১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:০৪

ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড: বিক্ষোভে উত্তাল দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে বিভিন্ন ক্যাম্পাস উত্তাল  © টিডিসি সম্পাদিত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে সারা দেশে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে ওঠে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ১১টায় জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ শুরু করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। পরে সোহরাওয়ার্দী ও আলাওল হল প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেট মোড়ে এসে সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হয়।

বিক্ষোভ মিছিলে ‘ভারতের আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ’, ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘লাল জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘আমরা সবাই হাদী হব, গুলির মুখে কথা কব’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, 'আমরা যুগে যুগে দেখেছি ফ্যাসিবাদীরা, জঙ্গিবাদীরা বিপ্লবীদের গুপ্তভাবে হত্যা করে। যুগে যুগে যারা ফ্যাসিবাদ, জুলমবাজ এবং কালচারাল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, তখন সন্ত্রাসীরা তাদেরকে হত্যা করার জন্য নীল নকশা করেছে। হাদীকেও সেভাবেই হত্যা করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের পর অনেক জুলাই যোদ্ধা নৈতিকতা বিসর্জন দিলেও আমাদের নেতা হাদী তাঁর নৈতিকতার সর্বোচ্চ স্থান ধরে রেখেছে।

চাকসুর ভিপি ইব্রাহিম রনি বলেন, 'জুলাই আন্দোলনে অগ্রভাগে থেকে যারা কাজ করেছে তাদের মধ্যে শরীফ ওসমান হাদী অন্যতম। মধ্যযুগীয় কায়দায় তাঁর মাথায় গুলি তাকে হত্যা করা হয়েছে। এই ক্ষতি হয়তো বাংলাদেশ আর কখনো পূরণ করতে পারবে না। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যারা কাজ তাদের পিছনে অন্যতম ভূমিকা পালনকারী হিসেবে থাকবে ওসমান হাদী। ওসমান হাদীর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধ বনিতা থেকে শুরু করে যখন গ্রামে গঞ্জে পৌঁছে যায়, তখন একটি পক্ষ তা মেনে নিতে পারেনি৷'

তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী খুনী হাসিনা ও ভারতের যৌথ পরিকল্পনায় এবং যারা ভারতীয় আধিপত্য কায়েম করতে চায়, তাদের নীলনকশায় তাকে শহীদ করা হয়েছে। আমরা আহ্বান জানাতে চাই, সরকার দ্রুত সময়ে মধ্যে যদি হত্যাকারীদের দ্রুত বের করতে না পারে তাহলে মসনদে বসে থাকার নৈতিক কোনো অধিকার নাই।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় রিকশায় থাকা অবস্থায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। গুলিটি তাঁর কানের একপাশ বিদ্ধ করে অন্যপাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল (১৮ ডিসেম্বর) রাতে তিনি ইন্তেকাল করেন।


যবিপ্রবি

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা- ৮ আসনের সম্ভাব্য এমপি পদপ্রার্থী শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর সংবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ১১ টায় ক্যাম্পাসের শহিদ মসিয়ূর রহমান হল ও মুন্সী মেহেরুল্লাহ হলের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে এ মিছিল শুরু করে। বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে যশোর-চৌগাছা সড়কে সমাবেশ করেন তারা৷ এ সময় তারা ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এতে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

সমাবেশে পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মো. উসামাহ বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ভারত আমাদের দেশে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, আবরার ফাহাদ থেকে শুরু করে আমাদের বিপ্লবী জননেতা হাদী ভাই ভারতের আগ্রাসনের মুখে শহীদ হয়েছেন। আগামী দিনে আমাদের দেশকে যদি কেউ ভারতের গোলাম করতে চাই, তাহলে আমরা ছাত্রজনতা তা মেনে নিবো না। আগামীর দেশ হবে বাংলাদেশপন্থীদের বাংলাদেশ। ভারতে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে, আমরা বেঁচে থাকতে তা বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। আল্লাহ আমাদের ভাইকে শহীদ হিসেবে কবুল করুক। ভাই এর পরিবারকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করুক। ভাই যে উদ্দেশ্য নিয়ে লড়াই করেছে, সে উদ্দেশ্য আমরা সফল করবো।

