এবার রাজনের বিরুদ্ধেই র্যাগ দেওয়ার অভিযোগ!
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে বাম কান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মো. রাজন মিয়ার বিরুদ্ধেই এবার র্যাগিংয়ের অভিযোগ তুলেছেন তার জুনিয়ররা। শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ৪৭তম ব্যাচের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ ও একই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. মাহবুবার রহমান (রিমন) ওই অভিযোগ তুলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি রাজনের বিরুদ্ধে র্যাগিং-এর কয়েকটি অভিযোগ তুলে ধরেন। বিস্তারিত বর্ণনার স্বার্থে তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘‘আমি হয়তোবা আপনার উপর এই অভিযোগ করতাম না রাজন ভাই; যদি না আপনি আপনার পোস্টে লিখতেন সিনিয়র আমিও হয়েছিলাম, কই আমি তো কারো গায়ে হাত তুলিনি। এতো বড় একটা প্লাটফর্মে এসে আপনি কতো বড় একটা মিথ্যা বললেন। আপনার বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে দেখেন ভাই। কতো জুনিয়য়ের গায়ে হাত তুলেছেন মনে পড়বে। সেদিন ছিল সোহেল (পরিসংখ্যান- ৪৬) ভাইয়ের জন্মদিন। সোহেল ভাই আমার দূর সম্পর্কের কাজিন। ভাইকে আমি উইশ করি। রাতে ভাই তার এক জুনিয়র আর আমাকে ডাক দেন সবুজ ভাইয়ের দোকানের (গণরুমের সামনের দোকান) সামনে। আমরা সবাই মিলে যাই; ভাই মিষ্টি.. কেক খাওয়ান। সব শেষে জিজ্ঞাসা করেন ‘আর কিছু খাবি?’ আমি আরো একটা কেক তুলে নিয়ে গণরুমে আসি। আর সবাই মিলে কেকটা কাড়াকাড়ি করে খাই।
এর ২/৩ মিনিট পর রাজন ভাই গণরুমে ঢুকেন। ঢুকেই সবাইকে লাইন ধরে দাড়া করান, আর বলেন একটু আগে যারা সবুজ ভাইয়ে দোকানে গেছিলি সামনে আয়। আমরা যে ৫ জন গিয়েছিলাম, সামনে এসে দাড়াই। তখন রাজন ভাই কিছু অশ্লীল গালি দেন। বলতে থাকেন কত্ত বড় কলিজা হইসে, আমার সামনে সবুজ ভাই এর দোকানে খায়। আমাকে দেখে না। দাঁত কেলাতে কেলাতে খায়। বলে থাপ্পড় দেয়া শুরু করেন। আমাকে, সাদ্দাম, সজীব, প্রিতম, তরিকুলকে থাপ্পড় দেন। গণরুমে আপনি আসতেন রাত ৩টার সময়, নেশা করে। এসেই বাজে ভাবে গালিগালাজ করতেন। মনে আছে ভাই?
আপনি আরো একদিন গণরুমে এসে আমাকে আর আমার ডিপার্টমেন্টের বন্ধু সম্রাটকে মেরেছিলেন। সেদিন মনে হয় আপনি নেশাগ্রস্থ ছিলেন। কোনো কারণ ছাড়াই মেরেছিলেন। আপনার এই সব ঘটনার স্বাক্ষী পুরো গণরুম, এমএইচ -৪৭। আপনি আমার আর আমার ওই বন্ধুদের সাথে যা করেছেন; তার বিচার চাই। খোঁজ নিয়ে দেখেন, আমি ক্যাম্পাসের কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত নই।’’
এ ব্যাপারে রাজনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘কোন জুনিয়র যদি প্রমাণ দেখাতে পারে যে আমি কারো গায়ে আঘাত করেছি; তাহলে যে শাস্তি আমাকে দেওয়া হবে আমি তা মেনে নেব। বাস্তবতা হচ্ছে, আমার বিরুদ্ধে এখন এগুলো অপপ্রচার ছড়িয়ে আমার মূল অভিযোগের প্রাসঙ্গিকতা নষ্ট করা হচ্ছে। তাছাড়া আমাকে আঘাতকারীরা সবাই ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সাথে যুক্ত।’
এদিকে রাজনকে আঘাতকারী অভিযুক্ত সেই সিনিয়রদের একজন ১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের রাকিব হাসান সুমন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘গতকাল পরীক্ষার কারণে সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম, এরপর সন্ধ্যায় রাজনের ফেসবুক পোস্ট দেখে আমি পুরো অবাক হয়ে যাই। আমি এই ব্যাপারে কোন কিছুই জানিনা; অযথাই আমাকে দোষারোপ করা হচ্ছে, এমনকি যতদূর জানি অন্তুও এই ঘটনার সাথে জড়িত নয়।
এদিকে ৪৬তম আবর্তনের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা গণরুমে উক্ত ঘটনা ছাড়াও শারীরিক ও মানুষিক অত্যাচারের বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছেন। সিনিয়রদের মধ্যে যাদের গণরুমে যাওয়ার অধিকার রয়েছে এদের সকলেই হলের ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের মদদপুষ্ট হওয়ায় নির্যাতিত কেউ কেউ ওই সকল রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাদের ভয়ে ঘটনাগুলো চেপে গেছেন। আবার কেউ মনের ক্ষোভ চেপে না রাখতে পেরে প্রকাশ করে দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উক্ত ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি খুব কাছে থেকে ঘটনা গুলো প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু সিনিয়রদের ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পরিনি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মীর মোশাররফ হোসেন হল ইউনিটের সিনিয়র নেতা ও জাবি শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘দুই বছর আগের ঘটনা এতদিন পরে কেন অভিযোগ তা বুঝতে পারছিনা। আমি অন্তু ও রাকিবকে ব্যক্তিগতভাবে জানি তারা ছাত্রলীগের রাজনীতি করে। কিন্তু তারা এই ঘটনার সাথে জড়িত না। যদি প্রমাণ দিতে পারে; তবে তাদের ব্যাপারে ছাত্রলীগ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’ এ সময় তিনি রাজনের বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগ তোলেন এবং এটাকেও তার হল ছেড়ে দেয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে এখনো কোন পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে রাজনের সাথে আজকে কথা হয়েছে। সে আজ অভিযোগপত্র দাখিল করতে চেয়েছিল; কিন্তু আমি ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় তা গ্রহণ করতে পারেনি। অন্যদিকে রাজনের র্যাগ দেওয়ার বিষয়ে আমি কোন লিখিত এমনকি মৌখিক অভিযোগও পাইনি। কাল ক্যাম্পাসে এসে বিস্তারিত জেনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গত বুধবার সন্ধ্যায় র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে বাম কান ক্ষতিগ্রস্ত মো. রাজন মিঞার ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে গণরুমে র্যাগিংয়ের নামে নবীন শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বিষয়টি ফের সামনে আসে।