বেদনাবিধুর হলে থাকা
প্রিয়জনের জন্য, প্রিয়জনদের খুশির জন্য তাদের সাথে মিলিত হতে না পারাটা এক অন্যরকম বেদনাবিধুর। আর সেটি যদি ঈদের সময়ে হয় তাহলে তা কতটা কষ্টের না বলে দিলেও চলে।
নাইম, জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সময় তারুণ্যে ভরপুর ছাত্রজীবন অতিবাহিত করছে একটি নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে।
কিন্তু নাইমের মতো অনেক তরুনের কাছে এই বয়সের সোনালী সময়টুকু উচ্ছাস ও উপভোগ্য হয়ে উঠেনা।
কারণ অর্থই যখন সব অনর্থের কারণ। সবাই ঈদের ছুটিতে আগে আগে বাড়ি যাওয়া, ছুটি কাটানো, ঘোরাঘুরির পরিকল্পনায় যখন ব্যস্ত, তখন যদি কাউকে ছোট বোনের নতুন জামা কেনার পয়সা জমাতে ক্যান্টিনের বিস্বাদ খাবার খেয়ে সাহরী করতে হয়। সারাদিন রোজা থেকে তিন থেকে চারটি টিউশনি করাতে হয়, তখন এই জীবনকে রঙিন এলইডি টিভিতে সাদাকালো পর্দায় প্রিয় দলের বিশ্বকাপ খেলা দেখার মত মনে হয়।
আসল কথা হচ্ছে বাড়িতে টাকা পাঠানোর চিন্তা যখন প্রকট। পড়ালেখা, স্বাদ, আহ্লাদ খেলাধুলা তখন খুবই নিছক। আর তা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের রঙিন সময়ে হয় তবে সেখানে জন্ম নেয় হতাশা। আজকে সাহরী করার সময় বাড়ির স্মৃতিচারণ ও দীর্ঘ চার মাস পর বাড়ি যাওয়া উপলক্ষে উচ্ছাসিত গাল-গল্প চলছিল আমার, রাকিব এবং নাইমের মধ্যে। কিন্তু এই সময় নাইমকে অনেক বিষন্ন মনে হল। নাইম বাংলা বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র। উদ্দাম ও উচ্ছাসে ভরপুর থাকার কথা তার।
ক্যাম্পাস ছুটি দুই সপ্তাহ আগে হলেও সে এখনো হলে রয়েছে। তার কথায়, ‘আমার ছোট ছোট বোন দুটি ও মা এর জন্য টিউশনি করানোটা এখন জীবনের সবচেয়ে গুরু দায়িত্ব। টিউশনির টাকা থেকেই আমাকে পরিবারের জন্য ঈদের বাজার নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। তাই এখানে ছুটির পরেও হলে থাকা। ছোট বোনের নতুন জামা ও মায়ের জন্য কাপড় নিতে পারলেই আমার চেয়ে আর খুশী কেও হবেনা এই ঈদে। এটাই আমার ঈদ আনন্দ।’
নাঈমের কাছে এই কথা শোনার পরে রাকিব বলেই ফেলল, বন্ধু এটা তোর কাছে সত্যিই জীবনের অন্যরকম এক বাস্তবতা যেটা আমাদের কাছে ধরা দেয়নি।
নাইমের কাছে তাই এক একটি উৎসব যেন নতুনভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়ে কবির সেই বিখ্যাত তত্ত্বকথা মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্ণধারেরাই ধরণীর আসল রূপ দেখতে পায়। আজকের ফেসবুকীয় যুগে যখন সবাই ট্রাভেল টু হোম লিখে স্ট্যাটাস দেয়, তার মাঝে লুকিয়ে থাকে হাজারো স্মৃতির রোমন্থন। মাসের শেষ তারিখের জন্য নাইম আজ প্রতীক্ষারত। এরপরে সেও হয়তো যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিজ টাইমলাইনে ঘোষণা দেবে উৎসবীয় সংগ্রাম শেষে ফিরছি আমি।