পিইএসএস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাফি বলেন, জুলাই বিপ্লবের পরে অপশক্তিরা জুলাই যোদ্ধাকে হত্যার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে, এখনই তাদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে। আর যদি কোন ওসমান হাদীকে এভাবে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হয়, তাহলে বাংলার সাধারণ ছাত্রসমাজ খুনিদের এই বাংলা থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। ভারতীয় আধিপত্য ও খুনিদের রুখে দিতে সবাইকে সংঘবদ্ধ থাকতে হবে।

বিক্ষোভ শেষে আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে জুমা’র নামাজের পরে গায়েবানা নামাজের ঘোষণা দেওয়া হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরুল কলেজ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ১০ টা ৪৫ মিনিটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে রায় সাহেব বাজার হয়ে তাঁতীবাজার মোড়ে কিছুক্ষণ অবস্থান নেন। এসময় সড়কে বসে পড়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।

বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘ইউনূস কী করে, সন্ত্রাসীরা গুলি করে’, ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘জাহাঙ্গীর কী করে, সন্ত্রাসীরা মানুষ মারে’, ‘গুলির মুখে কথা কবো, আমরা সবাই হাদি হবো’, ‘তুমি কে আমি কে-হাদি হাদি’, ‘উই ওয়ান্ট উই ওয়ান্ট, জাস্টিস জাস্টিস’ ইত্যাদি বলে স্লোগান দেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।

পরে তাঁতীবাজার মোড় প্রদক্ষিণ করে শাঁখারীবাজার মোড়ের বিশ্বজিৎ চত্বরে এসে সমাবেশ করেন তারা। পরে ওসমান হাদির রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। 

মরিয়ম আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা কখনো কল্পনা করিনি জুলাই যোদ্ধা হাদি ভাইকে হত্যা করা হবে। আমরাও জুলাই যোদ্ধা, এই ওসমান হাদির জায়গায় আমরাও থাকতে পারতাম। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্যর্থ, কেননা এখন পর্যন্ত দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি এবং এখনো সংস্কার হয়নি। যার কারণে আমাদের জীবনের আসলে কোন নিশ্চয়তা নেই। 

সাকিবুল হাসান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, জনমানুষের নিরাপত্তা দিতে এই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অক্ষম। আমরা তার পদত্যাগ চাই। আর কোনো জুলাই যোদ্ধাকে যেন এইভাবে জীবন দিতে না হয়। আমরা জুলাই যোদ্ধা ভাইদের রক্ত আর দেখতে চাই না। যারা হাদি ভাইকে হত্যা করেছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

শিক্ষার্থী জুয়েল রানা বলেন, ওসমান হাদিকে মেরে আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না। আমরা মোটেও ভীত না। একজন ওসমান হাদি মারা গেলে আরো দশজন ওসমান হাদি যুগে যুগে জন্মাবে। হাদি ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকবো। 


ডুয়েট

ওসমান হাদীর হত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন গাজীপুরে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েটে) শিক্ষার্থীরা। ওসমান হাদীর শাহাদাতের খবর ছড়িয়ে পড়লে ডুয়েটের বিভিন্ন হল থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা মিছিল নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। ডুয়েটের আবু সাঈদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে সম্মিলিত মিছিল নিয়ে গাজীপুরের জয়দেবপুর শহরের শিববাড়ি পর্যন্ত গিয়ে মিছিলটি আবার ডুয়েট গেটে ফিরে আসে।

এ সময় গাজীপুর শিমুলতলী আঞ্চলিক সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন  মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী লিমন ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাহেল।

এ সময় বক্তব্যে বক্তারা ওসমান হাদীর আদর্শ ধারণ করে আজীবন ঐক্যবদ্ধভাবে ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের যোদ্ধা ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এর মুখপাত্র ও ঢাকা ৮ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শরীফ ওসমান হাদি হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। হাদি হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল এবং মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। 

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়ামোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মেইন গেটে এসে কুষ্টিয়া খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, শাখা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন ও কয়েকশো শিক্ষার্থী অংশ নেয়। 

