সহপাঠীদের ভালোবাসায় অমলিন হয়ে থাকবেন কুবির সুমাইয়া 

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৩১ PM
সুমাইয়া আফরিন

সুমাইয়া আফরিন © টিডিসি সম্পাদিত

ক্লাসরুমের দরজায় ভর করে দাঁড়ালেই বোঝা যায়, কেউ একজন আর নেই। কারও ফিসফিসানি থেমে গেছে, কারও হাসি থেমে গেছে, কারও উপস্থিতি যেন শূন্য হয়ে গেছে চিরতরে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের কাছে সেই অনুপস্থিতি এখন এক অনন্ত শূন্যতার নাম সুমাইয়া আফরিন।

আজ সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের শেষ পরীক্ষা। এ পরীক্ষাই হয়ে উঠেছে সবার কাছে বেদনাদায়ক! কারণ এখানে নেই সুমাইয়া। নেই তার শেষ মুহূর্তের প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা, নেই পরীক্ষার আগের হাসিঠাট্টা। অথচ তারই সহপাঠীরা আজকের পরীক্ষায় তার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য তার ডেস্কে রেখেছে একটি ফুলের তোড়া, পরীক্ষার খাতা আর প্রশ্নপত্র। যেন সে এখানেই আছে, সবার সঙ্গে, সবার মাঝে।

সুমাইয়ার সহপাঠীরা তার স্মৃতি রোমন্থন করে একটি ফোলের তোড়া রাখে, পরীক্ষা বেঞ্চে তার সিটের উপর। সেখানে একটি খোলা পত্র ছিল, যাতে লেখা - ‘We are sorry’। এটা ছিল সুমাইয়ার প্রতি বন্ধুদের এক আর্তচিৎকারের বহিঃপ্রকাশ। 

এ বিষয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মুনিয়া আফরোজ বলেন, ‘সুমাইয়া আফরিনকে ছাড়াই শেষ পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে আমাদের শেষ করতে হচ্ছে ৫ম সেমিস্টার। এ দুঃখের ভার ঠিক কতটা, তা কেবল লোকপ্রশাসন বিভাগের ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থীদের জানা। সে আমাদের মনে রয়ে যাবে অনন্তকাল।’

তিনি আরও জানান, পরীক্ষা চলাকালীন সুমাইয়ার স্মরণে তার ডেস্কে একটি ফুলের তোড়া, পরীক্ষার খাতা এবং প্রশ্নপত্র রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। 

মুনিয়া বলেন, ‘বেঁচে থাকলে এ পরীক্ষার খাতাতেই সে শেষ করতো তার পঞ্চম সেমিস্টার। তারপর হয়ত একরাশ স্বস্তি নিয়ে একটা নতুন শুরুর পরিকল্পনা করত। তার আর কখনো নতুন শুরু হবে না। তবে তার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় চাইলেই একটা নতুন শুরু করতে পারে।’ 

সুমাইয়ার অন্যান্য সহপাঠীরা বলছেন, এ বেদনা তাদের ভেঙে দিতে পারবে না। বরং প্রতিটি পদক্ষেপে সুমাইয়ার স্মৃতি হয়ে থাকবে অনুপ্রেরণা। পরীক্ষার খাতার ফাঁকেও যেন লেখা থাকবে তার অদৃশ্য উপস্থিতি।

একজন বন্ধুকে হারানোর বেদনা কেবল ব্যক্তিগত নয়, সেটি হয়ে ওঠে একটি প্রজন্মের দগদগে ক্ষত। সেই ক্ষত নিয়েই লোকপ্রশাসনের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে চলছেন, স্মরণ করছেন সুমাইয়াকে, প্রতিজ্ঞা করছেন তার অসমাপ্ত জীবনের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার।

তবে, অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও সহমর্মিতা জানিয়ে বলছেন, 'এই তরুণী, যে হয়ত স্বপ্ন দেখতো ক্যারিয়ার গড়ার, দেখতো নিজের মতো করে একটি পৃথিবী সাজানোর, তাকে কি আমরা ফিরিয়ে দিতে পারলাম তার প্রাপ্য জীবন? তার অনুপস্থিতির দায় কি কেবল তার সহপাঠীদের বুকে থেকে যাবে, না কি সমাজ-রাষ্ট্রও নেবে তার দায়িত্ব?

গত ৭ সেপ্টেম্বরের সেই নির্মম রাতে সুমাইয়া ও তার মা-কে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় নিজ বাসায়। এরপর প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু গ্রেফতারই কি যথেষ্ট? না কি দরকার একটি সুস্পষ্ট, দৃষ্টান্তমূলক বিচারের, যাতে আর কোনো সুমাইয়ার পরীক্ষা অসমাপ্ত না থাকে, আর কোনো ক্লাসরুমের দেয়াল না কাঁদে নিঃশব্দে?

আজকের শেষ পরীক্ষার দিনে সুমাইয়া নেই, কিন্তু তার নাম, তার স্মৃতি, তার অসমাপ্ত স্বপ্ন ছড়িয়ে আছে পুরো ক্যাম্পাসে। ফুলের তোড়ায়, ফাঁকা ডেস্কে, সহপাঠীদের চোখের কোণে ভিজে থাকা অশ্রুতে সে বেঁচে থাকবে অনন্তকাল।

 

 

রিজার্ভ ছাড়াল ৩৩ বিলিয়ন ডলার
  • ০১ জানুয়ারি ২০২৬
কমল জ্বালানি তেলের দাম
  • ০১ জানুয়ারি ২০২৬
খিলগাঁও ফ্লাইওভারে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় পুলিশ সদস্য নিহত
  • ০১ জানুয়ারি ২০২৬
‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখলাম, এবারও পটকার শব্দে কেঁপে উঠছে চারপ…
  • ০১ জানুয়ারি ২০২৬
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আতশবাজি, রাজধানীতে ভবনে আগুন
  • ০১ জানুয়ারি ২০২৬
‘ম্যাচ জেতানো মানুষ হতে চাই, বাংলাদেশে অতিথিপরায়ণতাও দারুণ’
  • ০১ জানুয়ারি ২০২৬