সাত কলেজ অন্তর্ভুক্তির ফলে ভোগান্তিতে ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা
সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে থাকা না থাকার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে একমত নয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত কলেজের অন্তর্ভুক্তি বাতিল করা হয়।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চাচ্ছে যেন সাত কলেজ অন্তর্ভুক্তি বাতিল হয়। সাত কলেজ অন্তর্ভুক্তির ফলে ভোগান্তিতে অাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন,সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানদণ্ড খুব বেশি ভাল নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তেতাল্লিশ হাজারের উপরে। এই তেতাল্লিশ হাজার শিক্ষার্থীর পরিচর্যা করতে যেখানে হিমশিম খায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেখানে সাত কলেজের অতিরিক্ত দুই লক্ষ শিক্ষার্থীর পরিচর্যা কীভাবে করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিক্ষার্থীর অনুপাতে যে পরিমাণ শিক্ষক থাকা দরকার সেই পরিমাণ শিক্ষক নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাবির অনেক বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয় খন্ডকালীন শিক্ষক। শিক্ষকের অভাবে পরীক্ষার ফলাফল, খাতা ঠিক মত মূল্যায়ন করার সময় পান না ঢাবি শিক্ষকরা। বেশিরভাগ বিভাগের যে শিক্ষকগুলো বিভাগের সিনিয়র, শিক্ষার্থীদের অনেক দিনের পড়ানোর অভিজ্ঞতা আছে সেই শিক্ষকগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্ব। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করায় সিনিয়র শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পড়াতে গিয়ে নানা সমস্যা হয়।
তাছাড়া, ঢাবির অনেক ডিপার্টমেন্টে এখনও সেশন জট রয়েছে। ঠিক সময়ে পরীক্ষা হয় না তাদের। তাছাড়া হল ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নানা সমস্যাতো আছেই। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তেতাল্লিশ হাজার শিক্ষার্থীর পরিচর্যা করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হিমশিম খায় সেখানে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অন্তর্ভুক্তি বাতিল চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা চায় না ঢাবির সাথে থাকতে। কারণ, ইতিমধ্যে অনেকগুলো সেশনের শিক্ষার্থীরা সেশন জোটের মধ্যে পড়েছে। তাদের সঠিক সময়ে পরীক্ষা হয় না। তাদের মতে, পাঠ দান করান নিজস্ব কলেজের শিক্ষকরা কিন্তু পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন ও প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। যে কারণে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। এতে পরীক্ষার ফল খারাপ হচ্ছে তাদের।
শুধু তাই নয়, এত শিক্ষার্থী হওয়ায় পরীক্ষার ফলাফল নিয়েও নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তির আগে তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্তির হওয়ার সাথে সাথে তাদের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে।
তাছাড়া, ভর্তি থেকে শুরু করে সকল কাজে তাদের আসতে হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ভবনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার ভবনে অনেকগুলো নিয়ম মেনে অনেক অফিসারের টেবিল ঘুরে সকল কার্যক্রম শেষ করতে হয়। যা সাত কলেজের শিক্ষার্থীর জন্যে খুবই কষ্টকর।
ঢাবি শিক্ষার্থীরা তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। তাদের কে সাত কলেজের টুকায় বলে। এসব নানা কারণে তারা চায় না ঢাবির সঙ্গে থাকতে।
সাত কলেজ থেকে সদ্য মাস্টার্স শেষ হওয়া বিজয় শিকদার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ ব্যাপারে জানান, অনার্স থেকে মাস্টার্স শেষ করতে তার আট বছর লেগেছে। বলেন, আমার আট বছর লাগার কারণে তেমন চাকরির আবেদনের সুযোগ পাইনি। কারণ, অনেক চাকরিতে মাস্টার্স সহ চায়। আমরা যারা এমন সমস্যায় পড়েছি তারা সরকারের কাছে একটি দাবি রাখতে চাই- সরকার যেন আমাদের চাকরির বয়স ৩৫ করে দেয়। যাতে আমরা চাকরির সুযোগ পাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র ফারুক হাসান এ ব্যাপারে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের পরীক্ষার ফলাফল ঠিক সময় পাই না। সাত কলেজ অন্তর্ভুক্তির ফলে আমাদের ভুগান্তি বেড়ে গেছে। তাই আমরা সাত কলেজ বাতিল চাই।
এ ব্যাপারে ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, তৎকালীন সময়ে ঢাবি ভিসি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দ্বন্দ্বের কারণে সাত কলেজে কে ঢাবির অন্তর্ভুক্তি করা হয়। তারা তেতাল্লিশ হাজার শিক্ষার্থীদের পরিচর্যা করতে পারছে না সেখানে দুইলক্ষ শিক্ষার্থীর শিক্ষার্থীদের একই লোকবল দিয়ে কীভাবে পরিচালনা করবে।
এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভাল গতিতে এগোচ্ছে। কিন্তু সাত কলেজ ঢাবির কারণে পিছিয়ে রয়েছে। আমরা এসব কারণে মনে করি সাত কলেজের অন্তর্ভুক্তি বাতিল করা উচিত।