২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:৪০

নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসায় লাইসেন্স প্রক্রিয়া সহজ করা জরুরি: নোবিপ্রবি উপাচার্য

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসমাইল  © টিডিসি ফটো

নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসায়িক লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া আরও সহজ করার আহ্বান জানিয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসমাইল। তিনি বলেন, ‘একজন এন্ট্রাপ্রেনিয়র যখন অল্প মূলধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চান, তখন লাইসেন্স করতে গিয়ে যদি ২০–৩০ লাখ টাকা ব্যয় হয়, সে তখন স্বাভাবিকভাবেই লাইসেন্স থেকে দূরে সরে যায়। তাই প্রশাসনের উচিত ব্যবসা করার পথকে আরও সহজ ও উদ্যোক্তা-বান্ধব করা।’

সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর ধানমন্ডির গাউসিয়া টুইন পার্কে লিং জিং চাইনিজ রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠিত কৃষি ফুড ব্র্যান্ডের নতুন পণ্য ‘কৃষি হানি অন ইয়োর ওয়ে’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. ইসমাইল বলেন, ‘বর্তমানে দেখা যায়, বড় বড় গ্রুপ অব কোম্পানি ছোট ব্যবসার ক্ষেত্রগুলোও দখল করে নিচ্ছে। যেমন মেঘনা গ্রুপ মধু তৈরি করছে, বসুন্ধরা গ্রুপও একই কাজ করছে- এমনকি পেঁয়াজ, রসুনের মতো খুচরা পণ্যের বাজারেও ঢুকে পড়ছে। ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (এসএমই) টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। সরকারের নীতিমালা এমন হওয়া উচিত যাতে বড় কোম্পানির প্রভাব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিকাশে বাধা না হয়ে বরং সহায়ক হয়।’

আরও পড়ুন: পে-স্কেলের মূল বেতন ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব, কোন গ্রেডে কত?

উপাচার্য আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া অনেক জটিল। আমি নিজে যেহেতু ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত, তাই জানি— প্রতিটি ধাপে কত রকমের স্ট্রাগল করতে হয়। উদ্যোক্তা তৈরি করতে হলে আমাদের প্রশাসনিক কাঠামোকে এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে স্টার্টআপরা নিরুৎসাহিত না হয়ে বরং অনুপ্রাণিত হয়।’

নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও ‘হাফ ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট’। আমার গাজীপুর ও চট্টগ্রামে দুটি কেমিক্যাল ভেনচার আছে। আমাদের ছাত্রছাত্রীরাও যখন করোনার সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি শুরু করে, তখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিনামূল্যে তাদের টেস্টিং সহযোগিতা দিয়েছিলাম। সেই ধারাবাহিকতায় আজ আমার শিক্ষার্থীরাও পূর্ণ উদ্যোক্তায় পরিণত হচ্ছে- এটা আমাদের জন্য গর্বের।’

ব্যবসায় বিশ্বস্ততা-এর গুরুত্ব তুলে ধরে ড. উপাচার্য বলেন, ‘যখন খাবারের পণ্যের কথা আসে, তখন ট্রাস্টের জায়গাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একবার ট্রাস্ট ভেঙে গেলে সেটা ফিরিয়ে আনা কঠিন। কৃষি হানির মতো পণ্যগুলো যেন সেই বিশ্বাস অটুট রাখে- এটাই আমাদের চাওয়া।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০ কোটি মানুষের দেশ। এখানে প্রতিটি পণ্যের বিশাল বাজার আছে। যদি আমরা উদ্ভাবনী চিন্তা, আত্মবিশ্বাস এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় রাখি, তবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা দেশীয় অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হতে পারে।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা, ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. এফ. এম. মুস্তাফিজুর রহমান, বুয়েটের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এমডি. কাইয়ুম হোসেন, বিএসটিআই পরীক্ষক মো. মেহেদী হাসান, পুষ্টিবিদ সুমাইয়া শিলা এবং বিসিএস (স্বাস্থ্য) কর্মকর্তা ড. আকিব হোসেন।

অনুষ্ঠান শেষে ড. ইসমাইল কৃষি ফুডের উদ্যোক্তা বাপ্পি ও সজলসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভকামনা জানিয়ে বলেন, “বিশ্বাস, পরিশ্রম এবং সহযোগিতা"- এই তিন জিনিস থাকলে আমাদের তরুণ উদ্যোক্তারা বিশ্ববাজারেও নিজেদের জায়গা করে নিতে পারবে।