‘জিডি করতে গিয়ে’ আইসিটি আইনে গ্রেফতার কুবি শিক্ষার্থী
ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ময়নুল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়, সোমবার পুলিশ সুকৌশলে তাকে থানায় নিয়ে এসে আটক করে। তবে একাধিকসূত্রের দাবি, ময়নুল নিজের নিরাপত্তা চেয়ে কুমিল্লার কোতোয়ালী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে তাকে আটক করা হয়।
ময়নুলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮(১) এবং ৩১(১) ধারায় কুমিল্লা কোতোয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন উপ-পুলিশ পরিদর্শক খালেকুজ্জামান। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
জানা যায়, গত ১৯ মে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে ‘শ্যামল চন্দ দাস’ নামের একটি ফেসবুক একাউন্টের একটি পোস্টের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে। যাতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ময়নুল ইসলাম আবিরের একাউন্ট থেকে একটি গ্রুপে হিন্দু ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করা হয়।
তবে ময়নুল নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে দাবি করেন, এই মন্তব্যটি তিনি করেননি। কেউ তার নাম এবং ছবি ব্যবহার করে ভুয়া একাউন্ট খুলে এমন একটি মন্তব্য করে তাকে ফাঁসাতে চাচ্ছে। পরবর্তীতে স্ক্রিন শট ভাইরাল করা ‘শ্যামল চন্দ্র দাস’ নামক একাউন্ট ঘুরে দেখা যায়, একাউন্টটির ইউজার নেইম ‘‘moynulislam.abir.35’ এবং একাউন্টের অন্যান্য তথ্য ও সঠিক নয়।
ময়নুলের দাবি, তাকে ফাঁসিয়ে একটি সাম্প্রদায়িক সংঘাত তৈরীর জন্যই একটি মহল ইচ্ছাকৃতভাবে তার নামে একাউন্ট খুলে তা দিয়ে সাম্প্রদয়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে।
এদিকে ওই রাতেই ৩০ থেকে ৪০ জন অজ্ঞাতনামা লোক ময়নুলের খোঁজে তার বাসায় যায়। এ ঘটনার পর সোমবার (২০ মে) ময়নুল কুমিল্লা কোতোয়ালী মডেল থানায় নিরাপত্তা চেয়ে একটি সাধারণ ডায়রি করতে যায় বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম হানিফ।
তিনি বলেন, ‘২০ মে দুপুরে ময়নুল জিডি করতে যায়। পরে পুলিশ প্রশাসন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ময়নুলকে রেখে দেন। এরপর রাতে খোঁজ নিলে জিজ্ঞাসাবাদে আরও সময় লাগবে বলে জানায়। পরে জানতে পারি তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
ময়নুলের মেস সদস্য শুভ’র দাবি, ‘ঘটনার দিন (২০ মে) ময়নাল মেসে ছিলো না। আর মেস থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়নি।’
এদিকে মামলার তদন্তের নথিসূত্রে বলা হয়, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মইনুল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। আসামী সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্যেশ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হিন্দু সম্প্রদায় ও হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবী দুর্গাকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়। মামলাটির তদন্ত অব্যহত রয়েছে।’
পড়ুন:সেহরীর নামে ডাকাতি, ডাল-সবজিও যেভাবে ৩০০টাকা হয়ে যায়
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাইনুদ্দীন জানান, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় মো. ময়নুল হোসেনকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’