০২ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৩৫

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেওয়ারিশ কুকুর, আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেওয়ারিশ কুকুর  © টিডিসি

দোকানে চা খেতে বসেছিলেন রিফাত ও তার কয়েকজন বন্ধু। আড্ডার মধ্যেই দোকানের একটু দূরে চার-পাঁচটি কুকুর ঝগড়া করছিল। সেদিকে কারও বিশেষ নজর ছিল না। কারণ, এমন দৃশ্য খুব একটা অচেনা নয়। কিন্তু হঠাৎ একটি কুকুর এসে রিফাতের পায়ে আচমকা কামড়ে দেয়।

এভাবেই কুকুরের আক্রমণের ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) অ্যাগ্রো টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রিফাত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া সময় কুকুরের আক্রমণের শিকার হন তিনি। রিফাত ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি কুকুর আমার পায়ে আচমকা কামড়ে দেয়। ক্ষতস্থান থেকে অনেক রক্ত বের হচ্ছিল। পরে আমার বন্ধুরা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল নিয়ে যায়। ডাক্তার আমাকে রেবিস ভ্যাকসিন নিতে বলেন।’

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সূত্রমতে, গত দুই মাসে (মার্চ-এপ্রিল) তিন শিক্ষাথী ক্যাম্পাসের মধ্যে কুকুরের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে বাড়ছে জলাতঙ্ক ও রেবিস ভাইরাস সংক্রামণের ঝুঁকি।

সরেজমিনে দেখা যায়, কুকুরের উপদ্রব সব থেকে বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া, ওয়াকওয়ে ও কটকা-সংলগ্ন এলাকায়। কুকুরের উপদ্রব বৃদ্ধির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলা ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল মামুন বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়াতে কুকুরের উপদ্রব তুলনামূলক বেশি। শিক্ষার্থীরা এখানে কুকুরকে খেতে দেয়। ফলে কুকুর আকৃষ্ট হচ্ছে ক্যাফেটেরিয়া ও আশপাশের এলাকায় বিচরণ করে ‘

রাতের অন্ধকারে অপরিচিত কোনো শিক্ষার্থীকে দেখলেই কুকুরগুলো তেড়ে যায়। এ কারণে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ভুগছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অপরাজিতা হলের পুষ্পিতা পূজা বলেন, ‘কখনো কখনো টিউশন করিয়ে হলে ফিরতে রাত হয়ে যায়। তখন হাদিস চত্বর থেকে হল পর্যন্ত হেঁটে আসতে ভয় লাগে। মাঝেমধ্যে  কুকুরগুলো  চিনতে না  পেরে তেড়ে আসে। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত  ব্যবস্থা নেওয়ার।’

আরও পড়ুন : এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সপ্তম শ্রেণির সমান

বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধি ও কুকুরকে ভ্যাকসিন না দেওয়ার কারণে বেড়েছে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি। কুকুরের আক্রমণের পর করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী মেডিকেল অফিসার ডা. আরিশমার দেবনাথ বলেন, ‘সব কুকুরের শরীরের রেবিস ভাইরাস থাকে, কিন্তু সব কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক হয় না। জলাতঙ্ক প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রয়োজন হয়। কুকুরে কামড়ালে বা আঁচড় দিলে প্রথমে ক্ষতস্থানটিকে ভালো করে স্যাভলন দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। তারপরও যদি রক্তক্ষরণ হতে থাকে, তাহলে ব্যান্ডেজ করাতে হবে। তারপর নিকটস্থ সরকারি হাসপাতাল থেকে জলাতঙ্ক প্রতিরোধক ভ্যাকসিন নিতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু ভ্যাকসিনেশনের ব্যবস্থা নেই, তাই আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষ রোগীদের খুলনা মেডিকেল কলেজে রেফার করে দেই। প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’

শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের প্রতি অভিযোগ জানিয়ে বলেন, প্রশাস বেওয়ারিশ বাড়ির কুকুর নিধনে বা ভ্যাকসিনেশনে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা।

কুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক ড. নাজমুস সাদাত বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা অবগত আছি। আমরা সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় কুকুর নিধনের উদ্যগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রাণী সংরক্ষণে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি। তাই আমাদের বর্তমান পরিকল্পনায় সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় কুকুরদের ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনার চেষ্টা করব।’