শুষ্ক মৌসুমে ধুলোর সাগর, বৃষ্টিতে ডোবা
লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে ময়নামতি-শালবন সংলগ্ন অঞ্চলে রয়েছে দেশের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো। রয়েছে দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। তবে কোটবাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, শালবন বিহার, ময়নামতি জাদুগরে যাওয়ার রাস্তাটি কয়েক বছর ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে।
শুকনো মৌসুমে ধুলাবালির অত্যাচার সহ্য করতে হয় পথচারীদের। আর হাল্কা বৃষ্টিতেই খাল খনান্দে হাঁটু সমান পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি। সংস্কারের কাজ শুরু হলেও কার্পেটিং(পিচ) উঠিয়ে থমকে আছে নির্মাণ কাজ। এতে করে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ঘুরতে আসা পর্যটক এবং স্থানীয় এলাকার বাসিন্দাসহ হাজারো পথচারীর।
সরেজমিনে দেখা যায়, কোটবাড়ি থেকে শালবন বিহার পর্যন্ত ২ দশমিক ৭৫ কিলোমিটারের এই সড়কটি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যাডেট কলেজ, সিসিএন বিশ্ববিদ্যালয়, শালবন বিহার, বৌদ্ধ বিহার, ময়নামতি জাদুঘর, ডাইনোসর পার্ক, ম্যাজিক প্যারাডাইস, ব্লুওয়াটার পার্কসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় যাওয়ার প্রধান অবলম্বন। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত প্রায় কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন।
কিন্তু কোটবাড়ি থেকে ময়নামতি জাদুঘর, বৌদ্ধবিহার যেতে যে সড়কটি রয়েছে, তা বর্তমানে যানবাহন চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অসংখ্য খানাখন্দে দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির যাচ্ছেতাই অবস্থা। মাঝে মাঝে নামমাত্র ইটের খোয়া ফেলে গর্তগুলো ভরাট করে দেয়া হয়। সড়কটির খানাখন্দ বেশ কয়েকটি স্থানে বড় হওয়ায় বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, রিকশা, অটোরিকশা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল আরোহীদের প্রায় নিয়মিতই দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। অটোতে চলাচল করলেও তীব্র ঝাঁকুনিতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন পথচারীরা।
এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় এক বছরের অধিক সময় যাবত এই সড়কের নির্মাণ কাজ চললেও সিকিভাগ কাজও হয়নি। বৃষ্টি হলে সড়কের অন্তত তিন থেকে চারটি জায়গায় প্রায় হাঁটু সমান পানি জমে যায়। তবে সিটি কর্পোরেশনের দাবি, টেন্ডার জটিলতায় সড়কের কাজ আটকে ছিল। তবে দ্রুতই নতুন করে কাজ শুরু হবে।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, সড়কটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে সড়কটিসহ আশেপাশের বেশকয়েকটি রাস্তা ও নালা নির্মাণে ৩৮ কোটি ১৫ লাখ ৭০ হাজার ২৬৮ টাকার কাজ বাস্তবায়ন চলছে।
সড়কে চলাচলকারী স্থানীয় বাসিন্দা কামাল উদ্দিন বলেন, ‘অনেকদিন যাবত কাজ চললেও কাজের কোন অগ্রগতি নেই। এখন আবার বর্ষাকাল চলে এসেছে। একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটু সমান পানি জমে। আমাদের চলাচলের খুব অসুবিধা হচ্ছে।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. নূরুদ্দিন রাসেল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩ বছরের বেশি সময় ধরে আছি। এই সড়কটি কোন সময়ই ভালো ছিলনা। প্রশাসনেরও নজর নেই। এজন্য নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘ইতিপূর্বে আমরা এই রাস্তার কার্পেটিং এর টেন্ডার করেছিলাম। সম্প্রতি পুরো সংস্কারের টেন্ডার হয়েছে। যেসব জায়গায় পানি জমে থাকে সেখানে আরসিসি'র কাজ হবে। আমরা ঠিকাদারদের দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। এই মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।