২২ জুন ২০২৫, ১৩:৩৪

ঢাকা কলেজের সামনের ফুটপাত উচ্ছেদ অভিযানে বাগছাস নেতাকর্মীদের ওপর হামলা

ঢাকা কলেজের সামনের ফুটপাত উচ্ছেদ অভিযানের পর  © সংগৃহীত

ঢাকা কলেজের সামনের ফুটপাতে নতুন করে বসানো অবৈধ দোকান উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) ঢাকা কলেজ শাখার নেতাকর্মীরা। শনিবার (২১ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় এ হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

হামলায় আহত ব্যক্তিরা হলেন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের যুগ্ম সদস্য সচিব মুহাম্মদ শামীম, সংগঠক সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাহিন সরকার। এতে মাহিন সরকার গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, দুই মাস পূর্বে কলেজের সৌন্দর্য রক্ষা ও ফুটপাতে ভোগান্তি ছাড়াই চলাচলের উদ্দেশ্যে ঢাকা কলেজের সামনের ফুটপাত দখলমুক্ত করে শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ দুই মাস ধরে দখলমুক্ত থাকা ফুটপাতে ঈদের পরে ঢাকা কলেজের একটি ছাত্রসংগঠনের কতিপয় নেতার ছত্রছায়ায় আবারো ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে দোকান বসানো শুরু হয়। প্রতিদিন দোকানের পরিমাণ বাড়তে থাকলে শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর বিরোধিতা করে মতামত প্রকাশ করতে থাকে। পরবর্তীতে গতকাল বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ঢাকা কলেজ শাখার নেতাকর্মীরা আবারো কলেজের সামনের ফুটপাত দখলমুক্ত করতে যায়। এসময় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী পরিচয় দেওয়া হকার ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) নেতাকর্মীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও একপর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মারধরের শিকার হন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কয়েকজন নেতাকর্মী।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা কলেজ শাখার সংগঠক সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ বলেন, গতকাল বিকালের দিকে ঢাকা কলেজের সামনে ফুটপাত দখল করে দোকান বসানো হলে আমি যখন তাদের প্রশ্ন করি এবং প্রতিবাদ করি। তখন আমি এবং আমার ছোটো ভাই মাহিনের উপর অতর্কিত হামলা পরিচালনা করে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের পূর্বের কমিটিতে থাকা রানা আহমেদ এবং তার সন্ত্রাসী সহযোগী মোহাম্মদ মামুন, ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য আশিকুল ইসলাম, আমানুল্লাহ সরকার, ইমরানসহ ২০ থেকে ২৫ জন সন্ত্রাসী।

হামলার শিকার বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা কলেজ শাখার যুগ্ম সদস্য সচিব মুহাম্মদ শামীম বলেন, কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনের ফুটপাত দখলমুক্ত করেছিল। ঈদের পরে আবারো এক কুচক্রী মহল ফুটপাতে দোকান বসানো শুরু করেছে। আমরা আজ ফুটপাত উচ্ছেদ করতে যাই। ফুটপাতে আমরা দোকান সরিয়ে নিতে বলি তখন ওদের সাথে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়। এসময় ছোট ভাই মাহিন মোবাইলে ভিডিও করতে গেলে রানা, ইমরান, মামুন, আশিক ও ২৩-২৪ এর কতিপয় শিক্ষার্থী ও নাম না জানা আরও অনেকে আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী হামলা করে। এতে ছোটভাই মাহিন গুরুতর আহত হয়, ফাহাদ কে চারদিকে থেকে ঘিরে হামলা করেছে তারা।

মারধরের অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সহ গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক রানা আহম্মেদ বলেন, আমরা ১২ জনের মত সাধারণ শিক্ষার্থী যারা ক্যাম্পাসে নিজেরা ব্যবসা করি।  আমরা দোকান বসিয়েছিলাম। যে যার মত করে ছিল। হঠাৎ ফাহাদ এসে সবাইকে হুমকি দেয়।  কিছুক্ষণ পরে শামীম এবং তার কিছু ছোট ভাই আসে। তারা এসে শুরু থেকেই দোকানের মালামাল ভাঙচুর করে ফেলে দিচ্ছিল। তখন আমরা বলি তোমরা দোকানের মালামাল নষ্ট করো না। এমনিতে কথা বলো কি সমস্যা। ওরা কথা শুনছে না মালামাল ফেলে দিচ্ছিল। তখন সাইডে ডেকে নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম। এরপর তারা বলে এখানে দোকান বসতে পারবে না। আমি বলি তুমি কোন অধিকার বলে এটা করতেছো? ওরা তখন বলেছে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী। 

ফাহাদ আমাকে সাইডে নিয়ে নেগোসিয়েশনের কথা বলে টাকা দাবি করে তা আমি না করে দেই। বলেছি প্রশাসন যদি অনুমতি না দেয় তাহলে তারা উঠে যাবে। সে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তু ওরা বাগছাসের রাজনীতি করে। একপক্ষ আরেক পক্ষকে ফাঁসানোর জন্য এমন করতেছে। যে ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে তাতে তো আমি মারামারি ঠেকানোর চেষ্টা করেছি। এরপর আমি যখন সাইকেল নিয়ে সাউথ হলের গেটে আসি তখন সজীব, রয়েল, ফাহাদ সহ  ১০-১৫ জন মিলে আমাকে মারধর করে। এক পক্ষ শুধু আমাকে দোষারোপ করছে এখানে আমার কোন দোষ নেই । আমি কোন মারধরে জড়িত ছিলাম না  বরং তারা আমাকে সাউথ গেটে মারধর করে বলেন তিনি।

মারধরের অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ইয়াস্তি আল মামুন বলেন, যখন বাকবিতণ্ডা হচ্ছিল তখন আমি ওখানে গিয়েছিলাম। আপনি সিসিটিভি দেখলে বুঝতে পারবেন আমি ওদের দু’পক্ষকেই থামানোর চেষ্টা করেছি। আমার কোন দোকান ওখানে নেই। ঢাকা কলেজের গেট বাদে আশেপাশে বসানোর জন্য বলেও নাই আবার মানাও করেনি এটা রানা ভাই বলেছিল। আমার বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধীরা অপপ্রচার চালাচ্ছে। অথচ আমি ওখানে পরে উপস্থিত হই।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াসকে  মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ফুটপাত দখলমুক্ত করতে সংঘর্ষ ও হামলার বিষয়ে নিউমার্কেট থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মাহফুজুর রহমান বলেন,আমরা ফুটপাত পরিষ্কার করি কিছুক্ষণ পর তারা আবার এসে বসে। এ নিয়ে যে কি পরিমাণ যন্ত্রণায় আছি। এটা আমাদের জন্য এখন বিষ ফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ মনে করে এটা আমরা উঠাচ্ছি না।  কিন্তু এখানে আমাদের কোনও স্বার্থ নেই। এটা উঠিয়ে দিলে এলাকাবাসীর জন্য ভালো। এখানে যাদের মার্কেটের ভিতর দোকান আছে তাদের ফুটপাতেও দোকান আছে এ কারেন্ট কোথা থেকে আসে। অনেক কিছু জড়িত এটার সাথে। ঢাকা কলেজ থেকে ফুটপাত পরিষ্কার  রাখার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা মনে করি কলেজ প্রশাসন চিঠি না দিলেও এটা আমাদের দায়িত্ব। প্রতিনিয়ত আমরা এ নিয়ে কাজ করতেছি। আমাদের ফোর্স ডিএমপি থেকে নিয়ে এসো ডিউটি করাচ্ছি কিন্তু তারা জরিমানা দিও কালকে বসবে। আমরা এটার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবো।