‘ভিসি ইজ নট এ গুড পার্সন’: বেরোবি ছাড়ছেন সেই ৪ সোমালিয়ান!
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ১১:১২ AM , আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ০২:২৫ PM
সুদূর আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া থেকে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য বাংলাদেশে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) এসে ভর্তি হতে না পেরে পুনরায় নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন সোমালিয়া থেকে আসা চার শিক্ষার্থী। দীর্ঘ পাঁচ মাসেও ভর্তি জটিলতা দূর না হওয়ায় দেশে ফিরে যাবেন বলে জানিয়েছেন তারা। অথচ তাদের চারজনের নামেই ভর্তির জন্য বিভাগও বরাদ্দ করা হয়েছিল।
জানা গেছে, পাঁচ মাস আগে স্কলারশীপ, টিউশন ফি এবং আবাসিক সুবিধা পাবেন এমন আশ্বাসে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন সোমালিয়ান এই শিক্ষার্থীরা। তারা হলেন, আহমেদ মুহাম্মদ (বরাদ্দকৃত বিভাগ রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মাস্টার্স), শাফি আহমেদ (বরাদ্দকৃত বিভাগ সিএসই, অনার্স),আব্দুল ফাতাহ ( বরাদ্দকৃত বিভাগ সিএসই, অনার্স) ও আব্দুর রহমান (বরাদ্দকৃত বিভাগ ফিন্যান্স, বিবিএ)। প্রশাসনিক নানা জটিলতায় তাদের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সূত্র জানায়, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) ভর্তি হতে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে আসেন সোমালিয়ান এই চার শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে বেরোবি উপাচার্যের অনুরোধে সেখানে ভর্তি না হয়ে ওই মাসের শেষের দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির উদ্দেশ্যে রংপুরে আসেন তারা।
পরে তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া চলমান আছে জানিয়ে তাদেরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ১০১ নম্বর কক্ষে অবস্থান করতে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারা ক্যাম্পাসে আসার পাঁচ মাস অতিক্রম হতে চললেও এখনও তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়নি।
ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়ায় তিনদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তুষার কিবরিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ভর্তির বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্যের সাথে সাক্ষাত করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স করতে আসা সোমালিয়ান শিক্ষার্থী আহমেদ মুহাম্মদ। সেখানে তাদের জন্য কিছুই করতে পারবেন না বলে পরিস্কার জানিয়ে দেন উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।
এবিষয়ে জানতে চাইলে আহমেদ মুহাম্মদ বলেন, ‘ভাইস চ্যান্সেলর ইজ নট এ গুড পার্সন।’ তিনি বলেন, ‘আমি তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলে তিনি কিছুই করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। অথচ আমাদেরকে স্কলারশীপসহ পড়াশুনা করার সুযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এখানে আনা হয়েছে। পাঁচ মাসেও আমাদের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।
তিনি আরো বলেন, ‘এখন বলছেন আমাদের জন্য কিছুই করতে পারবেন না। তাই রমজানের আগে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি সাক্ষাত করতে গেলে ভাইস চ্যান্সেলর আমার সাথে খারাপ আচরণ করেন এবং তার চোখের সামনে থেকে চলে যেতে বলেন।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তুষার কিবরিয়া বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে আমি উপাচার্যের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়। উপাচার্য তাদের জন্য কিছুই করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন।’
তিনি বলেন, বিদেশী শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে এ ধরণের আচরণ করা দুঃখজনক। এ ধরণের কর্মকান্ডের জন্য বিশ্বব্যাপী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ১০১ নং রুমে গিয়ে দেখা যায়, ওই রুমে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন সোমালিয়ান এই চার শিক্ষার্থী। রুমটিতে কোনো সিলিং ফ্যানের ব্যবস্থা নেই। রুমের সামনে ময়লার স্তুপ। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে মশায় পূর্ণ হয়ে উঠে রুমটি। এছাড়া, রুমটি বেসিন, বাথরুম ও টয়লটের সাথে লাগানো। প্রতিনিয়ত দুর্গন্ধ আসছে সেখানে।
সেখানে অপর শিক্ষার্থী শাফি আহমেদ বলেন, ‘আমাদেরকে যে রুমে রাখা হয়েছে সে রুমে থাকা যায় না। আমরা বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এসেছিলাম। পরে অনুরোধ করে আমাদেরকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
তিনি বলেন, ‘আসার পাঁচ মাস পরেও আমাদের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়নি। এমনকি ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। ইতোমধ্যে কিছু করতে পারবেন না জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে যেতে বলেছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।’
এবিষয়ে বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের সহকারী প্রশাসক তাবিউর রহমান বলেন, ‘তাদের ভর্তির বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ক্লিয়ারেন্স না আসায় ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে না।’ আবাসনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এটি একাডেমিক বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল বিষয়টি দেখবে।
এবিষয়ে জানতে উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মোবাইলে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তাঁ বন্ধ পাওয়া যায়।