কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভায় বিমোহিত তিতুমীর কলেজ
রাজধানীর অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি তিতুমীর কলেজ শুধু একাডেমিক মানেই নয়, প্রকৃতির রূপেও অনন্য। প্রায় ১১ একরজুড়ে বিস্তৃত এ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে শোভাময় কৃষ্ণচূড়ার রাজত্ব। গ্রীষ্মের রোদ্দুরে যখন চারপাশ শুকিয়ে আসে, তখনই লাল-কমলা ফুলে রঙিন হয়ে ওঠে কলেজ প্রাঙ্গণ—মনে হয়, যেন কৃষ্ণচূড়া নিজেই হয়ে উঠেছে এই শিক্ষাঙ্গনের প্রাণ।
মে মাসের সমাপ্তি আর জুনের শুরু, একরাশ প্রশান্তি আর বৃষ্টির সাথে আগমন কৃষ্ণচূড়ার। এই ফুল যেন নিজের রঙে রাঙিয়ে রেখেছে পুরো তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাস। কখনো তা ব্যবহৃত হচ্ছে প্রিয়জনের মন রাঙানোর ক্ষেত্রে কখনো কোনো নারী শিক্ষার্থীকে দেখা যাচ্ছে কৃষ্ণচূড়া খোঁপাতে গুঁজতে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য।
কৃষ্ণচূড়ার রাঙ্গা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় কৃষ্ণচূড়ার তাৎপর্য। স্মরণ করিয়ে দেয় গরম এসেছে। কৃষ্ণচূড়া গ্রীষ্মের অতি পরিচিত ফুল। গ্রীষ্ম এলেই যেন প্রকৃতির ভালোবাসার কথা জানান দিতে লাল হয়ে হেঁসে ওঠে কৃষ্ণচূড়া। বাঙালির কবিতা, সাহিত্য, গান ও বিভিন্ন উপমায় কৃষ্ণচূড়া ফুলের কথা নানা ভঙ্গিমায় এসেছে।
পলাশ-শিমুল যদি হয় বসন্তের প্রতীক, কদম যদি হয় বর্ষার, তবে কৃষ্ণচূড়া নিশ্চয়ই গ্রীষ্মের প্রতীক।গ্রীষ্মের ঘাম ঝরা দুপুরে কৃষ্ণচূড়া ছায়া যেন প্রশান্তি এনে দেয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মনে। তাপদাহে ওষ্ঠাগত শিক্ষার্থীরা পুলকিত নয়নে, এক অবাক বিস্ময়ে উপভোগ করে থাকে এ সৌন্দর্য। তবে কৃষ্ণচূড়া গাছের আরেক নাম যে গুলমোহর তা কম লোকই জানে।
কিন্তু কৃষ্ণচূড়াকে চেনেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এখন কৃষ্ণচূড়ার সময়, ফুল ফুটে আছে গাছে গাছে লালে লাল হয়ে। এই লালের সমারোহ কৃষ্ণচূড়ারই মহিমা। এ কৃষ্ণচূড়াকে সাধারণত আমরা লাল রঙেই দেখতে পায়। তবে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া তিনটি রঙের হয়। লাল, হলুদ ও কমলা। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। যেমন-দক্ষিণ ফ্লোরিডায় জুনে, ক্যারাবিয়ানে মে থেকে সেপ্টেম্বরে, ভারতে এপ্রিল থেকে জুনে ও অস্ট্রেলিয়ায় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিতে।
ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী বিজয় দাস বলেন, গ্রীষ্মের চিরায়ত রুক্ষতা, জীর্ণতাকে পাশ কাটিয়ে টকটকে লাল আভায় প্রকৃতিতে রাঙিয়ে তুলে কৃষ্ণচূড়া। ব্যস্তময় এই মানবজীবনের ক্লান্তির রেশটুকু যেন মুহূর্তেই অদৃশ্য হয়ে যায় ধরিত্রীর স্নিগ্ধ-সৌন্দর্য রূপকে বাড়িয়ে দেয়া ফুলের সান্নিধ্যে।
তিনি আরো বলেন, ক্যাম্পাসের বেলায়েত চত্বরের পাশ দিয়ে বিজ্ঞান ভবনের দিকে হেঁটে যাওয়া সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যেন ক্ষণিকের জন্য স্নিগ্ধ স্বর্গসুখ অনুভব করে কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষের ছায়ায়। সেই কৃষ্ণচূড়া নিয়ে কবি আল মাহমুদ লিখেছেন হাজার যুগের সূর্যতাপে জ্বলবে, এমন লাল যে, সেই লোহিতেই লাল হয়েছে কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে।
মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী দুর্জয় কুমার ঘোষ বলেন, কলেজের আঙিনায় কৃষ্ণচূড়ার লাল ছায়া যেন এর প্রতিচ্ছবি উজ্জ্বল, রঙিন ও স্বপ্নময়। কৃষ্ণচূড়ার ডালে যখন বাতাস লাগে, মনে হয় কলেজ জীবনের প্রতিটি স্মৃতি দুলে ওঠে হৃদয়ে। কৃষ্ণচূড়ার ফুল যেমন গ্রীষ্মের সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনি কলেজ জীবনের বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার প্রতীক হয়ে থাকে।