রাজনীতির ভূত পাবলিকে, সনদ বিক্রির কারখানা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়
সরকারি কর্তৃত্ব, স্বায়ত্তশাসনের অপব্যবহার, সনদ বাণিজ্যসহ দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আটটি সঙ্কট চিহ্নিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব সঙ্কট ও সমাধানের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা।
সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই : উচ্চশিক্ষা, নীতিমালা, কাঠামো’ শীর্ষক কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কনভেনশন থেকে বর্তমানে দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান ৮টি সঙ্কট চিহ্নিত করা হয়। এসব সঙ্কট মোকাবিলায় ৬টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সামিনা লুৎফা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্বিক মানের অবনমন ঘটেছে বলে একটি ধারণা ধীরে ধীরে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয় রাজনীতি শিক্ষাগত মানের ওপরে প্রভুত্ব করছে। অল্প কয়েকটি বাদ দিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেবল সনদ বিক্রির ভবনে পরিণত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কনভেনশনের আয়োজন করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক।’
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৮টি সঙ্কট চলমান উল্লেখ করে সেগুলো তুলে ধরেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের উত্থাপিত সঙ্কটগুলো হলো- সরকারি কর্তৃত্ব; ইউজিসির কৌশলপত্রের কারণে সান্ধ্যকোর্স, বৈকালিক কোর্স, বিশেষ প্রোগাম চালু; স্বায়ত্তশাসনের অপব্যবহার; শিক্ষায় জিডিপির তুলনায় কম বরাদ্দ ও গবেষণায় তহবিল বরাদ্দ না থাকা; অস্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত; শিক্ষক নিয়োগে দলীয় বিবেচনায় ভোটার বৃদ্ধির প্রবণতা; ছাত্ররাজনীতির নামে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ এবং মুনাফামুখী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কারণে মান অর্জনে ব্যর্থ হওয়া।
একই সঙ্গে শিক্ষক নেটওয়ার্কের সমস্যা সমাধানে ছয়টি প্রস্তাবও তুলে ধরেন তিনি। সমাধান প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্র কর্তৃক সমাধান; ইউসিজির কৌশলপত্রে পরিবর্তন; বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় আইনের সংস্কার; বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যদূরীকরণ; পাঠদান ও গবেষণায় জবাবদিহিতার ব্যবস্থা; ভর্তি ও নিয়োগে পরিবর্তন করতে হবে।
অধ্যাপক ফাহমিদুল হক বলেন, দলগত ও আঞ্চলিক বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগে পাস করা শিক্ষার্থীদের ওই বিভাগে চাকরি দেবার প্রবণতা বদলাতে হবে।
এ সময় তিনি ইউসিজির চলমান কৌশলপত্রের বিপরীতে পাল্টা কৌশলপত্র প্রণয়ন ও ১৯৭৩ এর আদেশের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে, তার আলোকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন ও জ্ঞানমুখী পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রবর্তন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ করার কর্মসূচি ঘোষণা করেন।