১৯ আগস্ট ২০২৫, ২০:৪৪

বেরোবিতে ছাত্র সংসদের দাবিতে আমরণ অনশন: নেপথ্যে চাকরির দাবিতে চাপ?

ছাত্রসংসদ নিবার্চনের দাবিতে অনশন  © ফাইল ফটো

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ (ছাত্র সংসদ) গঠনের দাবিতে চলমান আন্দোলন এখন নতুন মোড় নিয়েছে। আন্দোলনের আড়ালে একাধিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি প্রাপ্তি এবং প্রশাসনের উপর প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে। এতে আন্দোলনের নৈতিকতা ও নেতৃত্বের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ গঠন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের দাবিতে চলা আন্দোলনের পেছনে মূল উদ্দেশ্য অন্য কিছু হতে পারে; এমন ধারণা ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা একাধিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের জন্য চাকরি নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আরও পড়ুন: সনদের মেয়াদ আগের মতোই, পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে নেওয়ার চিন্তা

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ইউজিসির পক্ষ থেকে আইন প্রণয়ন ও প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কিছুটা সময় চাওয়ার পর আন্দোলনকারীদের একটি অংশ অনশন থেকে সরে গেলেও, সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী আশিকুর রহমানসহ কয়েকজন এখনও অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল নতুন করে অনশনে বসেছেন আরেক সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী খোকন। তবে আন্দোলনে সরাসরি অনশন না করেও নেতৃত্বের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে রহমত আলী নামের আরেক সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি জার্মান ভিত্তিক প্রকল্পে কর্মরত আছেন এবং একইসঙ্গে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পিএ পদে আবেদন করেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত আরও বেশ কয়েকজন প্রশাসনের ওপর চাপ তৈরি করে বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে নিয়োগ নিশ্চিত করতে চাইছেন। আন্দোলনের শুরুর দিক থেকে সক্রিয় ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান আবিরও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা পদে আবেদন করেছেন এবং তাকে অনশনের স্থানে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছে।

আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি অংশ বলছে, ‘ইউজিসি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবাই আইন প্রণয়নের ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন এবং কিছুটা সময় চেয়েছেন। তাই অনেকেই অনশন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু যারা এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্য যে চাকরির মতো ব্যক্তিস্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে, তা স্পষ্ট হচ্ছে।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রহমত আলী বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি সহযোদ্ধাদের প্রতি সংহতি জানাতে। কে কী বলবে, তাতে আমার কিছু যায় আসে না।’

এদিকে অনশনকারীরা তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন, যার ফলে আন্দোলনের ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অপরদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, যেখানে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির সমর্থন দেয়, সেখানে রাজনৈতিক কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। বিশৃঙ্খলার কারণে সেশনজটের যে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে এর জন্য অনশনকারীদের দায় নিতে হবে।

আরও পড়ুন: সুপারিশ পেলেন ৪১৬২৭ জন, নিয়োগপত্র ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের তামিম খান বলেন, ‘আজ যারা অনশন করছেন, তারা রাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়েছিল। অথচ আজ ছাত্রদল ও শিবির সমর্থন দিলো তারা কিছুই বলল না। শিবির ও ছাত্রদলের সমর্থন নিয়ে আমরা ছাত্রসংসদ চাই না, কোন রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করা কাউকে চাই না।’

একটি গ্রুপ পরিচালনা করছেন সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী ও পরবর্তীতে সমন্বয়ক রহমত আলী ও আশিক। আরেকটি অংশে রয়েছেন সাবেক সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন, আরমান, হাজিমুল হক, রুবায়েত, জাহিদ হাসান জয় ও রুম্মানুল ইসলাম রাজ। তৃতীয় গ্রুপে রয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা, যাদের মধ্যে অন্যতম শিবলি সাদিক, কায়সার ও আতিকুর। এদের মধ্যে শিবলি ও আরেকজন ইতোমধ্যে অনশন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন টিউশন

অনশনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। অথচ নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্রাকসু ফি আদায় করা হচ্ছে। তারা দ্রুত নির্বাচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সংশোধন এবং রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।

অনশনে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, শিবিরসহ আরও কয়েকটি সংগঠন সংহতি প্রকাশ করলেও এতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে চলছে আলোচনা।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেননি। শুরুতে নয়জন শিক্ষার্থী অনশনে বসলেও প্রশাসনের আশ্বাসে ইতোমধ্যে কয়েকজন অনশন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অনাগ্রহের কারণে অনেকেই এ আন্দোলনকে 'কৃত্রিম' বলেও মন্তব্য করছেন।

ইংরেজি বিভাগের এক নবীন শিক্ষার্থী কামাল উদ্দিন মেসবাহ বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ক্লাস শুরু হয়েছে। আর তাতেই শুনছি ক্লাস নাকি আর হবেনা, সিনিয়র ভাইয়েরা বর্জন করার জন্য আমাদের সিআর কে জানিয়েছে। আমরা কি করব বুঝতেছিনা।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে আলোচনার উদ্যোগ নিলেও, অনশনকারীদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকত আলীর মুঠোফোনে কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।