলেও অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা।
তাই এবার আশ্বাস নয়, সমাধান নিয়েই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরবে বলে দাবি করে, সমস্যার সমাধান না হওয়ায় আবারও ফের আন্দোলন শুরুর কথা জানান ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা।
পড়ুন: সেই সাত কলেজের সংকট দুই বছরেও কাটেনি
আন্দোলনের সমন্বয়ক ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী আবু বকর আরো বলেন, সময়মতো পরীক্ষা না নেওয়া, রেজাল্ট প্রকাশে সাত থেকে আট মাস বিলম্ব করা, বিনা নোটিশে নতুন নিয়ম কর্যকর, একই বিষয়ে গণহারে ফেল, খাতার সঠিক মূল্যায়ন না হওয়া, সিলেবাস বহির্ভূত প্রশ্নপদ্ধতিসহ নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও এ সমস্যার সমাধান হয়নি। ঢাবি কর্তৃপক্ষ বার বার সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও তার ফল পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। তাদের সংকট ক্রমেই বাড়ছে।
তাই এই সকল বিষয়ে ঢাবি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেলে মানববন্ধনের পর আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা
জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়। এগুলো হচ্ছে-ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই নানা সংকট লেগেই আছে এসব কলেজের। ফলে লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। এ কারণে তারা কখনও পরীক্ষার রুটিন, কখনও ফলের দাবিতে রাজধানীর নীলক্ষেত ও শাহবাগের মোড় অবরোধ করছে শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তিতুমীর কলেজের আবু বকর সিদ্দিক নামে এক শিক্ষার্থী চোখও হারিয়েছে। তবুও সুফল পায়নি সাত কলেজের লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর। তাই বারবার রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছে তারা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ঢাবি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অবহেলায় তারা চরম হতাশা নিয়ে শিক্ষাজীবন পার করছে।
এদিকে ঢাবির অধিভুক্ত সরকারি ৭ কলেজের যে সমস্যা রয়েছে তা স্বীকার করেছেন ঢাবি কর্তৃপক্ষ। এসব সমস্য সমাধানে কাজ করবেন বলে জানিয়ে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ থেকে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে সকল শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হয়েছে তাদের কিছু জটিলতার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সাময়িক অসুবিধা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে তাদের এসব সমস্যা সমাধান করার উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া, অধিভুক্ত সরকারি ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে সকল বিষয়ের ফলাফল প্রকাশ করার ব্যাপারে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যে সকল বিষয়ে অধিক হারে অকৃতকার্য হয়েছে, তদবিষয়ে আবেদনক্রমে পুনর্মূল্যায়নের ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পড়ুন: সেই সাত কলেজের সংকট দুই বছরেও কাটেনি