নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবি শিক্ষার্থীদের
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাককানইবি) ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আবারও সরব হয়েছেন। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর থেকে গঠনতন্ত্র প্রণয়ন ও রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি থাকলেও দীর্ঘ এক বছরেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। এতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে নির্বাচন আয়োজনের জোর দাবি জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন প্রধান বলেন, ‘ছাত্রদল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতকে শ্রদ্ধার সহিত মূল্যয়ন করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে ছাত্রদল বাংলাদেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনোভাব অনুযায়ী চলার যথাযথ চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা অবশ্যই ছাত্র সংসদ ও একটি যুগোপযোগী গঠনতন্ত্র চাই এবং তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদ কবির বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, জুলাই বিপ্লবের ১ বছর পূর্ণ হলেও এখনো ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু ধারার রাজনৈতিক চর্চার প্লাটফর্ম ছাত্র সংসদ গড়ে ওঠেনি, যেখানে শিক্ষার্থীরা গণতন্ত্র চর্চা করতে পারবে, নেতৃত্বের প্রতিভা বিকশিত করতে পারবে, নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে পারবে। আমাদের সমসাময়িক সময়ে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেলেও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনে প্রশাসনের তেমন কোনো অগ্রগতি এখনো পরিলক্ষিত হয়নি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ চাইবে না, এমন শিক্ষার্থীদের সংখ্যা নগণ্য। সুতরাং ছাত্র সংসদ ইস্যুতে প্রশাসনের চুপ থাকার সুযোগ নেই। তাই অতিসত্বর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাই।’
আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহে ঘোষণা হতে পারে চাকসুর তফসিল, নির্বাচন সেপ্টেম্বরে
আইন ও বিচার বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী জেনাস ভৌমিক বলেন, ‘প্রশাসনকে অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। প্রশাসনিক স্বৈরাচার নির্মূল করে, একক ছাত্র সংগঠনের দখলদারিত্বমুক্ত গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণে ছাত্র সংসদ প্রয়োজন। ছাত্র সংসদ হলে শিক্ষার্থীদের হলের সিট সুষ্ঠু বণ্টন হবে, ডাইনিংয়ের খাবারের দাম কমবে, শিক্ষকদের ক্লাস ফাঁকি কমবে, নাম্বার টেম্পারিং বন্ধ হবে, সর্বোপরি শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস-অনিয়ম বন্ধ হবে। ছাত্র সংসদ না থাকায় একদিকে যেমন প্রশাসনিক স্বৈরাচার কায়েম হয়েছে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কাছে জিম্মি হয়ে যাচ্ছে। সিন্ডিকেটে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ নিয়ে কথা বলার জন্য শিক্ষার্থী প্রতিনিধি থাকে না। যোগ্য ছাত্র নেতৃত্ব গড়ে না উঠে লেজুড়বৃত্তিক নেতৃত্ব গড়ে উঠে। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।’
ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থী ঐশ্বর্য সরকার বলেন, ‘গণতান্ত্রিক উত্তরণের মুক্তির পথ আমরা ছাত্র সংসদের মাধ্যমেই খুঁজে পাব। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি প্রশাসনের কাছে তুলে ধরতে এবং দাবি আদায়ে প্রশাসনকে বাধ্য করতে পারব। আমাদের জুলাই আন্দোলনের একটি মূল দাবি ছিল, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ গঠন। ছাত্র সংসদ শুধু একটি সংগঠন নয়, এটি শিক্ষার্থীদের অধিকার, মর্যাদা ও স্বপ্নের প্রতীক। তাই আমরা জোর দাবি জানাই, প্রশাসন যেন দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে। নতুবা আমরা সকল শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলব। এ আন্দোলন হবে যৌক্তিক ও ঐক্যবদ্ধ, যতক্ষণ না শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হয়।’
আরও পড়ুন: সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের ‘শেষ লেখা’ ভাইরাল, মৃত্যুর আগে কী লিখেছিলেন?
ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধিতে ছাত্র সংসদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু নেই, এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ছাত্র সংসদ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং রোডম্যাপের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও নীতিমালা প্রণয়নের জন্য একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট পেলে রোডম্যাপ ঘোষণা, সুনির্দিষ্ট কাঠামো ও নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়া এবং সময়সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। আশা করা যায়, খুব শিগগির ছাত্র সংসদ বিষয়ে একটা দিক-নির্দেশনা পাওয়া যাবে।’