ফেসবুকে হাহা রিঅ্যাক্ট থেকে এত কিছু!
ফেসবুকে হাসির রিঅ্যাক্টের মত তুচ্ছ ঘটনা থেকেই নতুন নতুন ঘটনার সূত্রপাত। গত ৩১ মার্চের পর থেকে চবি ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ, দেশীয় অস্ত্রের মহড়া, প্রশাসনের হল তল্লাশি, গ্রেপ্তার ও অস্ত্রমামলার মত ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ শাখা ছাত্রলীগের একাংশের ধর্মঘটের ঘোষণা ও পুলিশ- ছাত্রলীগের মধ্যকার সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাস। সবমিলিয়ে গত ৩১ মার্চ থেকে এই পর্যন্ত আহতের সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক।
ঘটনার শুরু :
চবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিজয় গ্রুপের তনয় কান্তি দাস নামের এক কর্মি শিউলি (ছদ্মনাম) নামক এক ছাত্রীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে হাসির রিঅ্যাক্ট দিয়েছিল। এ ঘটনায় গত ৩১ মার্চ ঐ ছাত্রীর সহপাঠী সিএফসি গ্রুপের নেতা ক্যাম্পাসে তনয়কে পেয়ে কথা কাটাকাটির পর মারধর করে। এতে করে বিজয় এবং সিএফসি উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এ ঘটনায় তিনজন আহত হয়।
বিবাদমান দুটি পক্ষ সিএফসি ও বিজয় একই নেতার অনুসারী উপ-শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এই ঘটনার জের ধরে ১ এপ্রিল উভয়পক্ষের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দেয়। এতে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে একইদিন রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি আবাসিক হল এএফ রহমান, আলাওল, সোহওয়ার্দী, শাহ আমানত এবং আব্দুর রব হলে প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এতে এএফ রহমান হলের পিছনের পাহাড় থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় দুটি পাইপগান ও ১২৮ রাউন্ড গুলি, বাকী চার হল থেকে রামদাসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। তবে এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।
এদিকে পূর্বের একই ঘটনার জের ধরে শাখা ছাত্রলীগের ঐ দুটি পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে গত ৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের সামনে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন আহত এবং ৬ জনকে আটক করে পুলিশ। পরদিন (৪ তারিখ) পুলিশ বাদী হয়ে আটককৃতদের নামে হাটহাজারী থানায় অস্ত্রমামলা দায়ের করে।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারসহ চার দাবিতে চবি ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা ৭ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয়। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রবিবার সকালে নগরীর বটতলী স্টেশনে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনের হোস পাইপ কেটে দেয় তারা। এছাড়াও এক লোকমাস্টারকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছে রেলওয়ে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে অবস্থানরত সকল বাসের চাকা অকেজো করে দেওয়া হয় ও সকল অনুষদের প্রধান ফটকগুলোতে সুপার গ্লু দিয়ে বন্ধ করে দেয় তারা। পরে সকাল ৯ টার দিকে ধর্মঘট পালনকালে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট গেটে তালা দিয়ে অবস্থান করে। এছাড়াও সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে রিকশা, সিএনজিসহ সকল ধরণের গাড়ি চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে সাড়ে এগারোটার দিকে পুলিশ জলকামান নিয়ে আসলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে। এসময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা স্থানত্যাগ না করলে ১১.৫০ মিনিটের দিকে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। একপর্যায়ে ঘটনা সংঘর্ষে রূপ নেয়।
এদিকে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। অন্যদিকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে অন্তত পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। এছাড়া পথচারী সহ বিশ-পঁচিশজন ছাত্রলীগকর্মী গুলিবিদ্ধ ও লাঠিচার্জে আহত হয়। এসময় ডিবি পুলিশের একটি গাড়ি ভাংচুর করে সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এ ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগের ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় চবি ক্যাম্পাস। এদিন দু'জনকে আটক করে পুলিশ।
ঘটনা পরবর্তী চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী এক জরুরী সভায় সাংবাদিকদের জানান, তাদের নামে যে অস্ত্রমামলা হয়েছে সেটা দেশীয় অস্ত্রের মামলা, আগ্নেয়াস্ত্র নয়। তারা বরং আগ্নেয়াস্ত্র মামলা হয়েছে বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এই মামলায় তাদের ছাত্রত্ব হুমকির মুখে পড়বে না। পুলিশ বাদী হয়ে যে মামলা করেছে সেটা তাদের জন্যই করেছে। তাদের দাবি অবশ্যই যৌক্তিক। তারা আমাদের কাছে এসে আলোচনা করতে পারতো। তারা সেটা করেনি। এ ধরণের পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন কিভাবে নির্বিকার থাকবে। তারা অহিংস আন্দোলন করবে বললেও বিভিন্ন উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড করেছে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা পুলিশ সুপার মশিউদ্দৌলা রেজা বলেন, আমরা তাদের সমস্ত দাবিদাওয়া মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলাম। নেতাদের সাথে কথাও হয়েছিল। কিন্তু তারা আন্দোলন অহিংস রাখেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছাত্রের উস্কানিতে এ ঘটনা ঘটেছে। তারা পুলিশের সাথে হাতাহাতি করে ঝামেলা বাঁধায়। আমাদের কয়েকজন সহকর্মী এতে আহতও হয়েছে।
এ বিষয়ে বিজয় গ্রুপের নেতা ফজলে রাব্বি সুজন বলেন, আমরা আমাদের চার দফা দাবিতে আন্দোলনে সফল। আমাদের মধ্যে গাপটি মেরে থাকা কিছু অনুপ্রবেশকারী জামায়াত শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পুলিশের সাথে হাতাহাতিতে জড়ায়। এ ঘটনার সাথে ছাত্রলীগ জড়িত না। যে বা যারা এর সঙ্গে জড়িত আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।