চাকসু নির্বাচন ঘিরে ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়া
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের পর এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের হাওয়া বইছে। গত ২১ মার্চ চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রভোস্ট কমিটি ও প্রক্টরিয়াল বডির সভায় চাকসুর ৫ সদস্য বিশিষ্ট নীতিমালা পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সফিউল আলমকে প্রধান এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার (নির্বাচন ও বিধিবিধান) মোহাম্মদ ইউসুফকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব প্রদান এবং আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আবু নোমান, লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আমীর মুহাম্মদ নাসরুল্লাহ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক লিটন মিত্রকে কমিটির সদস্য করা হয়।
মূলত ২৯ বছরের পুরনো নীতিমালা আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান চবি উপাচার্য।
এদিকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে ছাত্র সংগঠনগুলোর মাঝে যেমন উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে, তেমনি ভিন্ন প্রতিক্রিয়াও দেখে যাচ্ছে। মূলত ডাকসু নির্বাচনের অনিয়ম-অভিযোগই এ প্রতিক্রিয়ার মূল কারণ। অপরদিকে কেন্দ্র মনোনীত কোনো কমিটি না থাকায় ক্ষমতাসীন দল ছাত্রলীগের এই নির্বাচনে বড় দুশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিভক্তি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের এমনটাই জানিয়েছেন।
চবি ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সংগঠনই ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায়। আমরাও চাই। কিন্তু নির্বাচনের পূর্বে সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অন্যাথায় চাকসুতেও ডাকসুর মতো ভোট কারচুপি এবং অনিয়ম হবে। ডাকসুতে ছাত্রদলের ভরাডুবির ধারাবাহিকতা চাকসুতেও থাকবে কিনা? এমন প্রশ্নে বলেন, ডাকসুতে ভোট কারচুপির বিষয়ে সকলে অবগত। এ ধরনের নির্বাচন হলে সেটাকে কেউ ভরাডুবি বলতে পারবে না। লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে নির্বাচন করলেই বুঝা যাবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কাদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করবে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তাহলে ভালো ফলাফল আশা করা যায়।
চবি ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির উপ গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল টিপু বলেন, চাকসু নির্বাচনের বিষয়ে প্রশাসনের অগ্রগতিকে স্বাগত জানাই আমরা। কিন্তু ছাত্রলীগের বিভক্তি এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনের আগে কেন্দ্র থেকে কমিটি না দেয়া হলে এই নির্বাচন অসম্ভব। কারণ, প্রতিটি পক্ষ নিজেদের প্রতিনিধি দিতে চাইবে। কেউ কাওকে তোয়াক্কা করবে না। তাই চাকসু নির্বাচনের চেয়ে ছাত্রলীগের কমিটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন তিনি।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ধীষণ প্রদিপ চাকমা বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন এখন সময়ের দাবি। কিন্তু ডাকসু নির্বাচনের মত প্রহসনের নির্বাচন কারো কাম্য নয়। আগে অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করে নির্বাচন দিতে হবে। ডাকসু নির্বাচনের মত পরিবেশ যেন চাকসুতে না হয় এটাই চবি প্রশাসনের বড় চ্যালেঞ্জ।
চবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি আবিদ খন্দকার বলেন, চাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকা মুখ্য। কারণ, চবির পরিবেশ এতোটাই খারাপ যে, এখানে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাড়া কেউ কর্মসূচি পালন করতে পারে না। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে চাকসু নির্বাচন ডাকসুর চেয়েও অস্থিতিশীল হতে পারে। আমাদের বিশ্বাস প্রশাসন সেই পরিবেশ নিশ্চিত করেই চাকসু নির্বাচন দিবে। ডাকসুর মতো নয় বরং চবি প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবেন বলেও মনে করেন তিনি।
চাকসু নির্বাচনের আগে শিবির নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে গত ২৫ মার্চ উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে চবি ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ। এর আগে ছাত্র ইউনিয়নও শিবির নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছিল এক সংবাদ সম্মেলনে।
এছাড়া একই দাবিতে ২৫ মার্চ শাখা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক গ্রুপ ভার্সিটি এক্সপ্রেস, বাংলার মুখ, একাকার ও রেড সিগন্যাল মানববন্ধন করে। এদিকে একইদিন ছাত্রলীগের অন্য দুটি গ্রুপ সিক্সটি নাইন ও কনকর্ড নয়টি দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করে। দাবিগুলোর মধ্যে দুটি ছিলো- ডাকসুর ন্যায় চাকসুর নীতিমালা যুগোপযোগী করা এবং নির্বাচনের নীতিমালা তৈরির আগে ক্যাম্পাসে শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।
এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে চাকসু নির্বাচনের দাবিতে ১৮ দিনের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন চবি পরিষদ। এতে ছিলো ক্লাস ক্যাম্পেইন, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদী কবিতা পাঠের আসর এবং গণস্বাক্ষরসহ উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান।
সবমিলিয়ে চাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান। চাকসু নির্বাচন হচ্ছে, এমন ভাবনা থেকেই নির্বাচনের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ছাত্র সংগঠনগুলো। পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও দীর্ঘদিনের অদেখা চাকসু নির্বাচনকে ঘিরে উচ্ছ্বাস আর কৌতূহলের যেন কমতি নেই।