১ বছর মেয়াদি কমিটিতে হাবিপ্রবি ছাত্রলীগের ৯ বছর

  © টিডিসি ফটো

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি ) শাখা ছাত্রলীগের এক বছর মেয়াদি কমিটির মেয়াদ ৯ বছর আগে শেষ হলেও বিলুপ্ত করা হয়নি কমিটি। মেয়াদ শেষ করা কমিটির বেশির ভাগ নেতা এই ৯ বছরে হারিয়েছেন ছাত্রত্ব। ক্যাম্পাসে নেই তাদের কোনো কার্যক্রম। এমনকি ক্যাম্পাসে কোনো নেতার উপস্থিতিও চোখে পড়ে না। দু-একজন নেতা একাডেমিক কাজে ক্যাম্পাসে আসলেও খুব বেশি সময় অবস্থান করেন না।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ছাত্রলীগের ৩ নেতার বহিষ্কার প্রত্যাহার এবং তৎকালীন ভিসি প্রফেসর রুহুল আমিনের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ইফতেখারুল ইসলাম রিয়েল এবং অরুণ কান্তি রায় সিটন নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে পাল্টা মানববন্ধনের আয়োজন করে ছাত্রলীগের অপর একটি গ্রুপ। মানববন্ধনের পর থেকে আর কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ফিরেনি তৎকালীন ছাত্রলীগের কমিটি।

সেই থেকে শুরু হয় ছাত্রলীগের বিভক্তি। বর্তমানে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ তিনটি গ্রুপে বিভক্ত। বিগত ৯ বছর ধরে নতুন করে কোন কমিটি না পাওয়ায় ক্ষোভ আর হতাশায় এসব নেতাকর্মীরা। কমিটি না থাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ভেঙ্গে পড়েছে চেইন অব কমান্ড। সিনিয়র-জুনিয়র আনুগত্যবোধেও ফাটল ধরতে শুরু হয়েছে, ফলে আরো বিভক্তির আশঙ্কা বেড়ে চলেছে। সিনিয়রদের অনেকের সরকারী চাকরিতে বয়সের মেয়াদ শেষের দিকে আসায় চাকরির জন্য ছুটাছুটি শুরু করেছেন। বাকিরা তাদের জাতীয় প্রোগ্রাম ছাড়া অন্য কোন প্রোগ্রামে তেমন বেশি চোখে পড়েনা।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন (২০০৬-২০১১) ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেয়। এতে ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্স অনুষদের শিক্ষার্থী ইফতেখারুল ইসলাম রিয়েলকে সভাপতি এবং কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী অরুণ কান্তি রায় সিটনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬ সদস্যের একটি কমিটি দেয়া হয়। কমিটি ঘোষণার ৯-১০ মাস পরে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে কেন্দ্রের অনুমোদন নেয় তারা। তবে এক বছরের কমিটি অতিক্রম করেছে ৯ বছর। এরপর বিগত (২০১৫-১৮) ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনের কাছে কমিটির জন্য পদ প্রত্যাশী নেতারা বায়োডাটা জমা দেয়া এবং নতুন কমিটির জন্য জোর লবিং চালিয়েও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছেন। শেষে তারা হতাশ হয়ে নতুন কমিটির হাল ছেড়ে দিয়েছেন।

অনেকে আক্ষেপ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনে পিছনে এতো সময় শ্রম দিয়েছি যে নিজেকে নিয়ে ভাববার সময় পাইনি। এমনকি কমিটির জন্য সিভি জমা দিয়েছি তবুও কোন কমিটি হয়নি। অনেক দুঃখ লাগে তখন, যখন জানতে পারি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি হলেও আমাদের এখানে অদৃশ্য এক কারণে কমিটিতে স্বাক্ষর হয়েও কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। আমরা শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনছি। কবে এর সমাপ্তি ঘটবে তা আল্লাহই ভালো জানেন।

গত বছরের ৩১ জুলাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। সেখানে মমতাময়ী দেশরত্ন শেখ হাসিনার আস্থাভাজন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এপর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি, তবে শোনা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দিবেন। কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর সবার আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি ঘোষণা এবং নেতৃত্ব পেলে নতুন উদ্যোমে নতুনভাবে কাজ করতে পারবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন তারা।

বিগত কমিটির প্রচার সম্পাদক আতিকুর রহমান রানা জানান, দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটির কার্যক্রম না থাকায় অনেক অনুপ্রবেশকারী ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে মাদক ব্যবসা, নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে নানা অপকর্মে জড়িত হয়ে পড়ছে। সুষ্ঠু ধারার রাজনৈতিক পরিবেশ ফেরানোর জন্য ছাত্রলীগের কমিটি জরুরি বলে মনে করছি। আমরা চাই সৎ যোগ্য ত্যাগী ছাত্রনেতা। যারা অতীতে বিভিন্ন অপশক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন। এমন পরীক্ষিত মেধাবীদের দিয়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতির সংকট কাটবে বলে আশাবাদী।

ছাত্রলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম সজল বলেন, আমাদের এখানে বিগত ৯ বছর ধরে কোন কমিটি না থাকলেও আমরা ক্যাম্পাসকে শিবিরমুক্ত ঘোষণা করেছি। ক্যাম্পাসের যেখানেই আমরা কাউকে শিবির সন্দেহ করেছি, তাকেই ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা আছি ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাধীনতা বিরোধী কোন অপশক্তিকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেয়া হবে না।

ছাত্রনেতা পল্লব হোসেন রাঙ্গা বলেন, দীর্ঘদিন যাবত ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে আমরা বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। নামধারী ছাত্রলীগ অনুপ্রবেশকারীদের জন্য অন্তর্কোন্দল বেড়ে যাচ্ছে এবং অনুপ্রবেশকারীর অনেকে ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়ে ছাত্রলীগের সুনাম নষ্ট করছে। আমরা আশা করব কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার পরপরই যেন মেয়াদোত্তীর্ণ আগের কমিটি বিলুপ্ত করে দ্রুত নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি দেয়া হয়।

হাজী দানেশের কমিটির ব্যাপারে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। এমন কি ক্ষুদে বার্তা দিলেও তার কোন সদুত্তর মিলেনি। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে ফোন দেয়া হলে ব্যস্ত পাওয়া যায়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence