২৬ মে ২০২৫, ১৭:০৪

তিতুমীর কলেজে সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রদলের হামলা, জিহ্বা তুলে ফেলার হুমকি

আহত আলভী  © টিডিসি ফটো

সরকারি তিতুমীর কলেজে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং সেই ঘটনার ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে কলেজ শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এসময় কয়েকজন সাংবাদিককে মারধর করা হয়, মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভিডিও মুছে ফেলা হয় এবং এক নারী সাংবাদিককে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়।

সোমবার (২৬ মে) সকালে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এতে গুরুতর আহত হন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের নিজস্ব প্রতিবেদক ও তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক আমান উল্লাহ আলভী। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত অন্য সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন সারাবাংলা ডটনেটের সাত কলেজ প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ মজুমদার রাব্বি, ডেইলি ক্যাম্পাসের কলেজ প্রতিনিধি আল-আমিন মৃধা, এশিয়ান টিভির কলেজ প্রতিনিধি মাহমুদা আক্তার, এবং রাইজিংবিডির প্রতিনিধি উম্মে হাফসা।

জানা গেছে, মেধার ভিত্তিতে কলেজের হোস্টেলে সিট বরাদ্দের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বাকবিতণ্ডা হয়, যা দ্রুতই সহিংসতায় রূপ নেয়। এরপর সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলের ছবি তুলতে গেলে তাদের ওপরও চড়াও হয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

আহত সাংবাদিক আমান উল্লাহ আলভী বলেন, “নায়েক নূর নামে একজন আন্দোলনকারীকে ছাত্রদলের একটি পক্ষ রিকশায় তুলে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গেলে হঠাৎ আমার ওপর হামলা চালানো হয়। আমাকে বেধড়ক মারধর করে, মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভিডিও মুছে ফেলে। আমার সঙ্গে থাকা মাহমুদা আক্তার ও উম্মে হাফসা-র মোবাইলও ছিনিয়ে নিয়ে ভিডিও ডিলিট করা হয় এবং তাদের হেনস্তা করা হয়।”

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আলী আহমেদ বলেন, “গতকাল হলে সিট বরাদ্দের তালিকা প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। আমরা অধ্যক্ষের কাছে জানতে গেলে তাকে না পেয়ে তার কক্ষের সামনে অবস্থান নিই। এসময় কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব সেলিম রেজাসহ কয়েকজন নেতা আমাদের হুমকি দেয়। আজ ফের আন্দোলন করতে গেলে ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমাম হোসেন ও সদস্য সচিবের নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়।”

তিনি আরও বলেন, “অধ্যক্ষ আমাদের বিশৃঙ্খলাকারী বলে ছাত্রদলের হাতে তুলে দিয়েছেন। আগে হল ছিল ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে, এখন ছাত্রদলের দখলে। অধ্যক্ষই আজ আমাদের ওপর হামলা করিয়েছেন।”

সাংবাদিকদের দাবি, হামলাকারীরা শুধু ভিডিও ডিলিট করেই থেমে থাকেনি, বরং হুমকি দিয়েছে—“জিহ্বা ছিড়ে ফেলবে”।

হামলায় জড়িত ছাত্রদল নেতাদের মধ্যে আছেন—যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফ মোল্লা, রিমু, খাজা মাইনুদ্দিন, হারুনুর রশীদ, সোহাগ, মেহেদী চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, সদস্য রাশেদুজ্জামান হৃদয়, আল আমিন, বাইজিদ হাসান সাকিব, নুর উদ্দিন জিসান, এবং আক্কাসুর রহমান আঁখি হলের সভাপতি তোহা।

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ ড. ছদরউদ্দিন আহমেদ বলেন, “ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমাম হোসেন বলেন, “সাংবাদিকদের ওপর হামলা দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে, তাদের বহিষ্কারের বার্তাও দেওয়া হয়েছে। দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”