২২ জুন ২০১৯, ২২:১৬

প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ইবি কর্মকর্তা আটক, তদবিরে মুক্তি

  © সংগৃহীত

প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রির অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক কর্মকর্তাসহ মোট ছয় জনকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঝিনাইদহের আরাপপুরের সিটি কলেজ এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। আটক হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই কর্মকর্তা পরিবহন অফিসে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে কর্মরত রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ দিকে আটককৃত বাকি ছয়জনকে গতকাল সাংবাদিকদের সম্মুখে উপস্থিত করা হলেও ইবি কর্মকর্তা জামির হোসেনকে করা হয়নি। তদবিরে তার মুক্তি মিলেছে বলে জানা গেছে। গতকাল আটকের পর দুপুরেই জামিরুলকে ছেড়ে দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী এক নেতার তদবীরে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

থানা সূত্রে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঝিনাইদহে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বেচা-কেনার তথ্য পায় গোয়েন্দা পুলিশ। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ।

এরপর ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুরের সিটি কলেজ এলাকার আব্দুল মজিদের বাসা বাড়ি থেকে ইবি কর্মকর্তা জামিরুল হোসেনসহ মোট সাত জনকে আটক করা হয়েছে। এসময় আটককৃতদের কাছ থেকে ভুয়া প্রশ্ন ও উত্তরপত্র বিক্রির ৬০ হাজার নগদ টাকাও জব্দ করা হয়।

আটককৃত অন্যরা হলেন সদর উপজেলার গোপালপুর এলাকার অরুণ কুমারের ছেলে প্রশান্ত কুমার, বাড়ির মালিক আব্দুল মজিদ, শৈকুপার রাণীনগর গ্রামের রোজদার মিয়ার ছেলে আল মাউন, একই উপজেলার সিদ্ধি গ্রামের এলাহি বক্সের ছেলে তাইনুল আলম, একই উপজেলার উত্তর বোয়ালিয়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে হাসান ইকবাল ও রাণীনগর গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে রিপন হোসেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চক্রটি এ ভুয়া প্রশ্ন ও উত্তরপত্র বিক্রি করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও মেসেঞ্জার গ্রুপ ব্যবহার করে আসছিলো। গ্রুপ থেকে আসা এসব প্রশ্ন ও উত্তরপত্র বিক্রি করে তারা প্রার্থীদের থেকে জন প্রতি বিশ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।

গোয়েন্দা পুলিশের ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন এ বিষয়ে জানান, ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুরের একটি বাসায় সহকারি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কেনা বেচা হচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। তার ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে আসা এ প্রশ্ন ও উত্তরপত্র জন প্রতি ২০ হাজার টাকা বিক্রি করছিলো।

তবে পরীক্ষা শেষে জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর খায়রুল ইসলাম আসল প্রশ্নপত্রের সাথে বিক্রি হওয়া প্রশ্নপত্র মেলানোর পর কোন মিল খুঁজে পাননি। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ সদর থানায় প্রতারণার একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ইবি কর্মকর্তা জামিরুল হোসেন ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘ঘটনা কিছুই না। সিটি কলেজের পাশেই আমার বাসা। আমাকে সন্দেহমূলক ভাবেই নিয়ে (পুলিশ) গেছিলো। পরে ছেড়ে দিয়েছে। পরে আমাদের এমপি ফোন দিয়ে ওদের (পুলিশ) সাথে খারাপ ব্যবহার করছে। বলেছে যারা দোষী তাদের না ধরে এদের ধরে বেড়ান কেন।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমি বিষয়টি অবগত হয়েছি। যেহেতু পুলিশ তাকে আটক করে ছেড়ে দিয়েছে সেহেতু এক্ষেত্রে আমাদের কোন পদক্ষেপ নেই। পুলিশ তাকে আটক করে রাখলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা শৃঙ্খলা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতাম। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ এমন কার্যকলাপের জড়িত থাকা কোনভাবেই কম্য নয়।’