এ সময় শিক্ষার্থীরা ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ; তুমি কে আমি কে, হাদি হাদি; হাদি ভাইয়ের পথ ধরো, সেভেন সিস্টার স্বাধীন করো; গোলামি না আজাদি, আজাদি আজাদি; সুশীলের আস্তানা, এই বাংলায় হবে না; একশান একশান, ডাইরেক্ট একশান; আমরা সবাই হাদি হবো, গুলির মুখেও কথা কবো; হাদি ভাইয়ের স্মরণে, ভয় করিনা মরণে; যে ভারত গুলি করে, সেই ভারত ভেঙে দাও ইত্যাদি স্লোগান দেন। 

শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন বলেন, হাদি ভাই একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক ছিলেন। ভারতীয় আধিপত্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অগ্রনায়ক ছিলেন। ভাই ছিলেন একজন জুলাই যোদ্ধা। তিনি মারা গেছেন কিন্তু তার রক্তের সাথে আমরা বেইমানি করতে পারবো না। হাসিনা পালিয়ে গেছে কিন্তু তার প্রেতাত্মারা এখনো পালায় নাই। এখন থেকে এই প্রেতাত্মা যেখানেই দেখা যাবে গণধোলাই দিতে হবে, পুলিশি হেফাজতে পাঠাতে হবে। হাদি ভাইয়ের রক্ত যেন বৃথা না যায় সে ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। 

শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি ইউসুফ আলী বলেন, ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর যে ব্যক্তির ছিলো, যিনি জুলাইকে মন থেকে মানতেন সেই ওসমান হাদিকে আজ হত্যা করা হয়েছে। আমরা আজ শুধু হাদি ভাইয়ের হত্যার প্রতিবাদ জানাতে আসিনি আমরা এসেছি এই বাংলাদেশের উপর ভারতীয় আধিপত্যের কবর দিতে। তারা ভেবেছে এক হাদিকে হত্যা করলে তারা তাদের আধিপত্যই বাংলাদেশের বুকে বিস্তার করতে পারবে, কিন্তু তারা এটা বোঝেনি এক হাদিকে হত্যা করলে লক্ষ হাদি বাংলাদেশের বুকে জ্বলে উঠবে। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক এস এম সুইট বলেন, ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে যে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর উঠে এসেছিল, সেই হাদি ভাইয়ের হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। হত্যার পর আমরা জানতে পারি, খুনিরা ভারতে পালিয়ে গেছে। কীভাবে তারা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পালাতে সক্ষম হলো—তা জাতির সামনে স্পষ্ট করতে হবে। এ ঘটনায় দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়ে গুরুতর আশঙ্কা করছি। কোনো না কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতাতেই হাদি ভাইয়ের হত্যাকারীরা ভারতে পালিয়ে গেছে বলে। জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। 

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

একই সংবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনুস খান স্কলার গার্ডেন-১-এর সামনে শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে এ মিছিল শুরু করে। 

বিক্ষোভ মিছিলটি এক নম্বর হলের সামনে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত নম্বর গেট হয়ে ইউনুস খান স্কলার গার্ডেন-২ হলের মাঠে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ভবন নলেজ টাওয়ারের নিচে গিয়ে শেষ হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুমানিক এক হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দিতে থাকে “জুলাইয়ে হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার, ‘এক হাদি লোকান্তর, লক্ষ হাদি ঘরে ঘরে, ‘হাদি ভাই মরলো কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’, ‘ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ সহ নানা বিপ্লবী স্লোগান।

এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থানের কারণে হাদি ভাই আজ শাহাদাত বরণ করেছেন। এই শাহাদাত বৃথা হতে দেওয়া যাবে না। ফেলানী থেকে আবরার, আজ হাদি এই ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে অবস্থানের কারণেই হাদি ভাইয়ের এই পরিণতি। জুলাই বিপ্লবের পর বিপ্লবী সরকার গঠন না হয়ে এই অর্থহীন ইন্টেরিম সরকার গঠন হয়েছে। যারা বিপ্লবীদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি, তারা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাও দিতে পারবে না।

এরপর আগামীকাল থেকে ইনকিলাব মঞ্চের কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এবং শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেন তারা।


বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) গায়েবানা জানাজা ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা।বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বের হয়ে আব্দুল জব্বার মোড়ে একত্রিত হন। সেখানে গায়েবানা জানাজা আদায় করা হয়। জানাজা শেষে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।

মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা অতিক্রম করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে দিয়ে কেয়ার মার্কেটে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। মিছিলে দেওয়া স্লোগানগুলোর মধ্যে ছিল ‘তুমি কে, আমি কে, হাদি, হাদি’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘চব্বিশের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা, ঢাকা’ এবং ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’।

এতে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এটি মতপ্রকাশ ও প্রতিবাদের কণ্ঠ রোধের ধারাবাহিক অংশ। তারা অভিযোগ করেন, ফ্যাসিবাদী রাজনীতি ও বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণেই হাদিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়

জুলাই বিপ্লবী শহীদ শরীফ ওসমান হাদীর মৃত্যুতে শোক ও বিচারের দাবিতে এবং ভারতীয় আধিপত্য মোকাবিলায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল করেছে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ১১টায় গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু) ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের আয়োজনে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু হয়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। এ সময় স্থানীয় জনসাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে বিক্ষোভে যোগ দেয়।

বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘গুলির মুখে কথা কবো, আমরা সবাই হাদী হবো’, ‘তুমি কে আমি কে, হাদী-হাদী’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে থাকেন।

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শরীফ ওসমান হাদীর বিচারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। ভারতের আধিপত্য ধ্বংস করে সকল খুনিদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান। এছাড়া বিচার নিশ্চিত করা না গেলে সংশ্লিষ্টদের পদত্যাগ ও সমস্ত রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দেয় শিক্ষার্থীরা।

ছাত্র সংসদের (গকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) ইয়াছিন আল মৃদুল দেওয়ান বলেন, ‘হাদী ভাইয়ের মৃত্যুতে আমাদের সবার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমরা মনে করি এই হত্যাকাণ্ড একটি পরিকল্পিত হত্যার ঘটনা। হাদী ভাইয়ের খুনিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে নয়তো সংশ্লিষ্টদের পদত্যাগ করতে হবে। ভারতীয় আধিপত্য মোকাবিলায় হাদীর মতো আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’

গকসু'র সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) মো: সামিউল ইসলাম বলেন, ‘চব্বিশের ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের অকুতোভয়ী যোদ্ধা সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারালেন। হাদী ভাই নির্দিষ্ট কোন দল বা গোষ্ঠীর ছিলেন না তিনি ছিলেন সর্বদলীয়। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্যের লড়াই করেছে। আজ একজন হাদীর বিদায়ে, ১৮ কোটি হাদী জন্ম নিয়েছে।’

ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ বলেন, ‘হাদী ভাই প্রমাণ করে দিলো কীভাবে ভারতীয় আধিপত্যবাদকে রুখে দিতে হয়। অন্যায়, জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয়। মেরুদণ্ডহীন প্রশাসনকে স্পষ্ট বলে দিতে চাই হাদী হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে নয়তো প্রশাসনের পদত্যাগ পরতে হবে। আমরা আর কোন হাদীকে হারাতে চাইনা।’

ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সাইন্সেস অনুষদের শিক্ষার্থী শুভ হাওলাদার বলেন, ‘বিচারের বদলে বিচার চাই, রক্তের বদলে রক্ত। জুলাই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসকল আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আমাদের হুমকি দিয়েছে তাদের নিপাত করতে হবে। আওয়ামী ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ ধ্বংস করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে মুজিবের মূর্তি অপসারণ করতে হবে।’

বিক্ষোভ মিছিল শেষে শহীদ শরীফ ওসমান হাদীর মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত করেন ছাত্র সংসদের নেতৃবৃন্দ, উপস্থিত শিক্ষার্থী ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেওয়া স্থানীয় জনসাধারণ।

এর আগে, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক আড়াইটার দিকে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোড এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশায় থাকা অবস্থায় শরীফ ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি করে মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। 

পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। মৃত্যুর আগে তিনি সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে ইনকিলাব মঞ্চের ভেরিফায়েড পেজের এক পোস্টে বলা হয়, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের মোকাবিলায় মহান বিপ্লবী ওসমান হাদীকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন।’