চলে গেছেন কুবি শিক্ষার্থী তিন্নি, রেখে গেছেন মেধার এক অনন্য দৃষ্টান্ত
১৪ এপ্রিলের রাতটি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক নিঃশব্দ বিষাদের রাত ছিল। এক অসীম শূন্যতা যেন গ্রাস করেছিল পুরো ক্যাম্পাসকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী তিন্নি আক্তার সেদিন ঢাকার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসজনিত জটিলতা নিয়ে লড়াই করে যাওয়া এই মেয়েটি হার মানেন দেহের যন্ত্রণা আর দুর্বলতার কাছে—তবে নয় অধ্যবসায়ের কাছে।
মৃত্যুর কয়েকদিন পর প্রকাশিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফলাফল। প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারে তিন্নি পেয়েছেন ৩.৫৬, আর প্রথম সেমিস্টারে ছিল ৩.৬৮। এই দুটি সংখ্যাই যেন হয়ে উঠেছে তার সাহস, সংগ্রাম আর অধ্যবসায়ের প্রতীক—এক মেয়ের যিনি শারীরিকভাবে দুর্বল হলেও মানসিকভাবে ছিলেন এক দুর্বার যোদ্ধা।
তিন্নির শৈশব কেটেছে নরসিংদির এক ছোট্ট গ্রামে। সাদামাটা জীবন, কিন্তু মন ছিল উজ্জ্বল। পরিবারের ভাষায়—“তিন্নি ছিল আলাদা, শান্ত, দায়িত্বশীল, মায়াবী।” সেই গ্রামের মানুষ আজও শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় উচ্চারণ করেন তার নাম। তার হাসি ছিল রোদের মতো উজ্জ্বল, স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়ার।
বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন্নি ছিলেন সহপাঠীদের প্রেরণা। নম্র, নিরহংকারী, সহযোগিতাপরায়ণ—এই শব্দগুলোই তাকে তুলে ধরতে যথেষ্ট নয়। ক্লাসনোট, সহানুভূতির কথা, কিংবা এক কাপ চায়ের মাঝে লুকানো ভালোবাসা—সবকিছুতেই ছিলেন নিঃস্বার্থ। শিক্ষক ও সহপাঠীদের কাছে তিনি ছিলেন এক আশার প্রতীক।
তিন্নির হঠাৎ চলে যাওয়া যেন আইন বিভাগের আকাশে একটি তারা নিভে যাওয়ার মতো। লাইব্রেরির করিডোর, ক্লাসের বেঞ্চ, বারান্দা কিংবা জ্ঞানের আসর—সেখানে আজও তার উপস্থিতি অনুভব করেন সবাই। নিঃশব্দে হেঁটে যাওয়া সেই মেয়েটি যেন বাতাসে রেখে গেছেন অদৃশ্য এক ভালোবাসার ছায়া।
তার স্বপ্ন ছিল বিচারক হয়ে সমাজে ন্যায়ের পতাকা ওড়ানোর। হয়তো সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি, কিন্তু জীবনকে যেভাবে তিনি ভালোবেসেছেন, জ্ঞানকে যেভাবে আঁকড়ে ধরেছিলেন—তা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, একটি সৎ আর সংগ্রামী জীবনচর্চা কখনো বৃথা যায় না। বরং থেকে যায় অন্যদের প্রেরণায়, অন্যদের স্বপ্নে।
আইন বিভাগের ৮ম আবর্তনের এক সহপাঠী বলেন—“তিন্নি আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার মুখের আলো, মেধার দীপ্তি, আর স্বপ্ন দেখার সাহস আমাদের পথ দেখায়। হয়তো ভবিষ্যতের অনেক ‘তিন্নি’ সেই আলোর পথেই হাঁটবে।”