জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাঁকা থাকতে পারে ৪ লাখের বেশি আসন
চলতি বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ফলে সব শিক্ষার্থী স্নাতকে ভর্তি হলেও ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে উচ্চশিক্ষায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুল সংখ্যক আসন শূন্য থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেশ কিছু কলেজ ও পিছিয়ে পড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একজন শিক্ষার্থীও পাবে না বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষায় যত শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন, তারা সবাই যদি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, তারপরও ফাঁকা থাকবে ৩ লাখের বেশি আসন।
জানা গেছে, এবারের এইচএসসিতে ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ শিক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী। তাদের প্রায় সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির লড়াইয়ে অংশ নেবেন। পাশাপাশি ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবেন জিপিএ-৪ ও ৩.৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরাও। জিপিএ-৪ পেয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার এবং জিপিএ-৩.৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৩৯ হাজার শিক্ষার্থী।
ইউজিসির সর্বশেষ ৪৯তম বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান), স্নাতক কারিগরি বা সমমান পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি কলেজে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ সেশনে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী ছিল ৭ লাখ ৪ হাজার ১৯৬জন, আসন শূন্য ছিল ১ লাখ ৯৭ হাজার ৩৪৯টি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স ও কারিগরি আসন সংখ্যা ১ লাখ ৯৪ হাজার ৪১৫টি, তার মধ্যে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৯৪ হাজার ৪১৫ জন। যদিও এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান), স্নাতক কারিগরি বা সমমান পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি কলেজে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ সেশনে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী ছিল ৭ লাখ ৪ হাজার ১৯৬জন, আসন শূন্য ছিল ১ লাখ ৯৭ হাজার ৩৪৯টি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স ও কারিগরি আসন সংখ্যা ১ লাখ ৯৪ হাজার ৪১৫টি, তার মধ্যে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৯৪ হাজার ৪১৫ জন। যদিও এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
অন্যদিকে শুধু স্নাতক (সম্মান) বা স্নাতক কারিগরি পর্যায়ে মোট আসন ছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৯০টি এবং ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী ছিল ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৭১৫ জন। আসন শূন্য ছিল ৮৬ হাজার ৩৭৫টি। এর আগে ইউজিসির ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২১ সালের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান), স্নাতক কারিগরি বা সমমান পর্যায়ে আসন সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ৯ হাজার ৭৯১টি। আর ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী ছিল ৬ লাখ ১৩ হাজার ১৩৩ জন, আসন শূন্য ছিল ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬৬২টি।
অন্যদিকে, শুধু স্নাতক (সম্মান) বা স্নাতক কারিগরি পর্যায়ে মোট আসন ছিল ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৮০১টি এবং ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী ছিল ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৯১৬ জন। আসন শূন্য ছিল ১ লাখ ৯৯ হাজার ৮৮৫টি।
তথ্যমতে, একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শুরু হতো। এতে যারা এসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেত না, তারা সহজেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজে ভর্তি হতে পারত। তবে কয়েক বছর ধরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে ভর্তি নেওয়ার ফলে দেখা যাচ্ছে, অনেক শিক্ষার্থী প্রথমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে ভর্তি হয়ে থাকছে। পরে আবার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলে চলে যাচ্ছে। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীকে।
ভর্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী সাবিকুন্নাহার ফারিহা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা যারা গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছি, তাদের এখন ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে মার্চে, অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিসেম্বরেই ভর্তি নিচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের সামনে দুইটা কঠিন পথ হয় গুচ্ছ পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে হবে, না হয় সেশনজটের ঝুঁকি এড়াতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে। এতে একদিকে আমরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছি, অন্যদিকে ভবিষ্যৎ নিয়েও দোটানায় আছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক শিক্ষার্থীর পরিবারের অবস্থা ভালো না। ভর্তি ফি, ফর্ম ফি, ট্রান্সপোর্ট এসব খরচ অনেকের জন্যই বড় বিষয়। গুচ্ছ ভর্তি যদি পরে হয়, তাহলে এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পরে আবার অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হলে একই শিক্ষার্থীর পরিবারকে দুইবার অর্থ ব্যয় করতে হবে। এটা শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, মানসিক চাপও সৃষ্টি করছে। আমরা চাই, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রমের একটা নির্দিষ্ট সময়সূচি থাকুক, যেন শিক্ষার্থীরা একসাথে সব বিকল্পের সুযোগ নিতে পারে।’
যদিও বিশ্ববিদ্যালয়টির সূত্র বলছে, দেশের উচ্চশিক্ষার মোট শিক্ষার্থীর ৭০ শতাংশই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। এ বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর ভর্তি ও ক্লাস দেরিতে শুরুতে সেশনজট লেগে যাবে। সেজন্য সবার আগে ক্লাস শুরুর করেন তারা।
আরও পড়ুন: মেডিকেল-ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় যেসব পরিবর্তন আসছে
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এ বছর আর্থিকভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ দেশের শিক্ষার্থীদের বৃহৎ একটি অংশ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই পড়াশোনা করে। এবার এইচএসসিতে ফেল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে ভর্তি-যোগ্য শিক্ষার্থীও কমে যাবে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে আমাদের ভর্তি কার্যক্রম ও আর্থিক অবস্থায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কোনো সরকারি বাজেট বা স্বতন্ত্র রাজস্ব উৎস নেই। শিক্ষার্থীভিত্তিক ভর্তি ফি, টিউশন ফি ও অন্যান্য ফি দিয়েই মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্যয়, পরীক্ষা কার্যক্রম ও গবেষণা কার্যক্রম চালানো হয়। এবার যদি ভর্তি-যোগ্য শিক্ষার্থী কমে যায়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের রাজস্ব আয়ও কমবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টি আর্থিকভাবে কঠিন সংকটে পড়বে।’
উপাচার্য আমানুল্লাহ বলেন, ‘সরকারি বাজেট না থাকা এবং নিজস্ব রেভিনিউ উৎসের সীমাবদ্ধতার কারণে এই ক্ষতি থেকে উত্তরণ কঠিন হবে।’
যাচাই-বাছাই ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন কলেজ অনুমোদন এবং পরিকল্পনা ছাড়াই আসন বাড়ানোর ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে আসন সংখ্যা পুনর্বিন্যাসের পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়াই উচ্চশিক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়টির আসন বেড়েছেই চলছে। যে কারণে প্রতি বছরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসন ফাঁকা থাকছে বলে জানান তারা।