দাবি না মানলে নীলক্ষেত ছাড়বেনা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা
পাঁচ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। পাঁচ দফা দাবিতে আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে তারা নীলক্ষেত মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক কবি নজরুল সরকারি কলেজের ছাত্র অমলেন্দু পাল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘নানা অনিয়মের প্রতিবাদে ও বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি। কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। একারণে আজ নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেছি।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস না দেওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’ তবে দুপুর পর্যন্ত কেউ সেখানে যাননি বলেও জানান তিনি।
নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করার কারণে ওই সড়ক দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী পাঁচ দফা দাবিতে এ আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের এসময়, ‘গণহারে আর ফেল নয়, যথাযথ রেজাল্ট চাই’, ‘শিক্ষা কোনো পণ্য নয়, শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা নয়’, ‘গণহারে ফেল, ঢাবি তোমার খেল’, ‘বন্ধ করো অনাচার, সাত কলেজের আবদার’, ‘নিচ্ছো টাকা দিচ্ছ বাশ, সময় শেষে সর্বনাশ’ এমন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
তাদের অভিযোগ, সময়মত পরীক্ষা না নেওয়া, রেজাল্ট প্রকাশে সাত থেকে আট মাস বিলম্ব, বিনা নোটিশে নতুন নিয়ম কার্যকর, একই বিষয়ে গণহারে ফেল, খাতার সঠিক মূল্যায়ন না হওয়া, সিলেবাস বহির্ভূত প্রশ্নপদ্ধতিসহ নানা সমস্যা রয়ে গেছে। এসব সমস্যা কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও সমাধান হয়নি।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। তাদের পেশ করা পাঁচ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলতেই থাকবে।
তারা জানান, ঢাবি কর্তৃপক্ষ বার বার সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সংকট ক্রমেই বাড়ছে। এ অবস্থায় পাঁচ দফা দাবিতে আবারো মানববন্ধনের ডাক দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-
১. পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ত্রুটি মুক্ত ফলাফল প্রকাশসহ একটি বর্ষের সকল বিভাগের ফলাফল একত্রে প্রকাশ করতে হবে। তারা উল্লেখ করেছেন- ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ২০১৬ সালের অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার ফলাফল ২০১৮ সালে প্রকাশিত হলেও সব বর্ষে পাশ থাকা সত্ত্বেও এখনো অনেকের সিজিপিএ আসেনি। তাই দ্রুত সিজিপিএ সমন্বয় করতে হবে। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ২০১৭ সালের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের লিখিত পরীক্ষা ২০১৮ সালের ২৮ জুলাই শেষ হলেও এখনো সকল বিভাগের ফলাফল প্রকাশিত হয়নি।
২. ডিগ্রী, অনার্স, মাস্টার্স সকল বর্ষের ফলাফল গণহারে অকৃতকার্য হওয়ার কারণ প্রকাশসহ খাতার পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন- যেমন ইডেনের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ইংরেজি বিভাগের ৩০০ জন শিক্ষার্থী প্রথমবর্ষে শুধু বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে ফেল করার পুনরায় সবার খাতা নিরীক্ষনের আবেদন করেন। পরবর্তীতে প্রকাশিত ফলাফলে ৩/৪ জন ছাড়া সবাই পাশ করে।
৩. সাত কলেজ পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ভবন চাই। তাদের মতে, স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ভবন না থাকায় সাত কলেজের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে। যেমন, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ২০১৬ সালের মাস্টার্স এবং ডিগ্রি ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ২০১৭ সালের পরীক্ষা ২০১৯ সালে এসেও এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি।
৪. প্রতিমাসে প্রত্যেকটা বিভাগে প্রতি কলেজে দুইদিন করে মোট ১৪ দিন ঢাবির শিক্ষকদের ক্লাস নিতে হবে। তাদের মতে- এটা যদি ঢাবির পক্ষে সম্ভব না হয়, তাহলে সাত কলেজের প্রশ্ন প্রণয়ন এবং খাতা মূল্যায়নের দায়িত্ব অবশ্যই সাত কলেজের শিক্ষকদের দিতে হবে।
৫. সেশনজট নিরসনের লক্ষ্যে একাডেমিক ক্যালেণ্ডার প্রকাশসহ ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করা।